News update
  • ‘With Science, We Can Feed the World of 9.7 Billion by 2050′     |     
  • WHO warns of severe disruptions to health services for funding cuts     |     
  • ICJ hears Sudan’s case accusing UAE of ‘complicity in genocide’     |     
  • Bombardment, deprivation and displacement continue in Gaza     |     
  • Aged and Alone: The hidden pains in old age homes     |     

ভ্লাদিমির পুতিনঃ রাশিয়াকে আগামী ছয় বছর কোন পথে নিয়ে যাবেন এই ক্ষমতাশালী প্রেসিডেন্ট?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2024-05-07, 10:18am

kashdasidio-2f0b66df06fdc61c136407355c1104401715055484.jpg




ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার সংবিধানে হাত রেখে শপথ নেবেন আরও ছয় বছর মেয়াদে রাশিয়ার প্রেপ্রেসিডেন্ট হিসেবে অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্য। এই শপথ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে রাশিয়ার নেতা হিসেবে পুতিনের শাসনামলের ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আর মাত্র কয়েক মাস আগে।

পুতিন ১৯৯৯ সালের শেষ দিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। এরপর থেকে রাশিয়াকে তিনি একটি শক্তিশালী রাশিয়া হিসেবে রূপ দিয়েছেন - রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করেছেন এবং “ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের” প্রতি ক্রমবর্ধমান ভক্তি প্রচার করেছেন যা সমাজের অনেককে কোনঠাসা করে দিয়েছে।

তার প্রভাব এতটাই প্রবল যে, যখন তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তখন অন্যান্য কর্মকর্তারা কেবল নীরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে ছিলেন। যদিও, ঐ আগ্রাসনের ফলে আন্তর্জাতিক নিন্দা ও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা ছিল, যেমন ছিল সৈন্যদের রক্তের মাধ্যমে রাশিয়াকে চরমমূল্য দেয়ার সম্ভাবনা।

পুতিন এই বিশাল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তার পরবর্তী মেয়াদে কী করবেন, সেটাই দেশ এবং বিদেশে একটি কঠিন প্রশ্ন।

ইউক্রেন যুদ্ধ, যেখানে রাশিয়া ক্রমান্বয়ে হলেও স্থিরভাবেই রণাঙ্গনে আগ্রগতি লাভ করছে, সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাবে এবং তিনি পথ পরিবর্তন করার কোন ইঙ্গিত দিচ্ছেন না।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং “দ্যা কোড অফ পুটিনিজম” এর লেখক ব্রায়েন টেলর বলেন, “ইউক্রেন যুদ্ধ তাঁর বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডর কেন্দ্রবিন্দু এবং আমি এমন কিছু দেখছি না যা থেকে মনে হতে পারে যে এর পরিবর্তন ঘটবে। এবং অন্য সবকিছুকে প্রভাবিত করে এই যুদ্ধ।”

পুতিন ফেব্রুয়ারী মাসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনে মস্কোর লক্ষ্য পূরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন, এবং “আমাদের সার্বভৌমত্ব ও আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায়” যা কিছু করা দরকার তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে পুতিন

তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী “বিশাল যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে” এবং “দৃঢ়তার সঙ্গে এই উদ্যোগ ধরে রেখেছে এবং বেশ কয়েকটি এলাকায় আক্রমণ চালাচ্ছে।”

পুতিন, “নিজেকে বিশাল ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে চান যেখানে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে এর নিজের জায়গায় ফিরিয়ে আনার কথাই ভাবেন,” টেলর বলেন।

এই যুদ্ধ যদি উভয় পক্ষের জন্য সম্পূর্ণ পরাজয়ের না হয়, রাশিয়া যদি ইতিমধ্যে দখলকৃত কিছু অঞ্চল দখল করে রাখে, তবে ইউরোপীয় দেশগুলি আশঙ্কা করছে যে পুতিনকে বাল্টিক দেশগুলোতে বা পোল্যান্ডে আরও সামরিক আক্রমণ করতে উৎসাহিত করতে পারে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন ওয়াল্ট ফরেন পলিসি জার্নালে লিখেছেন, “এটা সম্ভব যে পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিশাল এবং ইউক্রেনে ব্যয়বহুল সাফল্য অনুসরণ করেই তিনি অন্য কোথাও নতুন করে আক্রমণ করার চেষ্টা করবেন।

"তবে এটাও সম্ভব যে তার আকাঙ্ক্ষা যাই থাকুক না কেন, রাশিয়া সম্পূর্ণভাবে যেসব জায়গায় জিতেছে তার বাইরে তা প্রসারিত করবে না – বিপুল খরচ যেখানে করতে হবে এবং তা হবে জুয়া খেলার তুল্য, তো সেই খেলার কোনো প্রয়োজন বা ইচ্ছা নেই।”

