News update
  • Dhaka seeks global pressure on Myanmar for lasting peace     |     
  • BSEC Chairman’s resignation urged to stabilise stock market     |     
  • Rain, thundershowers likely over 8 divisions: BMD     |     
  • First freight train leaves Mongla carrying molasses     |     
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     

ভারতের ভোটে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা, পলাশীর যুদ্ধের কথা কেন উঠছে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2024-04-06, 6:20pm

odfgdoig-a09da706552fd84632d8ce616a0b80171712406059.jpg

বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় (বাঁয়ে), তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মহুয়া মৈত্র (ডাইনে)



ভারতের নির্বাচনে কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে উঠে এসেছে সিরাজ-উদ-দৌলা আর পলাশীর যুদ্ধের প্রসঙ্গ। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে পলাশীর যুদ্ধের আগে যে ষড়যন্ত্রের কথা একাধিক ইতিহাসবিদ লিখে গেছেন, তাতে কারা জড়িত ছিলেন, এখন সেই প্রশ্ন তুলে নতুন করে বিতর্ক বাঁধিয়েছেন এক প্রার্থী।

তার নাম অমৃতা রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে।

মিজ রায় সবে মাত্র রাজনীতির ময়দানে এসেছেন। দলীয় পরিচিতি ছাড়াও তার আরেকটি পরিচিতি হল তিনি কৃষ্ণনগরের সাবেক রাজপরিবারের বধূ, সেই অর্থে অনেকেই তাকে ‘রানি মা’ বলে সম্বোধন করে থাকেন।

ওই সাবেক রাজপরিবারের সব থেকে প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র রায়। পলাশীর যুদ্ধের আগে থেকেই সিরাজকে বাংলার মসনদ থেকে সরানোর যে ষড়যন্ত্র করেছিলেন মীর জাফর, জগৎ শেঠরা, তাতে কৃষ্ণচন্দ্র রায় কতটা জড়িত ছিলেন, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে দ্বিমত আছে।

তবে ভোটের ময়দানে নেমেই মিজ অমৃতা রায় বলেছেন, সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে ব্রিটিশদের সহায়তা করে কৃষ্ণচন্দ্র রায় আসলে ‘সনাতন ধর্ম’কে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।

তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নদীয়ার এক জনসভায় প্রশ্ন তুলেছেন মিজ রায়কে ‘রানি মা’ বা ‘রাজমাতা’ এই সম্বোধন নিয়ে।

“কোথাকার রাজমাতা” এই প্রশ্ন তুলে মমতা ব্যানার্জী বলেছেন যে এ দেশে এখন আর কেউ রাজা নেই, সবাই প্রজা।

কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন হিন্দু সমাজপতি

যখন আলিবর্দি খাঁ মসনদে আসীন, সেই সময়ে কৃষ্ণচন্দ্র রায় মাত্র ১৮ বছর বয়সে, ১৭২৮ সালে নদীয়ার রাজা হন। নামে রাজা হলেও মূলত তিনি ছিলেন নবাবের অধীনে এক জমিদার। তার অধিকারে ছিল ৮৪টি পরগণা।

শিবনাথ শাস্ত্রী তার বই ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’-এ লিখেছেন, “তাঁহার পিতা কোনও অনির্দেশ্য কারণে তাঁহাকে উত্তরাধিকারিত্ব বঞ্চিত করিয়া স্বীয় ভ্রাতা রাম গোপালকে রাজ্যের উত্তরাধিকারী করিয়া যান। তদনুসারে রামগোপাল নবাব সন্নিধানে রাজ্যের অধিকার প্রার্থনা করেন। কৃষ্ণচন্দ্র নাকি এক অপূর্ব্ব চাতুরী খেলিয়া স্বীয় পিতৃব্যকে বিষয়ে বঞ্চিত করিয়াছিলেন।“

শিবনাথ শাস্ত্রীর বইটিকে তৎকালীন বাঙালী সমাজ জীবনের এক আকর গ্রন্থ বলে মনে করা হয়।

“কৃষ্ণচন্দ্র প্রভূত শক্তিশালী হইয়াও ধর্ম্ম বা সমাজ সংস্কারের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। এমন কি যে প্রাচীন কুরীতি-জালে দেশ আবদ্ধ ছিল, সে জানকে তিনি আরও দৃঢ় করিবার প্রয়াস পাইয়াছিলেন।“

