দেশের অনেক দুর্বল ব্যাংক ভুগছে তারল্য সংকটে। গণহারে আর্থিক সুবিধা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের টিকিয়ে রাখছে। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর বাড়তি চাপ বেড়েই চলছে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
রোববার (২৮ এপ্রিল) ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় দেশের অর্থনৈতিক খাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
সভায় প্যানেলভিত্তিক আলোচনায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের কথা উঠছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যে ১০টি ব্যাংক একীভূত করা হবে, তাদের খেলাপির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও মূলধন ঘাটতি ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এই ৮৪ হাজার কোটি টাকার গড়মিল এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘাড়ের ওপর, যা আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
সভায় পিআরআই'র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হওয়ার কথা ছিল শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু অবস্থা এমন হয়েছে, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো চাইলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা দিয়ে দেয়। তারল্য সংকট কেন হলো, এই জবাবদিহিতায় না গিয়ে দেদারসে অর্থ সাহায্য দেশের ব্যাংকিং খাতকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপানো প্রসঙ্গে আশিক বলেন, আগে দেশের রিজার্ভ বেশি ছিল, তাই যেকোনো সংকটে টাকা ছাপিয়ে সামাল দেয়া গেছে। টাকা ছাপিয়ে অর্থনীতি সামাল দেয়া কোনো সমাধান না। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে টাকা ছাপিয়ে অর্থনীতি সামাল দেয়া আর সম্ভব না।
মনসুর বলেন, সরকার এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে ঋণ নিচ্ছিল। এ নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানালো, তারা আর সরকারকে ঋণ দিবে না। দেখা গেছে, ব্যাংকের ডিপোজিট হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকা, সরকারি ঋণের পরিমাণও দেড় লাখ কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতকে দুর্বল করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে সরাসরি ঋণ না দিয়ে প্রাইভেট ব্যাংককে অর্থ সহায়তা করছে। সেখান থেকে সরকার বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে। এতে করে ঘুরেফিরে ক্ষতি সেই দেশের অর্থনীতিরই হচ্ছে।
অর্থনীতির দিক থেকে বাংলাদেশ এখন রেড জোনে না হলেও ইয়োলো জোনে আছে উল্লেখ করে আশিক বলেন, বাজেটের আকার বড় হলেই হবে না, বাজেট ঘাটতি এবার যাতে কোনোভাবেই জিডিপির ২-৩ শতাংশের বেশি না হয় সেদিকে সর্বাত্মক নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। সময় সংবাদ।