News update
  • Bank holiday on Monday, stock markets to remain closed too     |     
  • US strikes kill 10 Huthi rebels attacking ship in Red Sea     |     
  • 'Toofan’ storms in global ticket sales     |     
  • Turkey arrests at least 15 protesters at Pride rally     |     
  • Dhaka University to celebrate 104th anniversary Monday     |     

কেন রিটার্ন দাখিলে আগ্রহ নেই অধিকাংশ টিআইএনধারীর?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ট্যাক্স 2024-06-28, 9:07pm

retetwet-1c993cf87addbe04e2db6eea66bf6c2c1719587240.jpg




সারা দেশে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন বা কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যা এবং ট্যাক্স রিটার্ন জমাদানকারীর সংখ্যার মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। ফলে কর আদায়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা বর্তমানে ১ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৬২ হাজার ৭০৬ জন। অর্থাৎ এখনও রিটার্ন জমা দেননি প্রায় ৬২ লাখ টিআইএনধারী।

কেন এত বিপুলসংখ্যক টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন না, তার পেছনে বিভিন্ন কারণ তুলে ধরছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। বিশেষ করে সরকারি বেশ কিছু পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক হওয়ার বিধান থাকায় অনেকেরই করযোগ্য আয় না থাকা সত্ত্বেও তাকে টিআইএনধারী হতে হয়েছে। পরবর্তীতে তারা আর রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন না।

কর কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল জমি বিক্রয় এবং অন্যান্য সেবা গ্রহণের জন্য বাধ্য হয়ে টিআইএন নেয়া, টিআইএন নেয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হওয়া, মৃত্যু, দীর্ঘ সময় ধরে করযোগ্য আয় না থাকা, প্রুফ অব সাবমিশন অব রিটার্ন (পিএসআর) প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা না থাকা, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোয় করের আওতার বাইরে চলে যাওয়াসহ নানা কারণে এই ধরনের টিআইএনধারীরা রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না।

এছাড়া স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করা, কোম্পানির অবসায়ন বা বিলুপ্তি, করদাতার প্রবাসে থাকা, একই ব্যক্তির দুবার টিআইএন নেয়া, এবং টিআইএন তথ্যভান্ডারে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার কারণেও বিপুলসংখ্যক টিআইএনধারীর বিপরীতে রিটার্ন পাওয়া যাবে না বলে মনে করছে আয়কর বিভাগ।

আবার অনেক টিআইএনধারীর করযোগ্য আয় থাকলেও কর ফাঁকি দিতে রিটার্ন জমা দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন বলেও মনে করছেন কর কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময় সংবাদকে বলেন, আমাদের এক কোটিরও বেশি রেজিস্ট্রার করদাতা রয়েছেন। গত বছর রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন প্রায় ৩০ লাখ। এ বছর জমা দিয়েছেন ৪২ লাখ ৬২ হাজার। তারপরও টিআইএন জমা না দেয়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখেরও বেশি। মূলত এই টিআইএনধারীদের মধ্যে রয়েছে কিছু ওয়ান টাইম টিআইএনধারী। যেমন ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে টিআইএন প্রয়োজন হয়, তবে তার আয় যদি করযোগ্য আয়সীমা অতিক্রম না করে তবে তার রিটার্ন দাখিল করতে তিনি বাধ্য নন। একই বিষয় পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মধ্যে জমি বিক্রি করার ক্ষেত্রেও।

এক্ষেত্রে জমি বিক্রয়কারীর কোনো আয় না থাকলেও তাকে টিআইএন করতে হয়। কিন্তু তিনিও রিটার্ন দাখিল করতে বাধ্য নন।  টিআইএনধারীদের মধ্যে এ রকম একটি বিশাল অংশ রয়েছে। তাদের সংখ্যা মোট রিটার্নধারীদের প্রায় দশ শতাংশ। তাদের কাছে আমরা রিটার্ন আশা করতে পারি না। এই সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়, প্রায় ১০ লাখ। এছাড়া টিআইএনধারীদের অনেকেই মারা গেছেন। পাশাপাশি অনেকে ব্যবসার প্রয়োজনে কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করার জন্য টিআইএন করে থাকেন। তবে পরবর্তীতে সে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর চালু থাকে না। এসব ক্ষেত্রেও রিটার্ন জমা পাওয়া যায় না।

এসব কারণে রিটার্ন জমা না হওয়ার পরিমাণ মোট টিআইএনধারীদের প্রায় ৩০ শতাংশ। এর বাইরে যে ৩০ শতাংশ টিআইএনধারী তারা ইচ্ছাকৃতভাবে টিআইএন রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না বলে মনে করছে এনবিআর। তাদের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। সব মিলিয়ে যে ৬০ শতাংশ রিটার্ন জমা দেননি তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশের জমা না দেয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে, আর বাকি ৩০ শতাংশ ইচ্ছে করে রিটার্ন জমা দেননি। তবে এটা চূড়ান্তভাবে বোঝা যাবে ৩০ জুনের পর। কারণ সেদিন চলতি অর্থবছরের রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ সময় পার হয়ে যাবে।

ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে এনবিআরের প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে উল্লেখ করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সময় সংবাদকে বলেন, ট্যাক্স রিটার্ন জমাদানকারীদের সংখ্যা বাড়াতে হলে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। কারণ যে সব দেশ ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে সফল সে সব দেশে রিটার্ন জমার প্রক্রিয়া অনেক সহজ। পাশাপাশি এনবিআরের নিজস্ব তথ্য ভান্ডারকেও আরও শক্তিশালী করতে হবে।