তবে অন্যান্যরা বলছেন, এ’ধরণের যৌক্তিক উদ্বেগ নাও থাকতে পারে। কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের কর্মকর্তা মাক্সিমসামোরুকভ বলেন, “পুতিনের খেয়ালখুশি ও বিভ্রান্তিতে পরিচলিত হয়ে মস্কো সম্ভবত আত্মঘাতীমূলক ভুল করতে পারে।”

'মৃত্যু সম্পর্কে সচেতনতা'

ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীতে এক প্রতিবেদনে সামোরুকভ বলেছিলেন যে পুতিনের বয়স তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।

তিনি বলেন, “৭১ বছর বয়সে... তার নিজের মৃত্যু সম্পর্কে তার সচেতনতা অবশ্যই তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করে। তার সীমিত সময়ের ক্রমবর্ধমান অনুভূতি নিঃসন্দেহে ইউক্রেন আক্রমণের তার সিদ্ধান্তে অবদান রেখেছিল।”

সামগ্রিকভাবে, পুতিন যখন তার নতুন মেয়াদ শুরু করছে, তখন ক্ষমতার উপর তার কর্তৃত্ব যত শক্ত ভাবা হয়, হয়তো তত শক্ত না।

সামোরুকভ লিখেছেন, রাশিয়ার “দুর্বলতাগুলি সবার চোখের সামনেই লুকিয়ে আছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ক্রেমলিন আগের চেয়ে এখন আরও বেশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং স্বেচ্ছাচারভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে মৌলিক নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে।”

তিনি লিখেছেন, “রাশিয়ার রাজনৈতিক এলিট বা অভিজাত্যরা পুতিনের আদেশ বাস্তবায়নে আরও নমনীয় হয়ে উঠেছেন এবং বিশ্বের প্রতি তার সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা আরও বাধ্য হয়ে উঠেছেন । এই শাসন “রাতারাতি ভেঙে পড়ার স্থায়ী ঝুঁকিতে রয়েছে, যেমনটি তিন দশক আগে তার সোভিয়েত পূর্বসূরি করেছিলেন।”

পুতিন নিশ্চিতভাবে পশ্চিমাদের প্রতি তার বিদ্বেষ অব্যাহত রাখবেন। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, “ইউক্রেন সহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক অঞ্চলে তারা যা করেছিল সেটাই তারা রাশিয়ার সঙ্গে করতে চায়: আমাদের ঘরে বিভেদ সৃষ্টি করে এর ভিত দুর্বল করতে চায়।”

ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থনের জন্য পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে পুতিনের যে কেবল প্রতিরোধ বেড়েছে তা নয় বরং রাশিয়ার নৈতিকশক্তিতে তা সমূলে আঘাত হিসাবেই তিনি দেখেন।

সমকামী 'আন্দোলন' নিষিদ্ধ

রাশিয়া গত বছর এলজিবিটিকিউ+ “আন্দোলন” নিষিদ্ধ করে একে চরমপন্থী বলে ঘোষণা করে। কর্মকর্তারা বলেছেন যে, পশ্চিমা প্রভাবের মুখে এ ছিল ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের জন্য লড়াই, যেটার কথা রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ বলে থাকে। আদালত লিঙ্গ পরিবর্তনকেও নিষিদ্ধ করেছে।

টেইলর বলেন, “আমি ধারনা করছি, রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের ভূমিকা সরাসরি দৃশ্যমান থাকবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে টিভি উপস্থাপক আনাস্তাসিয়া ইভলিভা আয়োজিত একটি পার্টিতে আমন্ত্রিতদের “প্রায় নগ্ন” অবস্থায় আসার পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।

তিনি বলেন, “অন্যান্যরা বুঝতে পেরেছেন যে এইধরণের জিনিসগুলি পুতিনের চিন্তাভাবনার সাথে সাদৃস্যপূর্ণ … তারা এই জিনিসটা ব্যবহার করতে চায়।”

পুতিনের দমনমূলক পদক্ষেপের ফলে যদিও বিরোধী দল এবং স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম প্রায় নাই হয়ে গেছে, তবুও রাশিয়ার তথ্য জগতে আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ আছে, যেমন নিজেদের একটি “সার্বভৌম ইন্টারনেট”প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।

পুতিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাশিয়ার বিজয় দিবসের দু'দিন আগে, যা রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত রেড আর্মির বার্লিন দখল এবং যুদ্ধের অপরিসীম কষ্ট স্মরণে, যে যুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রায় দুই কোটি নাগরিক মারা গিয়েছিলেন।

নাৎসি জার্মানির পরাজয় আধুনিক রাশিয়ার আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধকে তুলনামূলক সংগ্রাম হিসেবেই দেখার চেষ্টা করছেন। ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা