News update
  • Logi-boitha of 2006 was the 1st reflection of Hasina’s fascism: Rizvi     |     
  • Economists express concern over bank merger; BB remains confident     |     
  • No response on request for Hasina’s extradition: Touhid Hossain     |     
  • Deep relations with US, economic ties with China: Touhid     |     
  • Recommendations on July Charter implementation submitted to CA     |     

মোবাইল নেটওয়ার্ক 'মহাসমস্যা', ডেটা নিয়ে 'নৈরাজ্য'-প্রতিকার পাওয়া কঠিন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2023-03-10, 5:35pm

1a26f7e0-be61-11ed-801b-a13454e3cb4e-26e844dd29d06b216c953ad1afe447901678448158.jpg




বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সেবা এবং সেবার মান নিয়ে অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছেই।

গ্রাহকদের বাজে অভিজ্ঞতা

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বিভিন্ন সময়ে কিছু পদক্ষেপ নিলেও উদ্ভব হচ্ছে নিত্য নতুন সমস্যার, যেগুলোর সমাধান পাওয়া সাধারণ গ্রাহকদের জন্য খুব কঠিন। এমনকি অনেক সমস্যার সমাধান মিলছে না কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকেও।

সম্প্রতি গ্রাহকদের দিক থেকে প্রায়শই তাদের অ্যাপের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হওয়া এবং ডেটা হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ বেশি আসছে।

মসিউর রহমান একজন স্কুল শিক্ষক। থাকেন ঢাকার বাইরে। সম্প্রতি তার মোবাইল ফোন কোম্পানির অ্যাপ থেকে দু হাজার টাকা 'গায়েব' হয়ে যাওয়ার পর তিনি কাস্টমার কেয়ারে যান। তার অভিযোগ হচ্ছে, সেন্টারে গিয়ে কোনো সহায়তাই পাননি।

“ওখানে যারা ছিলো তারা বললো, ভাই আমরাও জানিনা কেন এটা হয়েছে। অপেক্ষা করেন,” বলছিলেন তিনি। মি. রহমান এখনো তার সব টাকা ফিরে পাননি।

দিলরুবা আরজু ঢাকাতেই থাকেন। তার অভিযোগ প্রতি মাসে যে পরিমাণ ডেটা কেনেন এবং তার বিপরীতে প্রতিদিন যে পরমাণ ডেটা ব্যবহারের সুযোগ তার থাকার কথা সেটা তিনি পান না।

“সবচেয়ে সমস্যা হলো আমার অব্যবহৃত ডেটা তারা গায়েব করে ফেলে। এটা কেন করবে?” প্রশ্ন তোলেন তিনি।

মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে গ্রাহকের সমস্যা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা বিটিআরসির কাছে গিয়েছে। এর পাশাপাশি তারা ফোন কোম্পানি এবং আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, কলড্রপ হলে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা, কিন্তু সেটি গ্রাহকরা পায় না।

“ভয়েস কল এখনো ড্রপ হচ্ছে হরহামেশা। আর অব্যবহৃত ডেটা নিয়ে রীতিমতো নৈরাজ্য করছে কোম্পানিগুলো। গ্রাহকের অব্যবহৃত ডেটা তারা হাতিয়ে নিচ্ছে,” বলছিলেন তিনি।

নেটওয়ার্ক দুর্বলতাকে একটা 'মহাসমস্যা' হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, যে গতিতে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার কথা সেটি পাওয়াই যায় না। যার ফলে কখনো কখনো কনটেন্ট তৈরি কিংবা ভিডিও বাধাহীনভাবে দেখা যায় না।

“ কাস্টমার কেয়ারগুলোতে গ্রাহকদের হয়রানির অনেক অভিযোগ। আবার সাম্প্রতিক সময়ে একটি কোম্পানির নেটওয়ার্ক দুই আড়াই ঘণ্টা বিপর্যয়ে ছিলো। কত গ্রাহক ক্ষতির সম্মুখীন হলো। কিন্তু ওই বিপর্যয়ের কারণ কী এবং এতে গ্রাহকের সমস্যার ক্ষতিপূরণ কী সেটি কেউ বিবেচনাতেই নেয়নি,” বলছিলেন মি. আহমেদ।

জামিল হোসেন রাহাত নামে একজন গ্রাহক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন প্রধান সমস্যা হলো কলড্রপ। আরেকটা সমস্যা তিনি নিয়মিত ফেস করেন সেটি হলো কাউকে কল দিলে তার ফোনে রিং হতে অনেক বেশী সময় লাগছে।

“বলা হচ্ছে ফোর জি। কিন্তু টু না থ্রি জি সেটাই বোঝা যায় না। কোথাও নেটওয়ার্ক ভালো। আবার কোথাও খারাপ। অব্যবহৃত ডেটা হুটহাট শেষ হয়ে যাচ্ছে,” বলছিলেন তিনি।

এসব অভিযোগকারীরা কোনো একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির গ্রাহক নন। সব কোম্পানির সেবা নিয়ে তাদের গ্রাহকদের মধ্যে এ ধরণের অভিযোগ আছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি মোবাইল ফোন কোম্পানি হচ্ছে গ্রামীন ফোন ও রবি। গ্রাহকদের নানা অভিযোগ নিয়ে এই দুটি কোম্পানির সাথে বিবিসি বাংলার তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এজন্য তাদের কাছে লিখিত প্রশ্নও পাঠানোও হয়।

