ফ্যাসিবাদী সময়ে দেশে যেন দুর্নীতির মচ্ছব চালিয়েছে সফটওয়্যার কোম্পানি ডায়নামিক সলিউশনস ইনোভেটরস (ডিএসআই)। ঘুষ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি বা প্রকল্প বাস্তবায়নই হয়নি।
সরকারি অর্থে পরিচালিত এসব প্রকল্পে নিম্নমানের প্রযুক্তি, অনিয়মিত বিলিং, অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ স্পষ্ট। যদিও তদন্ত ও অডিট রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা গোপন রাখা হয়েছে।
সিআরভিএস প্রকল্পে ব্যর্থতা ও অনিয়ম
২০১৪ সালে শুরু হওয়া সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস) প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদের জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ও তালাকের তথ্য ডিজিটাল করা। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও ২০২২ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষে সারাদেশে রোলআউট সম্ভব হয়নি।
৪৭ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হলেও জাতীয় পর্যায়ে কার্যকর হয়নি। অভিযোগ রয়েছে—ডিএসআই নিম্নমানের সফটওয়্যার, অপ্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ক্রয় ও প্রশিক্ষণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
আইইআইএমএস প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল প্রোফাইল হয়নি
২০১৮ সালে নেয়া হয় ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (আইইআইএমএস) প্রকল্প, যার উদ্দেশ্য ছিল ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি। ২৩ কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্প চার বছর আগে শেষ হলেও এখনও চালু হয়নি।
তদন্তে দেখা গেছে, দুর্বল সফটওয়্যার, অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা ও একাধিক পেমেন্টের অনিয়ম ঘটেছে। জাতীয় পর্যায়ে কোনো লাইভ পোর্টাল চালু হয়নি।
বিসিআইসি অটোমেশন প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাব
বিসিআইসির ইন্টিগ্রেটেড বিজনেস প্রসেস অটোমেশন প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পে সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ূনের প্রত্যক্ষ আনুকূল্যে ডিএসআই কাজ পেয়েছে বলে অভিযোগ। দীপন গ্রুপের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকল্প বাগিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রকল্পেও অনিয়ম
ইউনিসেফ ও এডিবি অর্থায়িত ইন্টিগ্রেটেড প্রাইমারি এডুকেশন এমআইএস (আইপিইএমআইএস) প্রকল্পেও ডিএসআইয়ের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় ও বিতর্কিত ভূমিকার অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হয়নি।
এটুআই ও সার ব্যবস্থাপনায় জড়িত দুর্নীতি
এটুআইয়ের আওতায় আইএসডিপি প্রকল্প ব্যর্থ করার অভিযোগ রয়েছে ডিএসআইয়ের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সারের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার নতুন টেন্ডারেও যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘুষ ও যোগসাজশের নেপথ্যে কর্মকর্তা
কোম্পানির এক কর্মকর্তা আসাদুল্লাহ সরাসরি ঘুষ ও যোগসাজশের মাধ্যমে প্রকল্প সংগ্রহে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে এই পরিচয়েই তিনি পরিচিত।
প্রশ্ন ও দাবি
ডিএসআইয়ের বারবার ব্যর্থতা ও দুর্নীতির অভিযোগের পরও প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় না? কেন ব্ল্যাকলিস্ট করা হয় না?
বিশ্লেষকরা বলছেন, অবিলম্বে ডিএসআই সম্পর্কিত সব প্রকল্পের স্বাধীন তদন্ত ও অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। দায়ীদের শাস্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি জোরালো হচ্ছে।