বিভিন্ন ইতিহাসবিদই লিখে গেছেন যে তাকে সে সময়ের গোঁড়া হিন্দু সমাজের প্রধান হিসাবেই মনে করা হত।

আইসিএস অফিসার জেএইচই গ্যারেট সঙ্কলিত ‘বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার্স – নদীয়া’ বইতে কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পরিবারকে ‘বাংলার সবথেকে গোঁড়া পরিবার’ বলে বর্ণনা করেছেন।

আবার ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার তার বই ‘আ স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অফ বেঙ্গল’-এর দ্বিতীয় খণ্ডে পাওয়া লিখেছেন, “তাকে সকলই হিন্দু সমাজের মাথা হিসাবে মেনে নিয়েছিল। জাতপাতের বিষয়ে সব প্রশ্নের তিনিই ছিলেন শেষ কথা।“

বিধবা বিবাহ প্রচলন করতে প্রবল বাধা দিয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। বর্তমানে যেভাবে দুর্গাপুজো হয়, তারও প্রবর্তক বলে কৃষ্ণচন্দ্র রায়কেই মনে করা হয়, আবার নানারকম কুরুচিপূর্ণ প্রমোদের প্রবর্তক বলেও তার একটা অখ্যাতি ছিল বলে লিখেছেন ইতিহাসবিদ রজত কান্ত রায়।

কিন্তু অধ্যাপক রায় এও লিখেছেন, “শান্তিপুর, ভাটপাড়া, কুমারহট্ট এবং নদীয়া এই চারটি পণ্ডিত সমাজের পতিরূপে কৃষ্ণচন্দ্রের বন্দনা করে তাঁর সভা-কবি ভারতচন্দ্র ‘অন্নদামঙ্গলে’ রাজার যে পরিচয় দেন তাতে সেই ধর্মধ্বজ সমাজপতির বহুমুখী প্রভাব অনুভূত হয়।“

সম্রাট বিক্রমাদিত্য এবং সম্রাট আকবরের অনুকরণে তিনি নানা জায়গা থেকে পণ্ডিত, সাহিত্য-কারদের নিজের রাজসভায় নিয়ে এসেছিলেন।

এঁদের মধ্যে যেমন ছিলেন অন্নদামঙ্গল রচয়িতা ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর, তেমনই ছিলেন কালীভক্ত, বহু শ্যামাসঙ্গীত রচয়িতা রামপ্রসাদ সেনও।

আবার এই সভাতেই ছিলেন গোপাল ভাঁড়ও, যার হাস্যকৌতুক এখনও বাংলায় জনপ্রিয়। তবে গোপাল ভাঁড় বলে সত্যিই কেউ ছিলেন কী না, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের সংশয় আছে।

পলাশীর ষড়যন্ত্রে কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকা

‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ বইতে পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন, “এইরূপ জনশ্রুতি যে, রাজা মহেন্দ্র, রাজা রাম নারায়ণ, রাজা রাজবল্লভ, রাজা কৃষ্ণদাস, মীরজাফর প্রভৃতি এই মন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন। তাঁহাদের দ্বারা আহূত হইয়া কৃষ্ণচন্দ্র পরে আসিয়া তাহাতে যোগ দেন; এবং তাঁহারই পরামর্শক্রমে ইংরাজদিগের সাহায্য প্রার্থনা করা স্থিরীকৃত হয়।“

তবে শিবনাথ শাস্ত্রী নিজেই লিখেছেন যে কোনও কোনও ইতিহাস লেখক এই কথার প্রতিবাদ করেছেন। তাদের মতে কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে ওই মন্ত্রণা সভার কোনও যোগ ছিল না।

কিন্তু ‘পলাশীর ষড়যন্ত্র ও সেকালের সমাজ’ বইটির লেখক ও ইতিহাসবিদ রজত কান্ত রায় বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “নিশ্চিতভাবেই নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। পলাশীর ষড়যন্ত্রে তার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণই ছিল। তবে একই সঙ্গে বলতে হয় তিনি খুবই প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন।“

মূল ষড়যন্ত্রী তিনিই?

পলাশীর যুদ্ধের অর্ধশতকেরও বেশি সময় পরে, ১৮০৫ সালে রাজীব লোচন বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণচন্দ্রের একটি জীবনী লেখেন। বইটির নাম মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্য চরিত্রং।

সেই বইতে পলাশীর ষড়যন্ত্র নিয়ে লিখতে গিয়ে রাজীব লোচন বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, “নবাবের সভাসদদের মধ্যে সম-মনোভাবাপন্নদের সঙ্গে একটি গোপন মন্ত্রণা সভায় কৃষ্ণচন্দ্র বলে যে, তার সঙ্গে কলকাতার ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের পরিচয় আছে আর তিনি মনে করেন যে সরকার পরিচালনার ভার তুলে নিতে ব্রিটিশদের আমন্ত্রণ করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।“

অন্য সবাই সম্মত হলে তিনি কলকাতার হিন্দু তীর্থ ক্ষেত্র কালীঘাটে পুজো দিতে যাওয়ার অছিলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি এবং তার বন্ধুরা যে সিরাজের অন্যতম সেনাপতি জাফর আলি খানকেও তাদের দলে টানতে সমর্থ হয়েছেন, সেটাও জানানো হয় কোম্পানির কর্তাদের।

জাফর আলি খানই মীর জাফর।

কৃষ্ণচন্দ্র রায় নাকি ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই আশ্বাসও আদায় করে নিয়েছিলেন যে সিরাজকে পরাজিত করার পরে জাফর আলি খান, ওরফে মীর জাফরকেই মসনদে বসাবেন তারা।

একদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তা আর অন্যদিকে সিরাজ-উদ-দৌলার সভাসদদের মধ্যে ষড়যন্ত্রীদের মধ্যে কৃষ্ণচন্দ্রই যোগাযোগের সেতু হিসাবে কাজ করেছিলেন বলে রাজীব লোচন বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ১৮০৫ সালে।

তবে ইতিহাসবিদ রজত কান্ত রায় এই তত্ত্ব মানতে চান নি।

আবার তিনি এই তত্ত্বেও বিশ্বাস করেন যে সিরাজ-উদ-দৌলার নানা কুকীর্তির যেসব বর্ণনা নানা গ্রন্থে পাওয়া যায়, তার সবই যে সত্য, তা না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।

সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, তার মূল উদ্যোগ কার ছিল এবং সেখানে বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের পূর্বপুরুষ কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকা কতটা ছিল, কোন পর্যায়ে তিনি মীর জাফরদের সঙ্গে হাত, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে একাধিক মত আছে।

তবে কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের বধূ অমৃতা রায় বলছেন, সিরাজ-উদ-দৌলার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই তাকে মসনদ চ্যুত করার জন্যই ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মেলানোর দরকার হয়েছিল, “না হলে সনাতন ধর্মের অস্তিত্ব থাকত না।

মিজ রায় বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ইতিহাস বলছে, সেই সময়ে একদিকে বর্গীদের যেমন উৎপাত ছিল, তেমনই অন্য ধর্মাবলম্বীদের অত্যাচারও ছিল।

“সেই উৎপাত-অত্যাচার থেকে বাঁচতেই পদক্ষেপটা নেওয়া দরকার ছিল। আর শুধু তো মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন না ওই পরিকল্পনায়, জগৎ শেঠ ছিলেন, অন্যান্য রাজা- মহারাজারাও ছিলেন। এতে সবথেকে বড় ফল হয়েছিল যে সমাজটা রক্ষা পেয়েছিল,” বলছিলেন অমৃতা রায়।

তার কথায়, “আজকে যদি সিরাজ-উদ-দৌলা থাকত, আমরা নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারতাম না।“

ইতিহাসবিদ রজত কান্ত রায় অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “ব্রিটিশ আমলের তুলনায় হিন্দুরা মুসলমানি শাসনামলে অনেক বেশি সুরক্ষিত ছিলেন।“

ক্লাইভের কামান

কৃষ্ণনগরের রাজ পরিবারের ইতিহাস গ্রন্থ ‘ক্ষীতিশবংশাবলীচরিত’ উদ্ধৃত করে ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ সমাজ’-এ লেখা হয়েছে, “রাজবাটীতে এ প্রবাদ চলিত আছে, যে পলাশী যুদ্ধের পর ক্লাইব সাহেব কৃষ্ণচন্দ্রকৃত সাহায্যের প্রতিদানস্বরূপ তাঁহাকে পাঁচটি কামান উপহার দিয়াছিলেন। সে পাঁচটি কামান অদ্যাপি কৃষ্ণনগরের রাজবাটীতে বিদ্যমান আছে।“

পলাশীর যুদ্ধের ষড়যন্ত্রে কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের ভূমিকার পুরস্কারস্বরূপ কতগুলি কামান তাকে উপহার দেওয়া হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে তা নিয়েও দ্বিমত আছে।

ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের লেখা ‘আ স্ট্যাটিস্টিকাল অ্যাকাউন্ট অফ বেঙ্গল’-এর দ্বিতীয় খণ্ডে পাওয়া যায় যে “সিরাজ উদ দৌলার সহিংসতা এবং মিথ্যাচার পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয়। নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্র ব্রিটিশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে যে ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটা তার দূরদৃষ্টিরই প্রতিচ্ছবি। তার কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসাবে লর্ড ক্লাইভ তাকে রাজেন্দ্র বাহাদুর খেতাব দিয়েছিলেন। পলাশীতে ব্যবহৃত এক ডজন কামানও তাকে উপহার দেওয়া হয়। রাজবাড়িতে এখনও সেগুলো দেখা যায়।

পলাশীর ষড়যন্ত্রকারীদের সাহায্যে রবার্ট ক্লাইভ সিরাজকে যুদ্ধে পরাজিত করলেন যে বছর, তার ঠিক পরের বছরই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেনা হয়ে গেল প্রায় নয় লক্ষ টাকা।

ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার ‘আ স্ট্যাটিস্টিকাল অ্যাকাউন্ট অফ বেঙ্গল’-এর দ্বিতীয় খণ্ডে লিখছেন, “১৭৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছে নদীয়ার রাজা ‘ডিফল্টার’ হয়ে যাওয়াতে মি. লিউক স্ক্র্যাফটন প্রস্তাব দিলেন যে মহারাজার হয়ে খাজনা আদায়ের জন্য একজন বিশ্বস্ত কাউকে পাঠানো হোক আর তার সব ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে ১০ হাজার টাকা খোরপোশ দেওয়া হোক। সরকারি নথি থেকে দেখা যাচ্ছে ১৭৫৯ সালের ২০শে অগাস্টে নদীয়া পরগনা থেকে খাজনা জমা পড়ার কথা নয় লাখ টাকা।“

এই খাজনা থেকে ৬৪ হাজার ৪৮ টাকা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল সেইসব জমির খাজনা, যা নদীয়াতে কোম্পানির অধীনে ছিল।

বকেয়া খাজনা প্রতি মাসে কিস্তিতে শোধ করার জন্য কোম্পানিকে মুচলেকা দিতে হয়েছিল পলাশীর ষড়যন্ত্রের অন্যতম অংশীদার, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে।

মীরকাসিমের হাতে আটক কৃষ্ণচন্দ্র

নবাব সিরাজ উদ দৌলা নিহত হওয়ার পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মদতে মীর জাফর মসনদে বসলেন ঠিকই, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার পুত্র মীরণকে সেই পদে অভিষিক্ত করে নিজে অবসর নিলেন। মীরণ বজ্রাঘাতে মারা যান ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে। তারপরে মীরজাফরের জামাই মীরকাসিম সেই পদে আসীন হলেন।

পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী লিখছেন, “ইংরাজদিগের সহিত মীরকাসিমের মনোবাদ ঘটে তিনি ইংরাজদিগের রাজধানী হইতে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকিবার আশায় মুঙ্গেরে স্বীয় রাজধানী স্থাপন করেন। ইহার পরে তিনি দেশের মধ্যে যে যে বড় লোককে ইংরাজের বন্ধু মনে করিতেন, বা ইংরাজদিগকে তুলিবার পক্ষে সহায় বলিয়া বিশ্বাস করিতেন, তাহাদিগকে ধরিয়া মুঙ্গেরের দুর্গে বন্দী ও হত্যা করিতে প্রবৃত্ত হন।

“তদনুসারে কৃষ্ণচন্দ্র ও তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র শিবচন্দ্রকে মুঙ্গেরের দুর্গে কিছুদিন বন্দী করিয়া রাখেন। ইংরাজদিগের ভয়ে হঠাৎ মুঙ্গের ছাড়িয়া পলায়ন করা আবশ্যক না হইলে, মীরকাসিম বোধ হয় সপুত্র কৃষ্ণচন্দ্রকেও হত্যা করিতেন। কিন্তু ইংরাজরা আসিয়া পড়াতে পিতাপুত্র সে যাত্রা রক্ষা পাইয়াছিলেন,” লিখেছেন শিবনাথ শাস্ত্রী।

কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের মৃত্যু হয় ১৭৮২ সালে। বিবিসি বাংলা