যুক্তরাজ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য নতুন নিয়ম আরোপ করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।
মূলত, দক্ষ কর্মী ভিসা, বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্রাজুয়েট জব এবং স্কেল আপ ভিসা বা দ্রুত বর্ধনশীল ব্যবসাখাতে চাকরির জন্য ভিসার আবেদনকারীদেরকে এ লেভেলের ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। এ লেভেলের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা মূলত দ্য কমন ইউরোপিয়ান ফ্রেমওয়ার্ক ফর রেফারেন্স ফর ল্যাংগুয়েজ-এর বি২ লেভেলের সমমান।
আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। ব্রিটিশ সরকার বলছে, চলতি বছরের মে মাসে অভিবাসান বিষয়ে প্রকাশিত শ্বেতপত্রের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। খবর বিবিসির।
যুক্তরাজ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, আপনি যদি এই দেশে আসেন আপনাকে অবশ্যই আমাদের ভাষা শিখতে হবে এবং আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা এই দেশে অবদান রাখেন, তাদেরকে ব্রিটেন স্বাগত জানায়। কিন্তু, আমাদের ভাষা না শিখে অভিবাসীদের এখানে আসার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।
ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভিসার আবেদনের জন্য প্রার্থীদেরকে সরকার অনুমোদিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে, কথা বলা, শোনা, পড়া এবং লিখতে পারার সমার্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে। দক্ষ শ্রমিক, স্কেল আপ ক্যাটাগরি এবং উচ্চ সম্ভাবনা সম্পন্ন প্রার্থী ক্যাটাগরির (হাই পটেনশিয়াল ইন্ডিভিজুয়াল বা এইচপিআই) আবেদনকারীদের বি২ লেভের ভাষার দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। আগে এটি ছিল বি১ লেভেল।
স্কেল আপ ভিসা হলো দ্রুত বর্ধনশীল ব্যবসায়িক খাতে কর্মরতদের জন্য প্রদেয় ভিসা। এদিকে হাই পটেনশিয়াল ব্যক্তি বলতে তাদেরকে বুঝানো হচ্ছে যারা গত পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে বিশ্বের নামকরা কোনো বিশ্বিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছে।
অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসা প্রার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতার বিষয়টি সময়মতো আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। তার আগে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, শ্বেতপত্রে যে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে তা যুক্তরাজ্যের অভিবাসনব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রিত, সুনির্দিষ্ট এবং স্বচ্ছ করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এমন পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আগমন প্রতিবছর এক লাখ পর্যন্ত কমে আসবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরির পরিচালক ড. মেডেরেইন সাম্পশন জানান, অনেক গ্রেজুয়েট চাকরিতে এরইমধ্যে এ লেভেল ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন। ভাষাগত দক্ষতা বিষয়ে নতুন করে আরোপ করা সরকারের এই নিয়ম মধ্যমমানের চাকরি যেমন ট্যাকনিক্যাল এবং ম্যানুয়েল স্কিলের চাকরির বাজারে প্রভাব ফেলবে। অথচ, এই চাকরিগুলোতে উঁচু মাপের ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োজন নেই।
এদিকে অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী আফসানা আক্তার বলেন, সরকারের এই নতুন নিয়ম তার কাছে অস্বচ্ছ মনে হয়েছে। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদের এ লেভেলের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা নেই। এই নিয়মের মাধ্যমে অনেক দক্ষ কর্মী যারা যুক্তরাজ্যের এসে দেশটির অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চায়, তাদেরকে দূরে ঠেলে দেওয়া হবে বলে।