News update
  • Dhaka’s mosquito menace out of control; frustration mounts     |     
  • 10-day National Pitha Festival begins at Shilpakala Academy     |     
  • Dhaka concerned at dwindling funds for Rohingyas     |     
  • Rohingya crisis in uncertainty; WASH sector faces challenges     |     
  • HRW delegation meets Commission of Inquiry on Disappearances     |     

ডিপসিক কী, কারা ব্যবহার করছে, এটি নিয়ে কেন এত আলোচনা 

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2025-01-29, 5:55pm

ertreytyrty-22c627b934d2821ba5cf8842b4318d0a1738151723.jpg




কয়েকদিন ধরে প্রযুক্তি-দুনিয়াতে আলোচিত এক নাম ডিপসিক। চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি ‘ডিপসিক এআই’ মডেল নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এটি মুক্তি পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাপল স্টোরের সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড করা ফ্রি অ্যাপের তালিকায় সবার উপরে উঠে এসেছে। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে চীন।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিক এআইয়ের কার্যক্ষমতা এরই মধ্যে চ্যাটজিপিটি, জেমিনি ও ক্লডের মতো বিভিন্ন এআই মডেলকে পেছনে ফেলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এই অ্যাপের হঠাৎই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এবং মার্কিন এআই কোম্পানিগুলোর সাথে ডিপসিকের খরচের পার্থক্য প্রযুক্তির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।

ডিপসিক কী? এর কাজই বা কী আর কারাই বা ব্যবহার করেন এই অ্যাপ? জানুন এই প্রতিবেদনে-

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ডিপসিকের কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাত কেঁপে উঠেছে, কারণ তারা দাবি করেছে, তাদের আর-১ মডেলটি তৈরি করতে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। যেখানে অন্যান্য এআই প্রতিষ্ঠানগুলো একই জিনিস তৈরিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। ডিপসিক এত কমে চ্যাটবট তৈরি করার পর এই খাতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া চ্যাটবটের ওপর মার্কিন ফার্মগুলো যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের কথা বলে আসছিল, সেটিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা মার্ক আন্দ্রিসেন ডিপসিককে এআই দুনিয়ার ‘অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

চ্যাটজিপিটির নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? ডিপসিক বলছে তাদের নতুন এআই মডেল চ্যাটজিপিটির সমকক্ষ। কিন্তু চ্যাটজিপিটির পেছনে যেই খরচ, সেই তুলনায় ডিপসিকের এআই মডেল তৈরিতে খরচ হয়েছে বহুগুণ কম। অ্যাপ তৈরির গবেষণা দলের তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপটি তৈরি করতে তাদের মাত্র ৬০ লাখ ডলার লেগেছে যা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এআই কোম্পানিগুলোর খরচ করা শতকোটি ডলারের তুলনায় রীতিমতো নগণ্য।

ডিপসিক কী?

ডিপসিক মূলত উন্নত এআই মডেল। চীনের হ্যাংজোভিত্তিক একটি গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে মডেলটি। ২০২৩ সালে গবেষণাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী লিয়াং ওয়েনফেং। ওপেন-সোর্সভিত্তিক এআই মডেলটির চ্যাটবট অ্যাপ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে উন্মুক্তের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে চ্যাটজিপিটির তুলনায় বেশিবার নামানো হয়েছে। আর তাই ডিপসিক এআই মডেলটি সিলিকনভ্যালিসহ এআই দুনিয়াকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।

জনপ্রিয় এই এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি।

ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং কে?

লিয়াং ওয়েনফেং ডিপসিকের সহ প্রতিষ্ঠাতা, যিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি হেজ ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করে ডিপসিক তৈরি করেন। চল্লিশ বছর বয়সী তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের গ্র্যাজুয়েট লিয়াং ওয়েনফেং মার্কিন প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ায় বিপুল সংখ্যক এ-১০০ চিপ জমা করছিলেন বলে বলা হয়। এই ধরনের চিপ বর্তমানে চীনে রপ্তানি করা বন্ধ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তার সংগ্রহে আনুমানিক ৫০ হাজার চিপ রয়েছে। আর এগুলোই তাকে ডিপসিক প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে। এধরনের চিপের সাথে অপেক্ষাকৃত কম দামী চিপ (যেগুলো এখনও চীনে রপ্তানি করা হয়) সংযুক্ত করে তিনি ডিপসিক তৈরি করেছেন বলে ধারণা করা হয়।

ডিপসিকের ব্যবহারকারী কারা?

অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর এবং ডিপসিকের ওয়েবসাইট থেকে কোম্পানির এআই অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। ফ্রি হওয়ায় অ্যাপটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অ্যাপল স্টোরের ডাউনলোড হওয়া শীর্ষ অ্যাপে পরিণত হয়েছে। যদিও কিছু মানুষ এমন রিপোর্ট করেছেন যে অ্যাপে সাইন আপ করতে তাদের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে সর্বোচ্চ রেটিংয়ের ফ্রি অ্যাপ হিসেবেও এটি নথিবদ্ধ হয়েছে।

ডিপসিকের কাজ কী?

মূলত শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট টুলের জন্যই ডিপসিক এত জনপ্রিয় হয়েছে। এর কার্যক্রম চ্যাটজিপিটির মতই। অ্যাপ স্টোরে দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী এটি তৈরি করা হয়েছে ‘আপনার কর্মদক্ষতা বাড়াতে এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে।’

অ্যাপের রেটিং দেওয়ার সময় ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করেছেন যে অ্যাপটি ‘লেখাকে আরও ভাবগম্ভীর করে তোলে।’

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চ্যাটবটটি কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করতে পারে। যেমন এই অ্যাপটিকে যখন বিবিসি জিজ্ঞেস করে যে ১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানানমেন স্কয়ারে কী হয়েছিল, তখন ডিপসিক উত্তর দেয়- ‘আমি দুঃখিত, আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমি একজন এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং আমাকে এমন উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে যা সহায়ক এবং ক্ষতিকর নয়।’

অর্থাৎ চীনা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন অ্যাপ হওয়ায় চীন যেসব বিষয়কে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মনে করে, সেসব বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে এই এআই চ্যাটবট শতভাগ সঠিক নাও হতে পারে।

ডিপসিকের কারণে এনভিডিয়ার মতো মার্কিন কোম্পানি কেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এআই অ্যাপগুলো তৈরিতে যে খরচ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম খরচে ডিপসিক তৈরি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। মার্কিন অ্যাপগুলোর তুলনায় কয়েকশো কোটি ডলার কম খরচ হয়েছে ডিপসিক তৈরি করতে। আর খরচের এই তারতম্যের কারণে এআইয়ের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের টিকে থাকা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।

ডিপসিকের অ্যাপ তৈরিতে কম খরচ হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছে পুঁজিবাজারে। গত ২৭ জানুয়ারি পুঁজিবাজারের হিসেব বদলে দিয়েছে অ্যাপটি।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চিপ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান ও ডেটা সেন্টারের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে বড় অঙ্কের পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়া, যারা এআই পরিচালনার জন্য শক্তিশালী চিপ তৈরি করে থাকে। সোমবার তাদের বাজার মূল্য কমেছে ৬০ হাজার কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনের হিসেবে কোনো একটি কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ।

বাজারে মূলধনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এতদিন পরিচিত ছিল এনভিডিয়া। কিন্তু সোমবার তাদের বাজার মূল্য ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ২.৯ ট্রিলিয়ান ডলারে নেমে আসলে তাদের অবস্থান মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের নিচে তৃতীয় স্থানে নেমে আসে।

ডিপসিক তাদের এআই’র জন্য এনভিডিয়ার তুলনায় অনেক কম দামী ও কম জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। আর তাই ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য বিশ্বের শীর্ষ এআই চিপ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে।

এতদিন সবাই মনে করত এআইকে উন্নত করতে অবশ্যই বড় বাজেট এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি চিপ প্রয়োজন। কিন্তু ডিপসিকের সাম্প্রতিক সাফল্য এই ধারণাকে এবং ভবিষ্যতে এআইয়ের বাজারকে বদলে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরটিভি