News update
  • OIC Condemns Ecuador’s Opening of a Diplomatic Office in Al-Quds     |     
  • No escape, death follows families in Gaza wherever they go     |     
  • Armed forces' magistracy powers extended by 60 days     |     
  • Hamid's departure: Body formed, Kishoreganj SP withdrawn     |     
  • The Taliban Took Everything – Even My Hope     |     

একটা হ্যান্ডব্যাগ যেভাবে নাড়িয়ে দিল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-12-06, 9:22pm

qwejqwejij-729f02efca3f894f8471f05ccadcd9a91733498541.jpg




দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপিন্সে ১৯৮৬ সালে এক গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোস যখন ক্ষমতাচ্যুত হন, তখন তিনি ও তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের বিলাসী জীবনযাপন আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। বিশেষ করে ইমেলদার কয়েক হাজার জোড়া জুতো এবং নামিদামি ব্রান্ডের ৮৮৮টি হ্যান্ডব্যাগের কথা।

প্রায় তিন যুগ পর একই অঞ্চলের আরেকটি দেশের ফার্স্ট লেডির একটি হ্যান্ডব্যাগের কথা আলোচনায় উঠে এসেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দেশে আকস্মিক সামরিক আইন জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। 

তবে বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে পিছু হটেন ক্ষমতাসীন দল পিপল পাওয়ার পার্টির এ নেতা। পার্লামেন্টে এক ভোটাভুটিতে ৩০০ এমপির মধ্যে ১৯০ জনই সামরিক আইনে বিপক্ষে ভোট দেন। যা মানতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।

সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিতর্কিত সামরিক আইন জারির কারণে প্রেসিডেন্ট ইউনের অভিশংসন তথা ক্ষমতাচ্যুতির জন্য জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ কিংবা আগামীকাল হতে পারে অভিশংসন ভোট। সবমিলিয়ে বড় একটা সংকটের মুখে ইউনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।

প্রশ্ন হল- সামরিক আইন জারিই কি তার এই সংকটের কারণ? উত্তর, নিশ্চিতভাবেই তা নয়। সামরিক আইন জারিসহ আরও বেশ কয়েকটি ভুলের কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বলা হচ্ছে, যেসব ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইউনের জনসমর্থন দ্রুত কমে গেছে এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে একটা প্রচণ্ড জনরোষ তৈরি হয়েছে তার অন্যতম বড় কারণ নামিদামি কোম্পানির একটা হ্যান্ডব্যাগ। যেটা ফার্স্ট লেডি কিম কিওন হিকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছিল।

যদিও ঘটনাটি ২০২২ সালে ঘটেছিল। তবে এটা প্রথম স্পটলাইটে আসে ২০২৩ সালের নভেম্বরে। এবং চলতি বছর তা একটি রাজনৈতিক ঝড়ের সৃষ্টি করল।

যদিও এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয় আইনজীবীরা ফার্স্ট লেডি কিমকে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। তবে বিরোধী দলগুলো এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রীকে ছাড় দেননি। তারা ঠিকই বিষয়টি সামনে এনেছেন এবং বলেছেন, বিলাসবহুল ব্যাগটি ঘুষ হিসাবে দেয়া হয়েছিল এবং বিষয়টি স্বাধীন তদন্তের দাবি রাখে।

ইউন ও ফার্স্ট লেডি উভয়ই বরাবরের মতোই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন যে, ব্যাগটা ‘উপহার’ দেয়া হয়েছিল এবং তাদের অসম্মান ও অপদস্থ করার জন্য ‘কৌশল’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এসব ঘটনার শুরু হয় একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে। যা ধারণ করেছিলেন চোই জায়ে-ইয়ং নামে একজন যাজক। গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে ডিওর ব্র্যান্ডের একটা হ্যান্ডব্যাগ দেখা যায়। যার দাম ৩০ লাখ ওন। ডলারে যা প্রায় ২ হাজার ২২৫ আর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা।

যাজক চোই কিমকে ব্যাগটি উপহার দিয়েছিলেন এবং নিজেই ভিডিওটি ধারণ করেন। হাতঘড়িতে গোপনে সেট করা ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, কোনো একটি অফিসে যাজক চোই হেঁটে গিয়ে কিমকে একটি শপিং ব্যাগ দিচ্ছেন। ব্যাগটাকে ডিওর ব্রান্ডের বলে মনে হয়।

যাজক চোই যখন হ্যান্ডব্যাগটি দিচ্ছিলেন তখন ফার্স্ট লেডি ভদ্রতা করে বলতে শোনা যায়: ‘আপনি কেন এগুলো আনতে গেলেন? এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আর কখনও এমন দামি জিনিস কিনবেন না। 

গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ইউনের নীতির কঠোর সমালোচক একটি বামপন্থি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও ক্লিপটি প্রকাশ করা হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই এটি ব্যাপক বিতর্ক উসকে দেয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারি কর্মকর্তারা উপহার হিসেবে কোনো দামি জিনিস নিতে পারেন না।

ওই ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর ফার্স্ট লেডির বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক কাজে’র অভিযোগ ওঠে। কোরীয় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। প্রচণ্ড বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে চলতি বছরের জুলাইয়ে এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট পত্নীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি কিংবা তিনি কোনো সাজার মুখে পড়েননি।

কিম সাজা না পেলেও আরও বড় সাজার মুখে তিনি ও তার স্বামী। এ হ্যান্ডব্যাগ-কাণ্ডই দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ডেকে এনেছে। আইনের অধ্যাপক চো হি-কিউং সিএনএনকে বলেছেন, ‘ডিওর ব্যাগটি হলো প্রবাদের সেই সুই, যা উটের পিঠ ভেঙে দিয়েছিল।’

ইউনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই নানা বিতর্ক শুরু হয় কিমকে নিয়ে। যদিও ডিওর ব্যাগটি তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী দৃশ্যমান প্রমাণ বলে মনে করেন অধ্যাপক চো। স্ত্রীর ব্যাগ-কাণ্ডের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া তথা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা প্রেসিডেন্ট ইউনের বিপদ বাড়িয়েছে।

যদিও নিজের ক্যারিয়ার বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে চেলেছেন ইউন। সামরিক আইন জারি করায় তোপের মুখে পড়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউনকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরপর নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন চৌ বাইয়ুং-হাইউক। 

এরপরও ইউনের বিপদ কাটছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক কিম জুনিল বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা এখন হুমকির মুখে।’ প্রেসিডেন্ট ইউন কি অভিশংসনের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারবেন, নাকি তার সময় ফুরিয়ে এসেছে তা আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। সময় সংবাদ