News update
  • Kitagawa, Robson and Yaghi win Nobel Prize in chemistry      |     
  • Bangladesh stocks extend losses for third day amid low turnover     |     
  • Landslide in north India hits bus, kills at least 15 people     |     
  • C’nawabganj’s betel leaf don’t fetch fair price for farmers     |     
  • Bhutan’s Tala Dam Overtopped after unprecedented rainfall     |     

ফোন স্ক্রলিংয়ের নেশা থেকে মুক্তির তিনটি পরামর্শ

বিবিসি নিউজ ওয়ার্ল্ড বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 2025-02-03, 8:00am

img_20250203_080109-685771d5badbb13186862d92ef50128e1738548087.png




একটা কুকরছানার ভিডিও, তারপর পুরনো এক বন্ধুর সমুদ্রপাড়ে তোলা ছবি, তারপর একটা ভিডিও মিম, তারপর একটা খবরের ভিডিও তাও পৃথিবীর অন্য প্রান্তের...

পছন্দ হলে দেখো, ভালো না লাগলে ‘পাস’ করে যাও।

স্ক্রিনজুড়ে আঙুল চালিয়ে যাওয়া আমাদের অনেকেরই দৈনন্দিন জীবনের অংশ। হয়তো লিফটে নামতে নামতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য কিংবা ঘুমোনোর আগে একবার হাতে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার।

কিন্তু, স্ক্রলিং এমন আসক্তিকর কেন? স্নায়ুর উপর এটা কী প্রভাব ফেলে? কীভাবে এই সমস্যা ঠেকানো যায়?

লিডস্ বেকেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার এইলিশ ডিউকের মতে, প্রথমে যেটা বুঝতে হবে, ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করা, তারপর স্ক্রলিং চালিয়ে যাওয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে একের পর এক ঘটে যায়।

আমরা ব্যাপারটা টেরও পাই না কারণ অনেক দিন ধরে এই অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে।

এটা অনেকটা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দরজা বন্ধ করার মতো।

“কয়েক বছর আগে আমরা একটা গবেষণা চালিয়েছিলাম। এতে অংশগ্রহণকারীদের ধারণা ছিল, তারা প্রতি ১৮ মিনিটে একবার করে তাদের ফোন চেক করেন। কিন্তু, স্ক্রিন রেকর্ডিং ব্যবহার করার পর দেখা যায়, আরো ঘন ঘন ফোন হাতে তুলে নেন তারা।”

স্ক্রিনের আলোটা জ্বলে ওঠার সাথে সাথেই, সেল ফোন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর অত্যাধুনিক ডিজাইন আর আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে একটা মেলবন্ধন রচিত হয় যেন, যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে তোলে।

এন ওয়াই ইউ ল্যাঙ্গনের সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক আরিয়েন লিং-এর মতে, স্ক্রলিং এর মতো অভ্যাসের জন্য আমরা মানুষের স্বভাবকে দায়ী করি বটে, কিন্তু পরিবেশগত কারণেও এই অভ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

সেই কারণেই মানুষ খবর পড়ে, রাস্তায় দুর্ঘটনা দেখলে থামে।

এটা বিবর্তনেরই অংশ, যার কারণে মানবজাতি টিকে আছে।

আর সেল ফোন নির্মাণই করা হয়েছে এমনভাবে যেন আমাদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করে যেতে পারে।

“ইট’স আ পারফেক্ট ম্যারেজ।” (যথাযথ সম্পর্ক)

অবিরাম সুখানুভূতির খোঁজে

আমাদের মস্তিষ্ক পুরস্কারপ্রিয়। স্নায়ুতন্ত্রের নির্দিষ্ট কিছু স্থানের কাজই যৌনতা, মাদক, জুয়ার মতো আনন্দের অনুভূতি নিয়ে। একবার তেমন সুখানুভূতি পেলে বারবার মস্তিষ্ক এটা পেতে চায়।

“আমরা যদি কিছু সত্যিই উপভোগ করে থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক সেই অভিনব অনুভূতিটা চায়, সেই সুখের অনুভূতি চায়,” ব্যাখ্যা করছিলেন অধ্যাপক ডিউক।

এটি মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম(পুরস্কার ব্যবস্থা) নামে পরিচিত। ঠিক এই প্রক্রিয়াটিই কোনও ব্যক্তিকে অ্যালকোহলের মতো দ্রব্যে আসক্ত করে তোলে।

“অনেকের ক্ষেত্রেই, ফোন তেমন অভিনবত্ব নিয়ে আসে।”

বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে সবসময়ই কিছু না কিছু সুখদায়ী উপাদান থাকে: একটি ছবি, ভিডিও, টুইট বা মেসেজ।

কিন্তু, মস্তিষ্কের আরেকটা অংশ আছে যে সুখানুভূতি এবং তাৎক্ষণিক পুরস্কারের এই প্রবণতা ঠেকাতে চায়। সামনের দিকের এই অংশের নাম প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স।

এই অংশটি আবেগপ্রবণতাকে রুখে দিয়ে, ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভূমিকা রাখে। এর কারণেই আপনি স্ক্রলিং থামাবেন কিংবা চেয়ারে অলস বসে না থেকে ঘরদোর পরিষ্কারের মতো কাজ শুরু করবেন।

এই যে মস্তিষ্কের দুই ধরনের ক্রিয়াকর্ম, এগুলোর মধ্যে সবসময় ভারসাম্য বজায় থাকে না।

অধ্যাপক ডিউকের ভাষ্য, যারা মোবাইল স্ক্রিনে ডুবে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে “মস্তিষ্কের যুক্তিনির্ভর অংশ যেটা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা ঠিকঠাক কাজ করে না। সুখানুভূতির আকাঙ্ক্ষায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।”

তরুণদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়।

“কিশোর-তরুণদের রিওয়ার্ড সার্কিট সবসময় প্রস্তুত হয়ে থাকে, যেন একটা সতর্কাবস্থা। কিন্তু, ২৩-২৪ বছরের আগে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অপরিণত অবস্থায় থাকে। ফলে, কিছু আবেগ সামাল দিতে পারে না। যেমন – ফোনের নেশা,” বলছিলেন অধ্যাপক এইলিশ ডিউক।

সময় জ্ঞানের বিলোপ

স্ক্রলিংয়ের সময় মানুষ একটা ফ্লো’র (প্রবাহ) মধ্যে ঢুকে যায় বলে মনে করেন অধ্যাপক ডিউক।

সাইকোলজিতে ‘ফ্লো’ বা ‘ফ্লো স্টেট’ বলতে এমন অবস্থা যখন কেউ কোনও কাজে পুরোপুরি মগ্ন হয়ে যেতে পারে।

টিকটকের মতো অ্যাপগুলোর অ্যালগরিদমে ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ব্যবহারকারীর আগ্রহ অনুযায়ীই তাতে কন্টেন্ট দেওয়া হয়। ফলে, তার মনোযোগ পুরোপুরি এতে নিবদ্ধ হয়ে পড়ে।

“ওরা আপনার পুরো মনোযোগটা কেড়ে নেবে। আর আপনি একটা সময়-জ্ঞানহীন দশায় পড়ে যাবেন। দুই ঘন্টা ধরে যে জড় পদার্থের মতো বসে আছেন, বুঝতেও পারবেন না। হয়তো কুকুরের ভিডিও দেখেই সময়টা অপচয় হয়ে গেছে,” যোগ করেন অধ্যাপক ডিউক।

মানুষ কীভাবে মস্তিষ্ক স্ক্রলিংয়ে তীব্রভাবে আসক্ত হতে শুরু করে, সেটা একটা রূপকের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ড. আরিয়েন লিং।

“কোনও পথে অনেকবার আসা-যাওয়া হলে, পথটা আমাদের কাছে সহজ হয়ে যায়। আমরা অনায়াসেই হেঁটে চলে যাই।”

“যদি কেউ টানা স্ক্রলিং করতে থাকে, ব্যাপারটা তার কাছে হয়ে যায় ‘ডিফল্ট এক্সপেরিয়েন্স’(অনায়াস অভিজ্ঞতা)। ফলে, অন্যদিকে সময় আর মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়,” যোগ করেন তিনি।

মনোরোগ বিজ্ঞানের রোগনির্ণয়ের বইয়ে, সেল ফোন আসক্তি বলে কিছু নেই। তাই, ফোনের কোন মাত্রার ব্যবহার স্বাস্থ্যসম্মত সেটারও কোনও মানদণ্ড নেই।

ব্যক্তির জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কিনা সেটা দিয়েই সীমারেখাটা মাপা হয় বলে জানাচ্ছেন অধ্যাপক ডিউক।

স্ক্রলিংয়ের আকর্ষণ এড়ানোর উপায়

১. নির্দিষ্ট সময় স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা

অধ্যাপক লিং বলেন, “ফোন থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা বেশ কাজে দেয়।”

ফোন ছাড়া হাঁটতে বের হওয়ার ব্যাপক উপকারিতা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অধ্যাপক ডিউকও একমত, “ফোনটা সরিয়ে রেখে একটা বিরতি নিতে পারলে দারুণ হয়। সেই সময়টা হাঁটতে কিংবা জিমে যেতে পারেন।”

২. বাস্তব দুনিয়ায় মিথস্ক্রিয়া বাড়ানো

ফোন দিয়ে করা হয় এমন কাজগুলো ফোন ছাড়াই করার চেষ্টা করলে, স্ক্রলিং অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর উপায়ে করা সম্ভব।

এইলিশ ডিউক বলেন, “কয়েক বছর আগে এক গবেষণায় আমরা দেখেছি, যারা সাধারণ ঘড়ি পরেন আর যারা সেল ফোনে সময় দেখেন তাদের মধ্যে বিস্তর ফারাক।”

অনিচ্ছায় হলেও যারা সেল ফোনে সময় দেখেন, তারা স্ক্রলিংয়ে আটকে পড়েন।

যেমন – “কিছু একটা পড়ার সময় অনলাইনে না থেকে যদি পড়া যায়, সেটা অসাধারণ ব্যাপার।”

৩. গতিপথ পরিবর্তন করা

কোনও অ্যাপে ঢোকা বা সেটা ব্যবহারের সময় কি আমরা ভাবি কেন এটা করছি?

এসব ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে পারলে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

“ফোন হাতে নেওয়ার তাড়না অনেকটা ক্ষুধার মতো। আপনি বুঝতে পারেন যে খিদেটা পেয়েছে। মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে, “ অনেকক্ষণ হলো ডোপামিন নিঃসরণ হয়নি, চলো শুরু করা যাক।” তারপর খিদেটা ঢেউয়ের মতো বাড়তে পারে,” বলেন ড. লিং।

“কিন্তু, আপনি সেই তাড়নাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। নিজেকে বলতে পারেন, বুঝতে পারছি ফোনটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু, না দেখলেও তো পারি।”