News update
  • AC Tabassum Urmi sacked over anti- govt Facebook posts     |     
  • Bangladeshi killed in BSF firing at Chuadanga border      |     
  • Rains Fuel Disasters in 83pc of Brazilian Cities: Report     |     
  • Hamas ready and serious to reach an accord if it ends war     |     
  • Paradise lost: Cox’s Bazar tourists shocked by wastes at sea     |     

জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে নিজের ৬৩ স্ত্রীকে হত্যা করেছিল যে মুসলিম সেনাপতি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-05-29, 1:40pm

sakdjkasjajl-ff273f2abdd9df39a2570a2630ca85fd1716968409.jpg




বেদির ওপর সাত সারি কবর। এরম ধ্যে প্রথম চার সারিতে রয়েছে ১১টি, পঞ্চম সারিতে পাঁচটি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম সারিতে সাতটি। কবরের মোট সংখ্যা ৬৩টি। দূরত্ব, আকার আর নকশার মিল দেখে মনে হয় এগুলো একই সময়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

এছাড়াও সমতল উপরিভাগ দেখেই বোঝা যায় এই সব কবর নারীদের।

অনেকগুলো কবর থাকা সত্ত্বেও ‘ষাট কবর’ নামে পরিচিত এই 'ডার্ক ট্যুরিস্ট স্পট’ (গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু দুঃখজনক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনার স্থান) ভারতের কর্ণাটকের বিজাপুরে অবস্থিত। শহরটি ১৬৬৮ সাল পর্যন্ত আদিল শাহী শাসকদের অধীনে ছিল।

এই সাম্রাজ্যের সেনাপতি আফজাল খান বিজাপুরকে দক্ষিণ দিকে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

মারাঠা যোদ্ধারা শিবাজীকে মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে ১৬৫৯ সালে বিজাপুরের তৎকালীন সুলতান দ্বিতীয় আলি আদিল শাহ তাদের শায়েস্তা করার জন্য তার সেনাপতি আফজাল খানকে পাঠান।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ভারতের প্রত্মতাত্ত্বিক সংস্থা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে কাজ করা স্কটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হেনরি কাজিন্সের মতে, জ্যোতিষীরা আফজাল খানকে বলেছিলেন যে তিনি অভিযান থেকে জীবিত ফিরবেন না।

কাজিন্স তার লেখা বই ‘বিজাপুর: দ্যা ওল্ড ক্যাপিটাল অফ দ্যা আদিল শাহ কিংস'-এ বলেছেন, আফজাল খান এই ভবিষ্যদ্বাণীতে এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি সেই অনুযায়ী পরবর্তী সব সিদ্ধান্ত নেন।

১৯০৫ সালে মুদ্রিত এই বইটিতে লেখা আছে যে, ‘ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি (আফজাল খান) তার জীবদ্দশায় নিজ সমাধি (নিজ প্রাসাদের কাছে) এবং এর সাথে সংযুক্ত মসজিদ তৈরি করেন।’

জানা যায়, ১৬৫৩ সালে এই দোতলা মসজিদটির কাজ শেষ হয়। (ধারণা করা হয় উপরের তলাটি নারীর জন্য সংরক্ষিত ছিল)। এর শিলালিপিতে আফজাল খানের নামের সাথে নির্মাণের তারিখটিও লিপিবদ্ধ আছে।

যদিও যখন তাকে শিবাজীর বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তখনও সমাধির কাজ শেষ হয়নি।

‘স্ত্রীদের ডুবিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত’

এই ভবিষ্যদ্বাণীতে আফজাল খান এতটাই প্রভাবিত হয়েছিল যে তিনি সমাধির পাথরে তার প্রস্থানের তারিখটিকেই নিজের মৃত্যুর তারিখ হিসেবে লিখে যান। তার কারণেই বিজাপুর ত্যাগ করার সময় তিনি এবং তার বন্ধুরা ধরে নিয়েছিলেন যে তিনি আর কখনও সেখানে ফিরবেন না।

“এ কারণেই তিনি স্ত্রীদের ডুবিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন”।

ইতিহাসবিদ লাক্সমি শারাথ 'দ্য হিন্দু' নামের একটি ভারতীয় পত্রিকায় লিখেছেন যে আফজাল খান তার সব স্ত্রীকে একে একে কূপে ফেলে দেন যাতে তারা যুদ্ধে মারা যাওয়ার পরে শত্রুদের হাতে না পড়ে।