এছাড়া টিআইএন করা এবং এর রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতার ভয়ে দেশের গ্রামীণ এলাকাগুলোসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি রয়েছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, এক্ষেত্রে তাদের ভীতি কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে এনবিআরকেই। এসব ক্ষেত্রে তাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে প্রথমবার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে জমাদানকারীকে তাদের প্রদর্শিত সম্পদ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। পাশাপাশি তারা আগে কেন ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেননি এ সংক্রান্ত প্রশ্ন করে তাদের বিব্রতও করা যাবে না।

তিনি বলেন,রিটার্নে দেখানো সম্পদের ব্যাপারে এনবিআর কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এড়াতেই অনেকেই রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হন। তাই রিটার্ন জমা দেয়ার পরিমাণ বাড়াতে হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে এনবিআর নিয়ে যে ভীতি রয়েছে তা কাটাতে হবে সবার আগে।

তবে মূলত দেশে রিটার্ন জমা না দিলেও পার পাওয়া যাচ্ছে এ ধরনের সংস্কৃতি বিরাজ করার কারণে করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষ ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যাপারে উদাসীন থাকে বলে মনে করছেন ঢাকা ট্যাক্স’স বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ার হোসেন। আর এই সংস্কৃতি তৈরির পেছনে এনবিআর কর্মকর্তাদেরও দায় রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

অ্যাডভোকেট আনোয়ার বলেন, গত বছর প্রায় ৬০ লাখ মানুষ রিটার্ন জমা দেননি। তাদের মধ্যে অর্ধেকই রয়েছেন যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে। অথচ তারা রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। কারণ রিটার্ন জমা না দিলেও তাদের কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে না। এসব দেখে তারা উৎসাহিত হচ্ছেন।

তবে এনবিআর একটু উদ্যোগ নিলেই এই প্রবণতা বন্ধ করতে পারে উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, রিটার্ন জমাদানের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে এনবিআরের স্থানীয় সার্কেলগুলো কিন্তু তার আওতাধীন এলাকায় যারা রিটার্ন জমা দিলেন না তাদের নোটিশ দিতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা করেন না। বরং যারা রিটার্ন জমা দেন তাদের থেকেই কর আদায় করার ব্যাপারে বেশি চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। এতে নতুন করদাতা তৈরি হচ্ছেন না। বরং করদানে বিমুখ হচ্ছেন প্রকৃত করদাতারা।

তবে রিটার্ন জমাদানে জনগণকে উদ্বুদ্ধু করা কিংবা তাদের বাধ্য করার দায় শুধু এনবিআরের নয় উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন,

এর দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারকে নিতে হবে। রাষ্ট্র এবং তার সিস্টেম যদি রিটার্ন জমাদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, যদি রিটার্ন জমা না দিয়েও একজন করযোগ্য সম্পদের মালিক সমাজে বুক ফুলিয়ে চলতে পারেন, তাদের পিছু ধাওয়া করা শুধু এনবিআরের দায় নয়।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, রিটার্ন জমা না দিলেও যখন দেখা যাচ্ছে তারা রাষ্ট্রের সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারছেন, সেখানে কেন তারা রিটার্ন জমাদানে উদ্বুদ্ধু হবেন। রাষ্ট্রকেই তাদের রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য করতে হবে বলে উল্লেখ করেন আব্দুল মজিদ।

পাশাপাশি মাত্র ১৫ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত সম্পদ সাদা করার বিধান রাখার তীব্র সমালোচনা করে সাবেক এই এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যখন দেখা যাচ্ছে মাত্র ১৫ শতাংশ জরিমানা দিয়েই কালো টাকা সাদা করা যাচ্ছে তখন যে সম্পদশালীরা রিটার্ন জমা দিতে উদ্বুদ্ধু হবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক রিটার্ন জমা দেয়ার সময় শেষ হয় গত ৩১ জানুয়ারি। এবার রিটার্ন জমা দিতে দুই মাস অতিরিক্ত সময় দেয়া হলেও সেই সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ টিআইএনধারী রিটার্ন জমা না দেয়ায় এই অতিরিক্ত দুই মাস সময় দেয়া হয়। জরিমানা ছাড়া রিটার্ন জমা দেয়ার পূর্বের নির্ধারিত শেষ দিন ছিল গত বছরের ৩০ নভেম্বর। কিন্তু পরে তা বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি করা হয়। তবে টিআইনধারীদের মধ্যে যারা প্রথমবার রিটার্ন জমা দেবেন তাদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ রয়েছে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।

অপরদিকে যারা ৩১ জানুয়ারির পর টিআইএনধারী হয়েছেন তারাও ৩০ জুনের মধ্যে রিটার্ন জমা দেয়ার সুযোগ পাবেন। সাধারণত প্রথমবার রিটার্ন জমা দেয়ার সময় আয়কর কর্মকর্তারা রিটার্নে দেখানো সম্পদ সম্পর্কে খুব বেশি প্রশ্ন করেন না। 

এনবিআর এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জরিমানা ছাড়া আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ দিন ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছিল ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৮১টি। বিপরীতে আয়কর জমা আসে ৫ হাজার ৯০১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ওই সময় টিআইএন নম্বরধারীর সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৬৯ হাজার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল হয় ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৬৬১টি।