News update
  • UNGA urges renewed int’l efforts for a resolution of Rohingya crisis      |     
  • First National AI Readiness Assessment Report Published     |     
  • China calls for implementation roadmap for new finance goal     |     
  • New gas reserve found in old well at Sylhet Kailashtila field     |     
  • Revenue earnings shortfall widens in October     |     

'ট্রাম্প ২.০' বা হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ বিশ্বকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?

বিবিসি বাংলা গনতন্ত্র 2025-01-20, 6:07pm

efrewrewrw-b5a0f26bf6ffef44585abd4df1e64f731737374858.jpg




 দ্বিতীয় বারের মত হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, আর তার এই ফেরা বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই তার ঘোষিত 'আমেরিকা ফার্স্ট' মূলনীতি বাস্তবায়ন শুরু করবেন।

মি. ট্রাম্পের এই এজেন্ডা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির খুঁটিনাটি তো পরিবর্তন করবেই, পাশাপাশি এর ফলে আমেরিকার সীমানার বাইরে বসবাস করা কোটি মানুষের জীবনও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবে।

প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হল এই নিবন্ধে।

ইউক্রেন

নির্বাচনি প্রচারণার সময় বিভিন্ন বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন যে, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ 'একদিনের মধ্যে' শেষ করতে পারবেন।

যদিও সেটি ঠিক কীভাবে করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কখনোই খোলাসা করেননি তিনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যে কোটি কোটি ডলার সেনা অনুদান দিয়েছে, মি. ট্রাম্প সবসময়ই সেটির কড়া সমালোচক ছিলেন।

ইউক্রেন আর রাশিয়ায় মি. ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া কিথ কেলোগও সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান যে ১০০ দিনের মধ্যে এই যুদ্ধ থামানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার।

মি. ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার সাথে দেখা করতে চান এবং ট্রাম্পের সহযোগীরা ঐ বৈঠকের 'প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন'।

নেটো

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি সহ ৩২টি দেশের সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা নেটো বহুদিন ধরেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের চক্ষুশূল।

তিনি প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন হুমকি দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রকে নেটো থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন যদি নেটো সদস্যরা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজ নিজ দেশের জিডিপির দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় না করে।

সেসময় তিনি এও বলেছিলেন যে, কোনো দেশ যদি প্রতিরক্ষা খাতে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ব্যয় না করে তাহলে তারা আক্রমণের শিকার হলেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা করবে না।

চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে মি. ট্রাম্প নেটোর ইউরোপীয় সদস্যদের আহ্বান জানান, যেন তারা প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়ায় এবং তাদের জাতীয় আয়ের পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ করে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি ওয়েবসাইটের বর্ণনা অনুযায়ী তার লক্ষ্য হলো - 'নেটোর উদ্দেশ্য ও মূলনীতির পুনর্মূল্যায়ন'।

যুক্তরাষ্ট্রকে এই জোট থেকে তিনি কখনোই সরিয়ে নেবেন কিনা, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের দ্বিমত আছে।

কিন্তু অনেক বিশ্লেষক মনে করেন জোটের সদস্য হিসেবে থেকেও নেটোর প্রতি গুরুত্ব কমিয়ে দিতে পারেন মি. ট্রাম্প। যেমন, ইউরোপে নিযুক্ত মার্কিন সেনার সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্য

মি. ট্রাম্প যদিও গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পরই প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে যোগ দিচ্ছেন, তবে এর দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তাকে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়েই যেতে হবে।

অর্থাৎ এই যুদ্ধ পাকাপাকিভাবে বন্ধ করাটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য কঠিন হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইসরায়েলের পক্ষে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিলেন।

এর মধ্যে ছিল জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে দাবি করা ও তেল আভিভ থেকে মার্কিন অ্যাম্বাসি জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত।

এছাড়া ইরানের বিরুদ্ধেও তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছিল।

সেসময় যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাড়ায় ও ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করে।

সমালোচকদের অনেকের মতে, মি. ট্রাম্পের নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে ও এর ফলে ফিলিস্তিনিরা কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

তিনি ক্ষমতায় থাকার সময় আব্রাহাম অ্যাকর্ডের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করেন এবং ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান আর মরক্কোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালান।

তবে, ঐ চুক্তিতে আরব দেশগুলোর শর্ত ছিল যে ভবিষ্যতে ইসরায়েল স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে, যে শর্ত সেবারও মানা হয়নি।

গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর মি. ট্রাম্প বলেন যে, তিনি আব্রাহাম অ্যাকর্ডের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে 'শক্তি প্রয়োগ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা' করবেন।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এর অর্থ সৌদি আরব আর ইসরায়েলের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করার চেষ্টা করবেন তিনি।

চীন

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীন চীনের সাথে একপ্রকার বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন।

এই দফায়ও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করবেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তিনি যাদের নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন – মার্কো রুবিও ও মাইক ওয়াল্টজ – তাদের দুজনকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাবসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তারা দু'জন তাদের বিভিন্ন বক্তব্যে এরই মধ্যে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা বেইজিংকে অন্যতম হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।

অন্যদিকে, তাইওয়ানও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানকে সেনা সহায়তা দিয়ে এসেছে, যেখানে চীন তাইওয়ানকে দেখে এমন একটি অঞ্চল হিসেবে যেটি চীন থেকে বর্তমানে বিচ্ছিন্ন হলেও ভবিষ্যতে বেইজিংয়ের অধীনে থাকবে।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় মি. ট্রাম্প এমনও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে চীন যদি তাইওয়ান অবরোধ করার চেষ্টা করে তাহলে চীনের ওপর আরো কঠোর কর আরোপ করা হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মি. ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য হুমকিস্বরুপ। 

জলবায়ু পরিবর্তন

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণার বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

গ্রিন এনার্জি বা পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির ধারণাকে এর আগে 'জালিয়াতি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে তিনি আবারো যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেবেন বলে মনে করেন অনেকে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নেয়া সিদ্ধান্ত বদলে জো বাইডেন ২০২১ সালে প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করেন।

আর মি. ট্রাম্প আরো কম খরচে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরো বেশি মাত্রায় ড্রিল করা বা কূপ খনন করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তার নির্বাচনি প্রচারণায়।

জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মি. ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য হুমকিস্বরুপ।

অভিবাসন

যথাযথ অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিশুতি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনি প্রচারণার একটি অন্যতম প্রধান অংশ।

হোয়াইট হাউজে বসে প্রথম দিন থেকেই তিনি 'যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণ বিতারিতকরণ কর্মসূচী' শুরু করবেন।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেই যে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব – অর্থাৎ জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের বিধান – সেই নীতিও পরিবর্তন করার লক্ষ্য আছে নতুন প্রেসিডেন্টের।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় তিনি এমনও মন্তব্য করেছিলেন যে বেশ কিছু দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটকের আনাগোনাও নিষিদ্ধ করবেন তিনি।

এর অনেকগুলো দেশই ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।

গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল

গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়ে ও পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাওয়ার মন্তব্য করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।

আগের দফায় প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ও মি. ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কিনে নিতে চাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে এটি বিক্রি হবে না।

ডেনমার্কের অধীনে থাকা গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিষয়ক কার্যক্রমের বড় ঘাঁটি রয়েছে।

এছাড়া ওই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদও রয়েছে, যা বিভিন্ন হাই-টেক যন্ত্রপাতি ও ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে, পণ্য ও মালামাল পরিবহনের পথ পানামা খাল অতিরিক্ত ব্যয়বহুল এবং এই পথ দিয়ে পণ্য পরিবহনের খরচ না কমলে যুক্তরাষ্ট্র পানামা খালের দখল নিয়ে নেবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন মি. ট্রাম্প।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এই দুই অঞ্চলের একটিরও নিয়ন্ত্রণ নেবে না, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য আর 'আমেরিকা ফার্স্ট' মূলনীতির অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র তাদের সীমানার বাইরে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন চালিয়ে যাবে।