রাজধানীর মহাখালীর বহুতল ভবন খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিনজন হয়েছে।
এই দুজন হলেন- মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (৬৩) ও আকলিমা রহমান (৩১)। রফিকুল পেশায় প্রকৌশলী। তিনি সাইফ পাওয়ারটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল খাজা টাওয়ারের ১৩তলায়। আর আকলিমা ভবনটির নবম তলায় একটি কল সেন্টারে কাজ করতেন।
রফিকুলকে ভবন থেকে উদ্ধার করে রাত সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আকলিমাকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয় রাত সোয়া ১টার দিকে। তাদের দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে বলে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন।
এর আগে সন্ধ্যায় এ ঘটনায় হাসনা হেনা (২৭) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। হাসনা হেনা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রেস অনলাইন লিমিটেডের সেলস ইনচার্জ ছিলেন।
ইন্টারনেটের তার বেয়ে ভবন থেকে নামতে গিয়ে তিনি নিচে পড়ে মারা গেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মহাখালীর ঢাকা মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসেকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মহাখালীর আমতলী এলাকার ১৪ তলা ওই ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। উদ্ধারকাজে যোগ দেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা।
রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, ভবন থেকে ৩ নারীসহ ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, আগুনের সূত্রপাত কোন তলা থেকে, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে নানাভাবে লোকজন নামার চেষ্টা করেন। ওই ভবনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ কেউ পাশের ভবনের ছাদ দিয়ে, কেউবা ইন্টারনেটের তার বেয়ে নিচে নামেন।
সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, খাজা টাওয়ারের সামনের দিক থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দুটি যন্ত্র দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন ও ভেতরে আটকে থাকা ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছেন। এ সময় ভবনটির ১১, ১২ ও ১৩ তলায় আগুন ও ধোঁয়া দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ১০ তলা থেকে ওপরের দিকে ১৪ তলা পর্যন্ত ভবনের কাচের দেয়াল ভেঙে আগুন নেভানোর কাজ করেন।
আগুন লাগার সময় খাজা টাওয়ারের ১২ তলায় ছিলেন সালমান হোসেন। তিনি সাইফ পাওয়ারটেকের সহকারী ব্যবস্থাপক। তিনি জানান, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আগুন লাগার বিপৎসংকেত (ফায়ার অ্যালার্ম) শুনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন তিনি। কিন্তু নিচের দিক থেকে আসা ধোঁয়ার কারণে আর নামতে পারেননি তিনি। পরে আবার ১২ তলায় উঠে যান। সেখান থেকে ভবনের পেছনের দিকে থাকা অন্য আরেকটি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেন তিনি। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।