Muslim League's dialogue with Election Commission held on Monday July 25, 2022
মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সম্মানিত কমিশনারবৃন্দ ও উপস্থিত সকলকে আসসালামু আলাইকুম।
মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য, উপমহাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার কারণে সম্পূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থাই আজ, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত।
জনগণ নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়েছে। সঙ্গত কারণেই অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সকলেই, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে। এরকম অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করে, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করায়, আপনাদের দৃঢ় মনোবল ও অসীম সাহসী কর্তব্য পরায়ণতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে মাঠ পর্যায়ের বিপুল অভিজ্ঞতা। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে, নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময়ের এ উদ্যোগ, নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
পূর্ব কথা: ১৯৩৫ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে মুসলিম লীগ অংশগ্রহণ করে, বিজয়ের স্বাদ ও পরাজয়ের গ্লানি দুটোই আস্বাদন করেছে। শেরে-বাংলা এ.কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, খাজা নাজিমুদ্দীন, নুরুল আমিনদের মত কিংবদন্তীতুল্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এসকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী ও পরাজিত হয়েছেন।
তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর রাজনৈতিক সততা, শিষ্টাচার ও জনগণের রায় মেনে নেয়ার সংস্কৃতি ছিল। কোন দল বা নেতৃবৃন্দের, নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং নির্বাচনোত্তর কোন হতাশা-সংশয় পরিদৃষ্ট হতো না। রাজনৈতিক দলগুলোর ছিল পরস্পরের প্রতি শতভাগ বিশ্বাস ও আস্থা। ক্ষমতাসীন দলগুলোও সম্মান ও মর্যাদাবোধ থেকে, নির্বাচনে অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার করার কথা ভাবেনি।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, এম. আজফরের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে, ২২৮টি মুসলিম আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসনে জয়ী হয়। ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনসহ ৯জন প্রভাবশালী মন্ত্রী পরাজিত হয়ে, রাজনৈতিক সততা ও নৈতিক মূল্যবোধের অমলিন দৃষ্টান্ত স্থাপন কওে, গণতন্ত্রকে বিজয়ী করে গেছেন।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনগুলো নিয়েও কোন বিতর্ক নেই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী মিস ফাতিমা জিন্নাহ, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের নিকট পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু কারচুপি, ফলাফল পরিবর্তন, ভোট ডাকাতির মত গুরুতর কোন অনিয়মের অভিযোগ উঠেনি।
এমনকি, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মত বিতর্কিত সামরিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৭০সালের নির্বাচনেও, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও দৃঢ় অবস্থানে থাকায়, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, ১৬০টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল।
নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল বলেই মুসলিম লীগ সহ পরাজিত দলগুলোর, নির্বাচন নিয়ে কোন অভিযোগ ছিল না। পরবর্তীতে আমরা ধারাবাহিক ভাবে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে, রাজনৈতিক পূর্ব পুরুষদের অনুসৃত নৈতিকতার বাধ্যবাধকতা ত্যাগ করেছি। রাজনৈতিক ঐতিহ্য, আত্মসম্মান, সততা, শালীনতা, পারস্পরিক সম্মানবোধ, শিষ্টাচার, জনরায়ের প্রতি বিশ্বাস ইত্যাদি বর্জন করেছি। তার বদলে, যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় আসা বা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাকে প্রাধান্য দেয়ার সর্বনাশা নীতি অনুসরণ করছি।
ফলে পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। জনগণের মত মুসলিম লীগও ভবিষ্যতে এমন বিতর্কিত, অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, আর চায় না। শতাধিক বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে মুসলিম লীগ, আজকের মতবিনিময় সভায় যে সুপারিশ ও পরামর্শগুলো পেশ করছে, কমিশন সেগুলো গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি:
(ক) আইনি কাঠামো বিষয়ক সুপারিশ:
১. রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে কর্ম জীবনে প্রবেশের পূর্বে ও ছাত্র জীবনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনায় আনতে হবে।
২. প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলীর মত বিষয়াবলী প্রত্যক্ষভাবে সরকারের ভূমিকা থাকে বলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ নির্বাচন কালীন সময়েও সরকার প্রধানের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা আমলে নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব, জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে, জেলা জজের সমমর্যাদা সম্পন্ন যে কোন বিশেষ জজকে প্রদান করা হলে, নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হবে এবং জনগণের আস্থা ও স্বস্তি বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করছি।
৩. তফসীল ঘোষণার দিন থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত জনপ্রশাসন, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার সুপারিশ করছি।
৪. নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত করার স্বার্থে, নির্বাচনের তিন মাস পূর্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
৫. বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, -একথা জনগণের বড় একটি অংশ দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, বিগত এগারটি সংসদ নির্বাচনে, সংসদে একাধিকবার প্রতিনিধিত্বকারী সক্রিয় এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব -নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট দেয়ার সুপারিশ করছি।
৬. ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।
৭. কাস্টিং ভোট একান্ন শতাংশের(৫১%) কম হলে গণতন্ত্রের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট আসনে পুনঃনির্বাচনের প্রস্তাব করছি।
খ. নির্বাচন প্রক্রিয়া বিষয়ক সুপারিশ:
৮. নির্বাচনে প্রার্থীদের বেশুমার অর্থ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের হিসাব তদন্ত করার কার্যকরী পদ্ধতি ও দল কর্তৃক প্রার্থীর মনোনয়ন প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারীর আওতায় আনার প্রস্তাব করছি।
৯. আমরা মনে করি, প্রার্থী পরিচিতির জন্য প্রচারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় সকল প্রার্থীর নাম, প্রতীক, দল, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ইত্যাদি সম্বলিত যৌথ পোষ্টার, ব্যানারের মত প্রচার সামগ্রী নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ছাপানো ও সমহারে প্রার্থীদের নিকট বণ্টন করার নিয়ম চালু করার প্রস্তাব করছি। প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে, নির্বাচনী বিধি মোতাবেক তা লাগানো বা বিলির ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচন কমিশনের সরবরাহকৃত সামগ্রীর বাইরে প্রার্থীর নিজস্ব কোন প্রচার সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।
১০. প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং অফিসার/নির্বাচন/উপজেলা কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনায় কমপক্ষে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনী জনসভা আয়োজনের প্রস্তাব করছি, যেখানে আচরণ বিধি মেনে প্রত্যেক প্রার্থীর বক্তব্য রাখার সমান সুযোগ থাকবে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে জনসংযোগ ও উঠান বৈঠক ব্যতীত, এককভাবে কোন জনসভা করা, প্রার্থীর জন্য নিষিদ্ধ অথবা অনুমতি সাপেক্ষে একটি মাত্র একক জনসভা করার অনুমোদন থাকবে।
১১. বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য এবসেন্টি ব্যালট, মেইলিং পোলিং, এডভান্স পোলিং, অনলাইন পোলিং সিস্টেম ইত্যাদি আধুনিক নির্বাচনী পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব রাখছি। এতে প্রবাসী ও নির্বাচনী এলাকায় অনুপস্থিত থাকা ভোটারদের, বিশেষ করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হবে।
১২. ই.ভি.এম ব্যবহার করে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য জাতি প্রস্তুত নয়। তাছাড়া পদ্ধতিটি সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশেও বিতর্কিত ও এখন পর্যন্ত জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি বিধায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ই.ভি.এম ব্যবহার সমর্থন করে না।
গ. বিবিধ সুপারিশ
১৩. প্রবাসে অবস্থানরত আনুমানিক সাত শতাংশ (৭%) জনগণ ভোটাধিকার বঞ্চিত থাকায় নির্বাচন পদ্ধতি কোনভাবেই শতভাগ অংশগ্রহণমূলক থাকছে না।প্রবাসীদের নাম দ্রুততম সময়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নিতে ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করছি।
