Mostafa Jamal Haider, Chairman, Jtiya Party, speaking at a discussion on Farakka Long March Day organised by IFC at National Press Club on Saturday.
ঢাকা, ১৮ মে - আজ শনিবার এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আয়োজিত ফারাক্কা লংমার্চের স্মরণ ও তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের নদী-পানির অধিকার আদায়ে তার দৃষ্টান্ত এদেশের মানুষকে চিরদিন অনুপ্রেরণা যোগাবে।
১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা ভাসানী ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে ৯৬ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর ৬ মাস পূর্বে এই লংমার্চ আয়োজন করেছিলেন, গঙ্গা নদীর পানি এক তরফা প্রত্যাহার বন্ধ করার দাবিতে। ফারাক্কা লংমার্চ স্মরণে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরম খান হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলক ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালু করে প্রতিবেশি ভারত কোন চুক্তি ছাড়াই গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করছিল। এর ফলে গঙ্গার বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ কমে কৃষি কাজ ও মতস উতপাদনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
বক্তারা বলেন মওলানা ভাসানীর এই আন্দোলন বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি করেছিল। তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের দাবীর প্রতি বিশ্বের জনমত তৈরী হয় এবং সে কারণে ১৯৭৭ সালে প্রথম গঙ্গা পানি চুক্তি সম্পাদন সহজ হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভার আলোচনায় অংশ নেন লেখক ও গবেষক সিরাজ উদ্দিন সাথী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাব্লু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান,বাসসে্র সাবেক প্রধান সম্পাদক গাজিউল হাসান খান, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন এখন ফারাক্কা লংমার্চের গুরুত্ব অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী কারন বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ৫৭টি যৌথ নদীর ৫৪টীরই উজানে বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তার ফলে নদী মাতৃক বাংলাদেশে এখন আর বর্ষাকালে প্লাবনভূমি পানিতে প্লাবিত হয়না। শুষ্ক মওসুমে পানির অভাবে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেয়, বর্ষাকালে তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর অববাহিকায় আঘাত হানে অস্বভাবিক বন্যা। ভেসে যায় জমির ফসল এবং হাজারো মানুষের বসত ভিটা।
প্রধান অতিথির ভাষণে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন ভারতের কুটনীতির কারনে বাংলাদেশের নদী-পানি ধবংসের সম্মুখিন এবং দেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান। তিনি বলেন যেহেতু বাংলাদেশের গঠন ও অস্তিত্ব নদী ও পানির উপর নির্ভরশীল সেহেতু এখন পানি ও সার্বভৈনত্বের অধিকার এক ও অভিন্ন।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাব্লু বলেন মওলানা ভাসানীর জন্ম না হলে বাংলাদেশের সৃষ্টি হতোনা। গংগার পানির জন্য লংমার্চ করার পাশাপাশি তিনি ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে চিঠি দিয়েছিলেন এবং ভারতের প্রধান মন্ত্রী সে চিঠির জাবাবও দিয়েছিলেন।
ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ৫৪টা নদীর পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের দূর্দশার কথা উল্লেখ করে বলেন ভবিষ্যতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। তিনি বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ফারাক্কা লংমার্চ বিষয়ে অবগত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন আমরা ভারতকে সব দিয়েছি বলি কিন্তু ভারতের কাছ থেকে কি পেয়েছি তা বলিনা।
সিরাজ উদ্দিন সাথি বলেন যতদিন পর্যন্ত দেশে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবেনা ততদিন পানির দাবী অর্জিত হবেনা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন খোদ ভারতের ভেতর থেকে ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে কিন্তু বাংলাদেশ থেকে জোড়ালো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা বলেন ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তি নবায়ন করতে হবে। অন্যদিকে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন জরূরি হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় নদী-পানি নিয়ে দেশে সৃষ্ট জাতীয় ঐক্যমতের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশি ভারতের সাথে সকল নদীর অববাহিকা ভিত্তিক টেকসই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। - প্রেস বিজ্ঞপ্তি