News update
  • OIC Condemns Ecuador’s Opening of a Diplomatic Office in Al-Quds     |     
  • No escape, death follows families in Gaza wherever they go     |     
  • Armed forces' magistracy powers extended by 60 days     |     
  • Hamid's departure: Body formed, Kishoreganj SP withdrawn     |     
  • The Taliban Took Everything – Even My Hope     |     

পেট ব্যথা কেন হয়?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক স্বাস্থ্য 2024-05-29, 1:07pm

retetewt-56683917ac51110a561abadfea1ac6751716966449.jpg




স্কুল ফাঁকি দিতে পেট ব্যথার অজুহাত তো আমরা মোটামুটি অনেকেই দিয়েছি। কিন্তু সত্যি সত্যি পেট ব্যথায় ভুগিনি- এমনটাও নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেট ব্যথাকে আমরা পাত্তা দেই না। কারণ কিছুক্ষণ বা কিছুদিন পর এটি অনেক ক্ষেত্রে নিজ থেকেই চলে যায়।

পেটের ব্যথা নানা ধরনের হয়ে থাকে। কিছু ব্যথা আছে যেগুলো হঠাৎ করে শুরু হয় এবং একটু পর ভাল হয়ে যায়। এই ব্যথা খুব তীব্র হয় না।

আবার কিছু ব্যথা আছে হঠাৎ করে শুরু হলেও বেশ তীব্র ও কষ্টদায়ক হয়।

আর কিছু ব্যথা একবার শুরু হলে সেটা সহজে ভালো হয় না বা বিরতি দিয়ে চলতে থাকে।

পেটব্যথা কী?

যুক্তরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, পেট হল পাঁজর ও শ্রোণির (পেলভিস) মধ্যবর্তী জায়গা। এই জায়গাটা হল আমাদের পাকস্থলী, যকৃত, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রের বাড়ি। এগুলোকে একসাথে পাচনতন্ত্র বলা হয়।

এইসব অঙ্গের কোথাও যদি সামান্যতম অস্বস্তিও হয়, তাহলেই আমরা পেটে ব্যথা অনুভব করি।

যদিও, পেটে ব্যথা হলেই আমাদের দেশে ধরে নেয়া হয়, এটা হয়ত আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা।

কিন্তু পেটে গ্যাস হওয়ার কারণেই যে শুধু পেটব্যথা হয়, বিষয়টা কিন্তু মোটেও তেমন না। পেটে ব্যথা পাচনতন্ত্রের যে কোনও অঙ্গ থেকে হতে পারে।

আলাদা ধরনের পেট ব্যথার কারণও ভিন্ন হয়।

হঠাৎ করে পেট ব্যথা ও ঢেকুর

সাধারণত পেটে বাতাস আটকে যাওয়ার কারণে পেট সাময়িক ব্যথা করতে পারে। একই সাথে ঢেকুরও উঠতে পারে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যদি আপনার ঢেকুর হয় এবং একই সাথে প্রচুর পরিমাণে বায়ু নির্গমন হতে থাকে তাহলে এমন পেট ব্যথার কারণ হতে পারে পেটে আটকে পড়া বাতাস।

পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া

যদি ডায়রিয়ার সাথে পেট ব্যথা থাকে তার মানে হচ্ছে গ্যাসট্রোএনটারাইটিস বা পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহে এমনটা হয়েছে। সাধারণত পাকস্থলী ও অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণে এই অবস্থা হয়। চিকিৎসা ছাড়াও এটি কয়েক দিন পর ভাল হয়ে যেতে পারে।

গ্যাসট্রোএনটারাইটিসে আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এলে বা জীবাণু সমৃদ্ধ খাবার খেলে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

যদি পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া বার বার হয় তাহলে সেটি আবার ইরিটেবেল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস'র উপসর্গ হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়া পেট ভর্তি অনুভূত হওয়া, খাওয়ার পর ঢেকুর, বুক জ্বালাপোড়া, অসুস্থবোধ করলে বুঝতে হবে বদহজমের কারণে হচ্ছে। আর পাতলা পায়খানা, অসুস্থতা, বমি এগুলো পাকস্থলীতে জীবাণুর সংক্রমণ বা খাদ্য বিষক্রিয়ার লক্ষণ হতে পারে।

হঠাৎ তীব্র পেট ব্যথা

পেটের কোনও অংশে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা গুরুতর সমস্যা ডেকে আনতে পারে। চিকিৎসা নেয়া না হলে এটি খারাপ থেকে খারাপতর হতে পারে।

যদি আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেটির পরীক্ষা দ্রুত করে ফেলতে হবে।

পেটে তীব্র ব্যথা যে কারণে হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে:

১. অ্যাপেনডিসাইটিস

বেশিরভাগ মানুষ অ্যাপেডিসাইটিসে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করেই তীব্র পেট ব্যথা দেখা দেয়। সাধারণত ডান পাশের পেটের নিচের দিকে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন ভার্জিনিয়া মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া এল রেমন্ড বলেন, পা ভাঁজ করলে ব্যথা অনুভূত হয় কারণ এতে অ্যাপেনডিক্সের পাশে থাকা একটি পেশিতে টান পড়ে। এ ধরনের ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২. গ্যাসট্রাইটিস

গ্যাসট্রাইটিসের কারণেও পেটে ব্যথা হয়। এছাড়া বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে। চিকিৎসা করানো না হলে এর ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার ও রক্তপাত হতে পারে। অ্যালকোহল পান, ধূমপান, হেলিকোব্যাকটর পাইলরি ব্যাকটেরিয়াসহ নানা কারণে গ্যাসট্রাইটিস হতে পারে।