পরে গ্রামীণ ফোন লিখিত জবাবে জানায় তাদের বিলিং সিস্টেমের উন্নয়ন কাজ চলায় কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে।

মাইজিপি অ্যাপেও তারা একটি নোটিশ দিয়েছে। সেখানে বলা আছে - "পোস্টপেইড বিলিং সিস্টেমের উন্নয়ণ কাজ চলার কারণে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে কিছু অসঙ্গতি থাকতে পারে। সমস্যার সমাধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।"

নেটওয়ার্কের বিষয়ে গ্রামীণফোন বলছে যে তারা দুশোর মতো জায়গা চিহ্নিত করেছে যেখানে টাওয়ার দরকার। কিন্তু টাওয়ার কোম্পানিগুলো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এজন্য অনুমতি আদায় করতে পারছে না।

আর কাস্টমার কেয়ারসহ গ্রাহক সেবার বিষয়ে কোম্পানিটি বলছে উন্নত সেবা দিতে ও গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণে তারা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে।

তবে অপর বড় কোম্পানি রবির দিক থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

দীর্ঘদিনের অভিযোগগুলোর মধ্যে হচ্ছে - কল ড্রপ, ইন্টারনেটের ধীরগতি, ভয়েস কলের খারাপ মান এবং যখন-তখন নেটওয়ার্ক খারাপ হয়ে যাওয়া। এসব সমস্যার কোন সুরাহা হচ্ছে না। এর সাথে যোগ হচ্ছে কোনো 'কারণ ছাড়াই' গ্রাহকের ব্যালেন্স কেটে নেয়ার অভিযোগ।

অনেক গ্রাহক বলছেন যে কোম্পানিগুলোর কাস্টমার কেয়ারের সাথে হটলাইনে যোগাযোগ করে দীর্ঘ সময় দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান মিলছে না। আবার সরাসরি কাস্টমার কেয়ার পয়েন্টে গেলে অনেক সময় পাল্টা প্রশ্নে বিব্রত হচ্ছেন অনেক গ্রাহক।

এসব প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন গ্রাহকরা কেউ কেউ নিজ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে জানিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিকার পেলেও অনেক গ্রাহক এই প্রতিকার পাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কেই অবহিত নন।

বিটিআরসি কী করছে?

বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকদের অভিযোগের জন্য তাদের হটলাইন ও কাস্টমার কেয়ার পয়েন্ট সার্বক্ষণিক চালু আছে। সেখানে অভিযোগ পেলে তারা সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বিবিসি বাংলাকে বলেন, গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ তারা পাচ্ছেন, বিশেষ করে নেটওয়ার্ক, কলড্রপ ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত।

গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ জানতে একটি হটলাইন নাম্বার রেখেছে বিটিআরসি।

"অনেক ক্ষেত্রে প্রতারিত হয় মানুষ। আমরা চেষ্টা করি জানা মাত্র ব্যবস্থা নিতে। গ্রাহক অভিযোগ করলে সেটি যাচাই করে আমরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ব্যবস্থা নিতে বলি। তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের জানায়," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

যদিও সংস্থাটির কর্মকর্তারা কয়েকজন জানিয়েছেন আগে তারা বেশি অভিযোগ আগে পেতেন কলড্রপ নিয়ে কিন্তু এখন সেটি কমে এসেছে।

এখন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেটের গতি ও নানা প্যাকেজ মূল্য নিয়েই এখন বেশি অভিযোগ আসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থায়।

তবে কি পরিমাণ অভিযোগ প্রতিদিন আসে সে সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

গত বছর অক্টোবরে বিটিআরসি সব কোম্পানিকে নির্দেশনা দিয়েছিলো যে একই অপারেটরের দুটি মোবাইল নম্বরের মধ্যে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রাহকরা; আর কলড্রপের পরিমাণ জানতে পাবেন এসএমএসে।

যদিও এটি কতটা কার্যকর হয়েছে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

আবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেটওয়ার্ক নিয়ে অনেক সমস্যা থাকলেও শহরের বাইরে এসব সমস্যা সমাধানের দিকেও কোম্পানিগুলোর দৃষ্টি কম।

অপারেটররা প্রায়শই বলে থাকেন যে তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন করতে পারছে না। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক দুর্বল হবার পেছনে এটিকেও অন্যতম কারণ হিসেবে দেখান তারা।

এছাড়া বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মল এবং নানা স্থাপনার ভেতরে ভালো নেটওয়ার্কের জন্য 'ইন-বিল্ডিং সলিউশন' (আইবিএস) দরকার। কিন্তু সেটিও সম্ভব হচ্ছে না নানা বিধি-নিষেধের কারণে।

ফলে একই এলাকায় কোথাও নেটওয়ার্ক ভালো আবার কোথাও নেটওয়ার্ক খারাপ থাকছে।

বিটিআরসির হস্তক্ষেপে সম্প্রতি ইন্টারনেটের মেয়াদ বিহীন কিছু প্যাকেজও চালু করেছে কোম্পানিগুলো। কিন্তু সার্বিকভাবে মোবাইল ফোন সেবায় খুব বেশি উন্নতি তাতে হয়নি বলেই মনে করছেন অনেক গ্রাহক।

অথচ গত বছর মার্চে প্রায় সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকার তরঙ্গ কেনার পর কর্তৃপক্ষ ও কোম্পানিগুলো উভয়ের দিক থেকেই সেবার মান উন্নয়নের আশা দেখানো হয়েছিলো গ্রাহকদের। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।