News update
  • 14-year-old Vaibhav Suryavanshi youngest ever IPL cricketer     |     
  • Chapainawabganj farmer creates stir with purple rice farming     |     
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     

আরজি করকাণ্ডের মধ্যে বিশ্বভারতীতে ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

ডয়চে ভেলে মিডিয়া 2024-09-09, 12:14am

rertertrter-f523d6023bbb61f14f4b7cefa7e443ea1725819250.jpg




টাকা দেয়ার জন্য 'হুমকি'। অভিযোগ উঠেছে, এর জেরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। রহস্য দানা বেঁধেছে তার হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন ঘিরে। আরজি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের হত্যা ঘিরে উত্তেজনা চরমে, আন্দোলন চলছে লাগাতার, তার মধ্যে আর এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।

উত্তরপ্রদেশে বারাণসী থেকে বোলপুরেবিশ্বভারতীতে পড়তে এসেছিলেন অনামিকা সিংহ। হাসিখুশি, মিশুকে ছিলেন এই ছাত্রী। জানা গেছে, তিনি হস্টেলের মধ্যেই হঠাৎ 'বিষ খান' বৃহস্পতিবার।

শিল্পসদনের ছাত্রী অনামিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আম্রপালি হোস্টেলে থাকতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্যান্য ছাত্রীরা দেখেন, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তড়াতাড়ি ওয়ার্ডেনকে ডাকেন তারা। হোস্টেল সূত্রে জানা গেছে, অনামিকা বলেন, ‘বিষ খেয়েছি, আমাকে বাঁচান।’

বারবার বমি হচ্ছিল ছাত্রীর। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ার্সন মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অনামিকাকে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বোলপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে অনামিকার পরিবার। বাবা, মা ও দাদা এই ঘটনায় বিস্মিত। তাদের অভিযোগ, কারো প্ররোচণায় আত্মহত্যা করেছেন অনামিকা। মৃত ছাত্রীর মা প্রেমলতাদেবী বলেন, ‘কোনো চাপে পড়েই মেয়ে এই কাজ করেছে। আমরা জানতে চাই, কে আছে এর পিছনে?’ ‌‌

আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে বীরভূমের পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে এগিয়েছে। বোলপুর থেকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হয় ময়নাতদন্ত। বোলপুর থানা তদন্তে আসে ঘটনাস্থলে, হস্টেল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক দল।

ছাত্রীর মৃত্যুর পর তার হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি চ্যাটে তাকে হুমকি দিয়েছেন, তা বোঝা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, তিনি এক সহপাঠীকে জানান, ঋণের টাকার জন্য একজন তাকে চাপ দিচ্ছে, হুমকিও দিচ্ছে। কিন্তু তার কাছে টাকা নেই!

রোমান হরফে লেখা হিন্দি ভাষার কথোপকথন সামনে এসেছে। সেই কথোপকথনে একজন অনামিকাকে লিখেছে, ‘রুপিয়া অ্যারেঞ্জ কিজিয়ে। কেয়া হোনেওয়লা হ্যায় মালুম চলেগা আপকো।' অর্থাৎ, রুপি জোগার করো, কী হতে যাচ্ছে তা তুমি বঝতে পারবে। জবাবে অনামিকা লেখেন, ‘কেয়া করেঙ্গে আপ? ধমকি দে রহে হো?' অজ্ঞাতনামা উত্তর দেয়, ‘ওয়েট করো মালুম চলেগা…।' এই হুমকির মুখে পড়েই সম্ভবত ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ছাত্রী। গত কয়েকদিন তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।

ঋণের টাকার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে অনামিকার ওপর চাপ আসছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেই টাকা জোগাড় করতেই কি তিনি সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চেয়েছিলেন?

গত ৭ আগস্ট একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অনামিকা লেখেন, ‘আমার বোনের একটি গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেছে। অপারেশনের জন্য পাঁচ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমার পরিবার ইতিমধ্যেই চার লাখ ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করতে পেরেছে। ‌‌‌‌অপারেশন করতে এখনও ৭০ হাজার টাকা প্রয়োজন। আর্থিক সাহায্যের জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।‌ অপারেশনের পর সকলকেই টাকা ফিরিয়ে দেব।’

পরে মৃত ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, বোনের অস্ত্রোপচারের দাবি ঠিক নয়, দুর্ঘটনা ঘটেনি। যদিও এই আবেদন দেখে অনেকেই সাহায্য করেন ছাত্রীকে। প্রায় ৭০ হাজার টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। তদন্তে উঠে এসেছে, সেই টাকা আর অনামিকার অ্যাকাউন্টে নেই।

দুটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই অ্যাকাউন্ট কার, তার খোঁজ করছে পুলিশ।

কেন অনামিকা তাকে এত টাকা পাঠিয়েছিলেন? কেনই বা টাকার জন্য অসত্য কাহিনি পরিচিতদের কাছে বললেন তিনি? কী কারণে ঋণ নিতে হয়েছিল তাকে? এ সব প্রশ্নের জবাবে ছাত্রীর মৃত্যুর রহস্য লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

আরজি করের ঘটনার পর সরকারি হাসপাতালে নানা অনিয়ম সামনে এসেছে। এই মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি।

সন্দীপ ঘনিষ্ঠ একাধিক চিকিৎসক পড়ুয়ার নামে জুনিয়রদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে টাকা আদায় থেকে গ্রেড প্রাপ্তি বা অন্যান্য অবৈধ কাজ, এ সব অনিয়মের অভিযোগ করছেন পড়ুয়ারা। একেই বলা হচ্ছে থ্রেট কালচার বা হুমকি সংস্কৃতি।

অভিযোগ উঠেছে, এই সংস্কৃতির ছায়া পড়েছে বিশ্বভারতীর মতো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানেও। নইলে কীভাবে ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেল করার সাহস পেল এক ব্যক্তি? পড়ুয়ারা তাদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

পর্যবেক্ষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ্যের প্রতিষ্ঠান হোক কিংবা কেন্দ্র, পড়ুয়ারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান যাদের নিয়ন্ত্রণে থাক, পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। আরজি করের পুনরাবৃত্তি যেন কোথাও না হয়। ছাত্রীর আত্মহত্যা খুবই দুঃখজনক। কারা তাকে প্ররোচণা দিল, তা খুঁজে বার করতে হবে তদন্তকারীদের।’