News update
  • UNRWA Report no. 104 on situation in Gaza Strip & West Bank     |     
  • UN closes case on alleged staff collusion in 7 Oct attacks     |     
  • BNP expels 3 more leaders for contesting first phase of UZ polls     |     
  • “Voting centres where fake votes are cast will be shut immediately”      |     
  • Three dead in Israeli strikes on south Lebanon: report     |     

ডিসেম্বরে রফতানি আয়ে রেকর্ড হলেও পূরণ হয়নি টার্গেট

বিশেষ প্রতিনিধি ব্যবসায় 2023-01-02, 8:04pm

export-b2507468f95156358fa490fd543ad2f01672668290.jpg




বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন মন্দার শঙ্কা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন চাপে, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে যখন ভাটার টান, সে সময়ে চমকের পর চমক দেখিয়ে স্বস্তি দিচ্ছে রফতানি বাণিজ্য। নভেম্বরে প্রথমবারের মতো এক মাসে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করার পরের মাস ডিসেম্বর দিল আরও লাফ। তাই বিদায় নেয়া ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক মাসে সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে মোট রফতানি হয়েছে ৫৩৬ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা। তবে আয়ে রেকর্ড হলেও ডিসেম্বরের জন্য নির্ধারিত ৫৪২ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তার চেয়ে কম হয়েছে ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা ছিল ৪৯০ কোটি ডলার। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যা ছিল যথাক্রমে ৩৯১ ও ৪৩৬ কোটি ডলার।  এছাড়া, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের ৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন থেকে ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে, গত মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৪৬৭ কোটি ডলার। 

বাংলাদেশের পোশাক প্র¯‘ত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, কাঁচামালের দাম বাড়ার পর ডিসেম্বরে পোশাক পণ্যের ইউনিট প্রতি দাম বেশি পাওয়ায় এবং উ”চমানের পণ্য রফতানি বাড়ায় ডিসেম্বরে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা গেছে। 

ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বর্তমানে পোশাক প্র¯‘তকারকরা ৪০ ডলারের বেশি দামে একটি জ্যাকেট রফতানি করছেন, এর আগে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সাধারণত ৩০ ডলারের বেশি দামের জ্যাকেটের অর্ডার পেতেন না। নন-কটন আইটেম উৎপাদনে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা এখন নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছেন বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

আর কটন বা তুলার তৈরি পোশাক পণ্যের চেয়ে নন-কটন আইটেমের দামও বেশি। ‘ম্যান মেইড’ বা কৃত্রিম তš‘-ভিত্তিক এসব গার্মেন্ট আইটেমে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বর্তমানে ম্যান মেইড ফাইবারের জন্য কোনো বিশেষ নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে না।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো বা ইপিবি গতকাল সোমবার রফতানি আয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০২২ সালের শেষ মাসে রফতানি আয় এসেছে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এই অঙ্ক গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। আগের মাস নভেম্বরে গড়ে রেকর্ড। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো মাসে রেকর্ড গড়ে রফতানি হয় ৫ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। সেই রেকর্ড ভেঙে গেল এক মাস পরই। 

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২ হাজার ৭৩১ কোটি ১২ লাখ (২৭ দশমিক ৩১বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন দেশের বিভিন্ন খাতের রফতানিকারকরা। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ২৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ২২ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাত থেকে আয় বেশি এসেছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। হিসাবে দেখা যাচ্ছে এই বছরে মোট রফতানি আয়ের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। যার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। লক্ষ্যে চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৪ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, অন্যান্য খাতের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য বড় খাতগুলোর মধ্যে শুধু চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই খাত থেকে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৬৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। অন্যান্য খাতের মধ্যে এই ছয় মাসে হোম টেক্সটাইল রফতানি কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। কৃষিপণ্য রফতানি কমেছে ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রফতানি থেকে আয় কমেছে ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ওষুধ রফতানি থেকে আয় কমেছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রফতানি থেকে ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বাইসাইকেল রফতানি থেকে আয় কমেছে ৬ শতাংশ। হ্যান্ডিক্যাফট থেকে কমেছে ৩০ শতাংশের বেশি। 

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটা খুবই ভালো খবর, এই কঠিন সময়ে পর পর দুই মাস ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি আয় দেশে এসেছে। আগামী দিনগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং নতুন করে করোনা দেখা দেয়ায় চীনের অনেক রফতানি আদেশ বাংলাদেশে আসছে। ভিয়েতনাম থেকেও কিছু অর্ডর আসছে। আর বাংলাদেশ কম দামি অতি প্রয়োজনীয় পোশাক বেশি রফতানি করে। সে জন্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকা-ইউরোপের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমলেও অতি প্রয়োজনীয় পোশাক তাদের কিনতেই হবে।

তিনি বলেন মোটামুটি ভালো একটা প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্সও বেড়েছে। আইএমএফের প্রথম কিস্তির ঋণটাও ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া যাবে। বিশ্বব্যাংক-এডিবির বাজেট সহায়তাও দ্রুত পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে রিজার্ভের উপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা আর থাকবে না। করোনার মতো এই সঙ্কটও মোকাবিলা করতে পারবে বাংলাদেশ।