News update
  • 4 death row convicts arrested hour after fleeing Bogura jail     |     
  • Commuters suffer as heavy rain inundates Dhaka roads      |     
  • Bangladeshi killed in BSF firing at Lalmonirhat border     |     
  • Female physician sets herself on fire, dies in Mymensingh     |     
  • Endangered dolphin found dead in Halda River     |     

প্রবাস থেকে ভাই-বোনকে উপহারের টাকা পাঠালেও কেন কর দিতে হবে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2024-06-17, 7:27am

ereertrw-57fb7848594623a6a13b87f5c5bcb5d01718587652.jpg




মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে থাকেন বাগেরহাটের কবির হোসেন। দেশে থাকা স্ত্রী সন্তানের ভরণ পোষণের জন্য স্ত্রীর একাউন্টে প্রতি মাসে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান তিনি। এছাড়া রোজার ঈদ ও কোরবানিতে ছোট ভাই-সহ নিকট আত্মীয়দের একাউন্টেও উপহার হিসেবে টাকা পাঠান তিনি।

ঈদ কিংবা উৎসবে মি. হোসেন তার ছোট ভাই মিজানুর রহমানের একাউন্টেও টাকা পাঠাতেন, তবে এতে কোনও কর দিতে হত না মি. রহমানকে।

কিন্তু নতুন বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মা ছাড়া অন্য কাউকে টাকা পাঠালে তার ওপর কর বসবে।

এর আগে ভাই-বোন কিংবা নিকট আত্মীয়-সহ যে কারো একাউন্টে বিনা করে টাকা পাঠানোর সুযোগ ছিল। নতুন বাজেটে রেমিট্যান্স পাঠানোর সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনার কারণে এই সংকট তৈরি হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলছে, বিদেশ থেকে এই পাঠানো অর্থ আয় হিসেবে গণ্য হবে। যে কারণে এর ওপর কর প্রদান করতে হবে গ্রহীতাদের। বছর শেষে আয়কর রিটার্নে করদাতাকে তা দেখাতে হবে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো নিয়ে অনেক ধরনের দুর্নীতিও হয়, নতুন বাজেটের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সেটি বন্ধ হবে।"

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এনবিআরের এই প্রস্তাব ভাল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে কিছুটা জটিল করতে পারে।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমি মনে করি এটা ট্যাক্স রেট বাড়ানোর জন্য করা হয়েছে। তবে নতুন এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে ট্যাক্স রেটটা বাড়বে। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া কমবে।"

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে এই বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও এটি এখনো কার্যকর হয়নি।

ব্যাংকগুলোকেও এ ধরনের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলেও বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক।

যাদের কাছে টাকা পাঠালে কর চাপবে

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএইটি-র তথ্য মতে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশে আসে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী কর্মীরা এই রেমিট্যান্সের টাকা স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান, ভাই-বোন কিংবা নিকট আত্মীয় কিংবা বন্ধু বান্ধবের ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে থাকেন।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে তাদের পাঠানো এই টাকা রেমিট্যান্স হিসেবেই ধরা হয়।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী, কিংবা সন্তানদের অনেকেরই নিজ নামে ব্যাংক একাউন্ট নেই। সে কারণে অনেকেই নিজ পরিবারের সদস্য ছাড়া নিকট আত্মীয়দের একাউন্টে এই টাকা পাঠিয়ে থাকেন।

নতুন বাজেটের প্রস্তাব অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও মা-বাবা ছাড়া আর কারো একাউন্টে টাকা পাঠালে সেটিকে উপহার হিসেবে ধরা হবে। এবং তার ওপর কর বসবে।

উপহার পেলে বছর শেষে আয়কর রিটার্নে করদাতাকে তা দেখাতে হবে। এমনকি উপহারদাতাকেও তাঁর রিটার্নে উপহার দেওয়ার বিষয়টি জানাতে হবে। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স উপহার হিসেবে এলে সেটিও করের আওতায় পড়বে।

অর্থনীতিবিদ মি. মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দান চ্যারিট্যাবেল অথরাইজ ফান্ডে হলে সেটা ট্যাক্সের আওতায় আসবে না। অন্যথায় ট্যাক্সের আওতায় আসবে।"

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মি. মজিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা উপহার হিসেবে আসুক আর দান হিসেবে আসুক কিংবা অন্য যেভাবেই আসুক, যার কাছে আসছে তার সম্পদ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণেই এই কর দিতে হবে। উপহারের নামে কেউ যদি লাখ লাখ টাকা পাঠায় সেটিও তো সরকারকে দেখতে হবে।"

প্রবাসী আয়ে কেন করের বোঝা?

বিদেশ থেকে অনেকেই দেশে টাকা পাঠান। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা সব টাকাই রেমিট্যান্স নয়। বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দিতে ব্যাংক থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের ওপর কোনও কর আরোপ নেই। নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় বিষটি নিয়ে বলা হলেও এনবিআর থেকে কোনও ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

তাই নতুন বাজেটে রেমিট্যান্সের অর্থের ওপর করারোপের বিষয়টি নিয়ে এখনো এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী রেমিট্যান্সের সুবিধা পেতে হলে প্রেরককে বিদেশে থাকার পাশাপাশি সেখানে বৈধভাবে আয় করতে হবে। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে অথবা ওই সব দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে "রেমিট্যান্স" ঘোষণা দিয়ে টাকা পাঠাতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনেকে ট্যাক্স ফাঁকি-সহ বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নেয়। সেটি বন্ধ করার জন্যই হয়তো নতুন বিধানটি চালু করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ মি. মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন কেউ যদি চায় ট্যাক্স ফাঁকি দিবো, সেটার সুযোগ পাবে না। এর ফলে কর রেটটাও বাড়বে।"

যে সংকট তৈরি হতে পারে

সৌদি আরবের রিয়াদে থাকেন প্রবাসী শ্রমিক আশরাফ আলী। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। বাড়িতে থাকেন তার বৃদ্ধা মা ও তিন ভাই বোন।

আশরাফ তার বড় ভাইয়ের একাউন্টে টাকা পাঠান প্রতি মাসে। সেই টাকাতেই তাদের পুরো সংসার চলে।

আশরাফ আলীর অসুস্থ বৃদ্ধ মায়ের একাউন্ট ছাড়া নতুন বাজেটে বাড়তি টাকা কর গুনতে হবে জেনে অনেকটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে, বাবা-মা ও স্ত্রী সন্তানদের বাইরে কারও কাছে প্রবাসী আয় এলে তাকে ওই ব্যক্তির মূলধনি আয় হিসেবে ধরা হবে। যে কারণে নতুন বাজেটে তা করযোগ্য হবে।

রবিবার মি. আলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমার ভাই আমাদের পরিবার চালায়। এই বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে আমার মায়ের পক্ষে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব না।"

রেমিট্যান্সের আয়ে কোনও ধরনের কর দিতে হয় না।

এতদিন মি. আলী তার ভাইয়ের একাউন্টের মাধ্যমে সব খরচ বহন করলেও নতুন করে এক ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে তাদের।

বাংলাদেশের অনেক প্রবাসী কর্মী তাদের নিকট আত্মীয়দের জাকাত দেন, দেশে থাকা অসুস্থদের দান করেন কেউ কেউ। এর প্রায় সবই পাঠানো হয় ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে।

তাছাড়া ঈদ কিংবা কোরবানিতে প্রবাসীদের অনেকেই দরিদ্রদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। অনেকে পরিবারের বাইরে নিকট আত্মীয়দের উপহার দিয়ে থাকেন।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মি. মজিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বৈষম্যকে ঠেকানোর জন্য এই আইন করা হলেও এতে করে নিকট আত্মীয় স্বজনদের এক ধরনের বিড়ম্বনা ও ঝামেলা বাড়তে পারে।"

প্রবাসী আয় বেড়েছে দ্বিগুণ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। বাংলাদেশ সরকার বলছে, গত ১৪ বছরে প্রবাসী আয় দ্বিগুণ বেড়েছে।

গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদের বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়ে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

নতুন অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সরকারের তথ্য মতে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ১০ লাখ ৮৫ হাজার নারী কর্মী'সহ মোট ৯৭ লাখেরও বেশি লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বহুগুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি বজায় রাখতে নতুন নতুন পরিকল্পনার কথাও গত ৬ জুন সংসদের বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মি. আলী। বিবিসি বাংলা