১৯৮৯ সালে চীনের সেনাবাহিনী তিয়ানানমেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের কঠোর ভাবে দমনের পর দেশটি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। দেশটিকে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে এক দশকের বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জনের যাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়ায়ং জেমিন আজ মারা গেছেন। তার বয়স ছিল ৯৬।
জিয়াং ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ১ দশক ধরে চীনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর ধরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিরও নেতৃত্ব দেন। দেশটির জাতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি সাংহাই শহরে লিউকেমিয়া ও মাল্টিপল অর্গান ফেইলিয়ারের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার রাজনৈতিক দল তাকে একজন “মহান প্রলেতারিয়ান বিপ্লবী” ও “দীর্ঘ-পরীক্ষিত সমাজতান্ত্রিক যোদ্ধা” হিসেবে আখ্যায়িত করে।
১৯৮৯ সালের বিপর্যয়ের পর বিস্ময় জাগানো এক সিদ্ধান্তে বিভাজিত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন জিয়াং। তিনি এমন কিছু পরিবর্তনের ধারক ও বাহক, যেগুলোর মাধ্যমে চীনের ইতিহাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। তার আমলে বাজার-কেন্দ্রীক সংস্কারের পুনর্জাগরণ, ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে হংকং এর ফিরে আসা ও ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের প্রবেশের মতো মাইলফলক অর্জিত হয়।
জিয়াং ২০০৪ সালে তার সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক পদবি বর্জন করেন, কিন্তু তিনি নেপথ্যের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে শি জিনপিং এর রাজনৈতিক উত্থানের অনুঘটক ছিলেন। শি জিনপিং ২০০২ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেন এবং দেশটিতে অবশিষ্ট ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
অক্টোবরে ক্ষমতাসীন দলের কংগ্রেসে উপস্থিত হতে না পারায় জিয়াং এর ভঙ্গুর স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই কংগ্রেসে অন্তত ১৯৮০ সালের পর চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্ব শি প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে নিজেকে তৃতীয় মেয়াদে ৫ বছরের জন্য দলটির নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন।
জিয়াং মৃত্যুকালে ২ ছেলে ও স্ত্রী ওয়াং ইয়েপিংকে রেখে গেছেন। ওয়াং আমলাতান্ত্রিক ভাবে সরকারের রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থায় কাজ করেছেন। তথ্য সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।