৩. কিডনিতে পাথর

কিডনিতে হওয়া পাথর যখন মূত্রনালীতে চলাচল করে তখন পেটে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত পিঠের নিচের দিকে এই ব্যথা শুরু হয় এবং এটি তলপেটে ছড়িয়ে পড়ে। কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ হচ্ছে, মূত্রের সঙ্গে রক্ত পড়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, জ্বর, মূত্র ঘোলাটে ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া এবং বমি হওয়া।

৪. ওষুধ সেবন

অনেক সময় অন্য রোগের ওষুধ সেবনের কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, মাদক প্রতিরোধী ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া প্রতিরোধের ওষুধ গ্রহণের কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে।

৫. জীবাণুর আক্রমণ

প্যারাসাইট বা জীবাণু ও কৃমি যদি পেটে চলে যায় তাহলে পেট ব্যথা হতে পারে। দূষিত পানীয় ও পানি পান বা এতে সাঁতার কাটার কারণে এই জীবাণু পেটে চলে যেতে পারে। এ ধরনের জীবাণুর আক্রমণে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে। সাধারণত দুই থেকে ১০ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। প্রচুর পরিমাণে তরল ও সাধারণ কিছু ওষুধ খেলে এটি ভালও হয়ে যায়।

৬. পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিস বা পিআইডি বা প্রদাহজনিত রোগ

ফ্যালোপিয়ান টিউব, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পেটে প্রদাহজনিত রোগ দেখা দেয়। এর ফলে নাভির নিচে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। যৌন সংক্রমিত রোগ বা এসটিডি যেমন গনোরিয়ার কারণে এই প্রদাহ দেখা দেয়।

৭. মানসিক চাপ

মানসিক চাপের কারণে পেট ব্যথা, মাথাব্যথা, উচ্চরক্তচাপ ও ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া বদহজম, ব্যথা ও ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস’র মতো রোগ দেখা দিতে পারে।

৮. আলসার

পেটে ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হচ্ছে পেপটিক আলসার। এর কারণে পেটের উপরের দিকে মাঝ বরাবর ব্যথা হয়। সাধারণত খাওয়ার পরপরই এই ব্যথা শুরু হয়।

৯. ত্রুটিযুক্ত গর্ভধারণ

যখন গর্ভাশয়ের বাইরে কোনও নিষিক্ত ডিম্বাণু বিকশিত হতে শুরু করে তখন তাকে একটোপিক প্রেগন্যান্সি বা ত্রুটিযুক্ত গর্ভধারণ বলা হয়। এর চিকিৎসা না করানো হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী বা বার বার ফিরে আসা পেট ব্যথা

দীর্ঘদিন ধরে যদি বার বার পেট ব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ধরণের পেটব্যথার পেছনে সাধারণত জটিল কারণ থাকে না এবং সেগুলো চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে উঠা সম্ভব।

এই পেট ব্যথার কারণ হতে পারে, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস। সাধারণত টয়লেটে গেলে এই ব্যথা শুরু হয়।

এছাড়া পেটে প্রদাহজনিত রোগ এবং মূত্রনালীতে সংক্রমণের জন্য পেট ব্যথা হতে পারে। মূত্রনালীতে সংক্রমণ হলে বার বার পেট ব্যথা হয় এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে।

কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের কারণেও দীর্ঘস্থায়ী পেট ব্যথা বা বার বার পেট ব্যথা হতে পারে। পেটব্যথার সাথে মলত্যাগ না হওয়ার লক্ষণ থাকলে সেটি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের লক্ষণ।

নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় পেট ব্যথা হতে পারে। এছাড়া পাকস্থলীর আলসার, বুক জ্বালাপোড়া ও পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণের কারণেও পেট ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘ দিন ধরে বার বার পেট ব্যথার একটি সাধারণ কারণ গ্যাসট্রাইটিস বা পাকস্থলীর প্রদাহ।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

পেট ব্যথার সাথে নিচের উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

পেট ব্যথা যদি দ্রুত বাড়তে থাকে

পেট ব্যথা বা ঢেকুর তোলা থামছে না এবং একটু পর পর আবার শুরু হচ্ছে

পেট ব্যথার সাথে খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে

চেষ্টা না করেও ওজন কমছে

বার বার প্রস্রাব হচ্ছে কিংবা একেবারেই প্রস্রাব হচ্ছে না

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হচ্ছে

মলদ্বার বা মূত্রনালী থেকে রক্তপাত হচ্ছে বা অস্বাভাবিকভাবে অন্য কোনও তরল নির্গত হচ্ছে

ছবির ক্যাপশান,যে কোনও বয়সীদের হঠাৎ করেই পেট ব্যথা হতে পারে।

কখন জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যাবেন?

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য বলছে, পেট ব্যথার সাথে যদি নিচের লক্ষণগুলোও থাকে তাহলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে:

হঠাৎ করে পেট ব্যথা শুরু হওয়ার পর সেটা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে

পেটে স্পর্শ করলেই ব্যথা অনুভব হলে

রক্ত বমি শুরু হলে বা বমির রঙ কফির মতো হলে

মলের সাথে রক্ত পড়লে বা মলের রঙ কালো, আঠালো ও তীব্র দুর্গন্ধ হলে

প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে

মলত্যাগ বা বায়ু নির্গমন বন্ধ হয়ে গেলে

নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলে বা শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে

বুকের ব্যথা শুরু হলে

ডায়াবেটিস থাকলে এবং বমি শুরু হলে

অজ্ঞান হয়ে গেলে 

বিবিসি নিউজ বাংলা