“তার স্ত্রীদের মধ্যে একজন পালানোর চেষ্টা করেও ধরা পড়ে এবং নিহত হয়।”

কিন্তু হেনরি কাজিন্সের মতে, ৬৩ জন নারীর কবর ছাড়াও কম্পাউন্ডের একটি কবর খালি রয়েছে। ‘সম্ভবত দু-একজন নারী বেঁচে গিয়েছিলেন আর খালি কবর সেটাই ইঙ্গিত করে।’

ইতিহাসবিদ জাদওয়ানাথ সরকারের মতে, আফজাল খানের এই প্রাণঘাতী অভিযানের অনেক কাহিনী পরবর্তী বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এগুলোর একটি ছিল এমন- শিবাজীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার আগে একজন জ্যোতিষী আফজাল খানের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করে। তাই তিনি বিজাপুরের কাছে আফজালপুরায় তার ৬৩ জন স্ত্রীকে হত্যা করে কবর দেন, যাতে তার মৃত্যুর পর অন্য কোনো পুরুষ তাদের না পায়।

মুহাম্মদ আনিসুর রহমান খানের গবেষণা অনুযায়ী, ভারতের বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের বিজাপুর শহরের আল-আমিন মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি বন ও মরুভূমির মাঝের একটি জায়গায় প্রাচীর ঘেরা পুরানো ভবনের মধ্যে থাকা বেদিতে সাত সারিতে একই রকম অনেকগুলো কবর রয়েছে। এটি ‘ষাট কবর’ নামে পরিচিত।

আরও জানা যায়, এই ৬০টি কবরই আফজাল খানের স্ত্রীদের, যাদের তিনি শিবাজীর সাথে যুদ্ধের আগে নিজ হাতে তাদের হত্যা করেছিলেন যেন মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদের অন্য কেউ বিয়ে কিংবা বন্দি করে অসম্মান করতে না পারে।

'স্ত্রীদের পাশে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন আফজাল খান'

মুহম্মদ শাইক ইকবাল চিশতীর বরাত দিয়ে আনিসুর রহমান খান লিখেছেন, জনশ্রুতি আছে যে সেখানে ৬০টি কবর রয়েছে। তবে আসলে কবর আছে ৬৪টি।

এগুলোর মধ্যে একটি কবর মাটির সঙ্গে মিশে গেলেও এর স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।

‘গঠন দেখে বোঝা যায় এখানকার সব কবরই নারীদের।’

তিনি লিখেছেন, “এই সমাধিস্থলটি হয়তো রাজপরিবারের নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। আদিল শাহী শাসনকালটি জ্ঞানচর্চার দিক থেকে স্বর্ণযুগ ছিল আর রাজাদের আমলে সাম্রাজ্যের জন্য যুদ্ধ করাও একটি সাধারণ বিষয় ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে সেই আমলের একজন যোদ্ধা কী করে অজ্ঞতায় ভরা এমন কাপুরুষোচিত পদক্ষেপ নিতে পারে?”

তবে লাক্সমি শারাথের মতো পর্যটকরা এই সমাধিগুলো নিয়ে প্রচলিত গল্প বিশ্বাস করেন।

তিনি লিখেছেন, কালো পাথরে তৈরি এই কবরগুলো সারিবদ্ধ। কোনো কোনোটির পাথর ভাঙা। মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া নারীদের শেষ চিৎকারের প্রতিধ্বনি নিয়ে এখানকার নীরবতাও ভয়ঙ্কর। আমি শিহরণ বোধ করছি।

তিনি আরও লিখেছেন, “আপাতদৃষ্টিতে আফজাল খান তার স্ত্রীদের পাশে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি কখনোই যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরতে পারেননি।”

কাজিন্সের মতে, আফজাল খানের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের উত্তরে অবস্থিত। তার সমাধিটি খালিই রয়ে গেছে।

তিনি লিখেছেন, “আফজাল খানকে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল তার কাছেই প্রতাবগড়ের ঢালে তাকে সমাহিত করা হয়। দাফনের জন্য তার লাশ আর সমাধিতে স্থানান্তর করা হয়নি।”বিবিসি বাংলা