১৪. ভোট দেয়ার সুবিধার্থে ভোটারের ক্রমিক নম্বর, ভোট কেন্দ্রের নাম, বুথ নাম্বার ইত্যাদি তথ্য ভোটারদের সহজে জেনে নেয়ার জন্য এন্ড্রয়েড ও ওয়েব বেসড এপ্লিকেশন তৈরির বিষয়টি কমিশন ভেবে দেখবে আশা করি।
১৫. ভোটার তালিকা পি.ডি.এফ (সফট কপি) ও ছাপানো (হার্ড কপি) উভয় প্রকরণে বিনামূল্যে প্রার্থীদের সরবরাহ করার প্রস্তাব করছি।
১৬. প্রতিটি ভোট কেন্দ্র, ভোট গণনা কক্ষ ও ফলাফল ঘোষণা কক্ষ সি.সি/ আই.পি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করছি। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার সি.সি/ আই.পি ক্যামেরা মনিটরিং সেলের সাথে প্রোজেক্টর সংযুক্ত করে উন্মুক্ত স্থানে, সর্বসাধারণকে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করছি।
১৭. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এখন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই একটি সাজানো নাটক। বিশেষ করে, নেতা বাছাইয়ের প্রাথমিক স্তর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এ নাটকের মঞ্চায়ন, ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পাতানো খেলা, তৃনমূল পর্যায়ে নেতা তৈরির পদ্ধতিটিকে সমূলে বিনাশ করে দিচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক পদ্ধতি বাতিল করার এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সর্বনাশা সংস্কৃতি রুখে দিতে “না” ভোট প্রচলনের জোর দাবী জানাচ্ছি।
১৮. একজন ভোটার নিশ্চিত ভাবেই জানেন, একাধিক প্রতীকে সীল দেয়া হলে ভোটটি বাতিল হয়ে যাবে। জেনেশুনেই কিছু সম্মানিত ভোটার তার দৃষ্টিতে কোন যোগ্য প্রার্থী না পেয়ে, একাধিক প্রতীকে সীল দিয়ে তার ভোটটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করে দেন। এক্ষেত্রে একাধিক প্রতীকে ভোট প্রদান করা হলে ভোটটি বাতিল ঘোষণা না করে বরং “না” ভোট হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।
১৯. জোটবদ্ধ ভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের নিবন্ধিত প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
শেষ কথা
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জনরায়কে পদদলিত করে, যে কোন অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতায় বহাল থাকার যে অসুস্থ ও বিকারগ্রস্ত প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার সর্বনাশা পরিণতি থেকে রাষ্ট্র ও জনগণকে রক্ষা করতে হলে; অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। শাশ্বত সত্য হল, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা জনিত কারণে সৃষ্ট দুর্বলতা ও সরকারের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেই মূলতঃ নির্বাচন কলুষিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
নির্বাচন কমিশনের অনমনীয় দৃঢ়তা ও সততাই, ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার থেকে দূরে রাখতে পারে। আশা করি আপনারা দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে নির্বাচন বিমুখ জনগণকে আবারও নির্বাচন মুখী করতে সক্ষম হবেন। মহান আল্লাহ-তায়ালা আপনাদের মহান উদ্দেশ্যকে সফল করুন। আমিন।
নাছরুম মিনাল্লাহে ওয়া ফাতহুন ক্বারীব। বিসমিল্লাহির রাহ মানির রাহীম
মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সম্মানিত কমিশনারবৃন্দ ও উপস্থিত সকলকে আসসালামু আলাইকুম।
মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য, উপমহাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার কারণে সম্পূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থাই আজ, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত। জনগণ নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়েছে।
সঙ্গত কারণেই অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সকলেই, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে। এরকম অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করে, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করায়, আপনাদের দৃঢ় মনোবল ও অসীম সাহসী কর্তব্য পরায়ণতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে মাঠ পর্যায়ের বিপুল অভিজ্ঞতা। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে, নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময়ের এ উদ্যোগ, নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।
পূর্ব কথা:
১৯৩৫ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে মুসলিম লীগ অংশগ্রহণ করে, বিজয়ের স্বাদ ও পরাজয়ের গ্লানি দুটোই আস্বাদন করেছে। শেরে-বাংলা এ.কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, খাজা নাজিমুদ্দীন, নুরুল আমিনদের মত কিংবদন্তীতুল্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এসকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী ও পরাজিত হয়েছেন।
তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর রাজনৈতিক সততা, শিষ্টাচার ও জনগণের রায় মেনে নেয়ার সংস্কৃতি ছিল। কোন দল বা নেতৃবৃন্দের, নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং নির্বাচনোত্তর কোন হতাশা-সংশয় পরিদৃষ্ট হতো না। রাজনৈতিক দলগুলোর ছিল পরস্পরের প্রতি শতভাগ বিশ্বাস ও আস্থা। ক্ষমতাসীন দলগুলোও সম্মান ও মর্যাদাবোধ থেকে, নির্বাচনে অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার করার কথা ভাবেনি। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, এম. আজফরের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে, ২২৮টি মুসলিম আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসনে জয়ী হয়।
ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনসহ ৯জন প্রভাবশালী মন্ত্রী পরাজিত হয়ে, রাজনৈতিক সততা ও নৈতিক মূল্যবোধের অমলিন দৃষ্টান্ত স্থাপন কওে, গণতন্ত্রকে বিজয়ী করে গেছেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনগুলো নিয়েও কোন বিতর্ক নেই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী মিস ফাতিমা জিন্নাহ, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের নিকট পরাজিত হয়েছেন।
কিন্তু কারচুপি, ফলাফল পরিবর্তন, ভোট ডাকাতির মত গুরুতর কোন অনিয়মের অভিযোগ উঠেনি। এমনকি, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মত বিতর্কিত সামরিক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৭০সালের নির্বাচনেও, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও দৃঢ় অবস্থানে থাকায়, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, ১৬০টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল বলেই মুসলিম লীগ সহ পরাজিত দলগুলোর, নির্বাচন নিয়ে কোন অভিযোগ ছিল না।
পরবর্তীতে আমরা ধারাবাহিক ভাবে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে, রাজনৈতিক পূর্ব পুরুষদের অনুসৃত নৈতিকতার বাধ্যবাধকতা ত্যাগ করেছি। রাজনৈতিক ঐতিহ্য, আত্মসম্মান, সততা, শালীনতা, পারস্পরিক সম্মানবোধ, শিষ্টাচার, জনরায়ের প্রতি বিশ্বাস ইত্যাদি বর্জন করেছি। তার বদলে, যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় আসা বা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাকে প্রাধান্য দেয়ার সর্বনাশা নীতি অনুসরণ করছি। ফলে পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে।
জনগণের মত মুসলিম লীগও ভবিষ্যতে এমন বিতর্কিত, অস্বচ্ছ ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, আর চায় না। শতাধিক বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে মুসলিম লীগ, আজকের মতবিনিময় সভায় যে সুপারিশ ও পরামর্শগুলো পেশ করছে, কমিশন সেগুলো গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি:
(ক) আইনি কাঠামো বিষয়ক সুপারিশ:
১. রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে কর্ম জীবনে প্রবেশের পূর্বে ও ছাত্র জীবনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনায় আনতে হবে।
২. প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলীর মত বিষয়াবলী প্রত্যক্ষভাবে সরকারের ভূমিকা থাকে বলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ নির্বাচন কালীন সময়েও সরকার প্রধানের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা আমলে নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব, জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে, জেলা জজের সমমর্যাদা সম্পন্ন যে কোন বিশেষ জজকে প্রদান করা হলে, নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হবে এবং জনগণের আস্থা ও স্বস্তি বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করছি।
৩. তফসীল ঘোষণার দিন থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত জনপ্রশাসন, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার সুপারিশ করছি।
৪. নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত করার স্বার্থে, নির্বাচনের তিন মাস পূর্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
৫. বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, -একথা জনগণের বড় একটি অংশ দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, বিগত এগারটি সংসদ নির্বাচনে, সংসদে একাধিকবার প্রতিনিধিত্বকারী সক্রিয় এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব -নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট দেয়ার সুপারিশ করছি।
৬. ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।
৭. কাস্টিং ভোট একান্ন শতাংশের(৫১%) কম হলে গণতন্ত্রের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট আসনে পুনঃনির্বাচনের প্রস্তাব করছি।
খ. নির্বাচন প্রক্রিয়া বিষয়ক সুপারিশ:
৮. নির্বাচনে প্রার্থীদের বেশুমার অর্থ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের হিসাব তদন্ত করার কার্যকরী পদ্ধতি ও দল কর্তৃক প্রার্থীর মনোনয়ন প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারীর আওতায় আনার প্রস্তাব করছি।
৯. আমরা মনে করি, প্রার্থী পরিচিতির জন্য প্রচারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় সকল প্রার্থীর নাম, প্রতীক, দল, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ইত্যাদি সম্বলিত যৌথ পোষ্টার, ব্যানারের মত প্রচার সামগ্রী নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ছাপানো ও সমহারে প্রার্থীদের নিকট বণ্টন করার নিয়ম চালু করার প্রস্তাব করছি। প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে, নির্বাচনী বিধি মোতাবেক তা লাগানো বা বিলির ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচন কমিশনের সরবরাহকৃত সামগ্রীর বাইরে প্রার্থীর নিজস্ব কোন প্রচার সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।
১০. প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং অফিসার/নির্বাচন/উপজেলা কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনায় কমপক্ষে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনী জনসভা আয়োজনের প্রস্তাব করছি, যেখানে আচরণ বিধি মেনে প্রত্যেক প্রার্থীর বক্তব্য রাখার সমান সুযোগ থাকবে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে জনসংযোগ ও উঠান বৈঠক ব্যতীত, এককভাবে কোন জনসভা করা, প্রার্থীর জন্য নিষিদ্ধ অথবা অনুমতি সাপেক্ষে একটি মাত্র একক জনসভা করার অনুমোদন থাকবে।
১১. বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য এবসেন্টি ব্যালট, মেইলিং পোলিং, এডভান্স পোলিং, অনলাইন পোলিং সিস্টেম ইত্যাদি আধুনিক নির্বাচনী পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব রাখছি। এতে প্রবাসী ও নির্বাচনী এলাকায় অনুপস্থিত থাকা ভোটারদের, বিশেষ করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হবে।
১২. ই.ভি.এম ব্যবহার করে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য জাতি প্রস্তুত নয়। তাছাড়া পদ্ধতিটি সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশেও বিতর্কিত ও এখন পর্যন্ত জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি বিধায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ই.ভি.এম ব্যবহার সমর্থন করে না।
গ. বিবিধ সুপারিশ
১৩. প্রবাসে অবস্থানরত আনুমানিক সাত শতাংশ (৭%) জনগণ ভোটাধিকার বঞ্চিত থাকায় নির্বাচন পদ্ধতি কোনভাবেই শতভাগ অংশগ্রহণমূলক থাকছে না।প্রবাসীদের নাম দ্রুততম সময়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নিতে ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করছি।
১৪. ভোট দেয়ার সুবিধার্থে ভোটারের ক্রমিক নম্বর, ভোট কেন্দ্রের নাম, বুথ নাম্বার ইত্যাদি তথ্য ভোটারদের সহজে জেনে নেয়ার জন্য এন্ড্রয়েড ও ওয়েব বেসড এপ্লিকেশন তৈরির বিষয়টি কমিশন ভেবে দেখবে আশা করি।
১৫. ভোটার তালিকা পি.ডি.এফ (সফট কপি) ও ছাপানো (হার্ড কপি) উভয় প্রকরণে বিনামূল্যে প্রার্থীদের সরবরাহ করার প্রস্তাব করছি।
১৬. প্রতিটি ভোট কেন্দ্র, ভোট গণনা কক্ষ ও ফলাফল ঘোষণা কক্ষ সি.সি/ আই.পি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করছি। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার সি.সি/ আই.পি ক্যামেরা মনিটরিং সেলের সাথে প্রোজেক্টর সংযুক্ত করে উন্মুক্ত স্থানে, সর্বসাধারণকে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করছি।
১৭. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এখন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই একটি সাজানো নাটক। বিশেষ করে, নেতা বাছাইয়ের প্রাথমিক স্তর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এ নাটকের মঞ্চায়ন, ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পাতানো খেলা, তৃনমূল পর্যায়ে নেতা তৈরির পদ্ধতিটিকে সমূলে বিনাশ করে দিচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক পদ্ধতি বাতিল করার এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সর্বনাশা সংস্কৃতি রুখে দিতে “না” ভোট প্রচলনের জোর দাবী জানাচ্ছি।
১৮. একজন ভোটার নিশ্চিত ভাবেই জানেন, একাধিক প্রতীকে সীল দেয়া হলে ভোটটি বাতিল হয়ে যাবে। জেনেশুনেই কিছু সম্মানিত ভোটার তার দৃষ্টিতে কোন যোগ্য প্রার্থী না পেয়ে, একাধিক প্রতীকে সীল দিয়ে তার ভোটটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করে দেন। এক্ষেত্রে একাধিক প্রতীকে ভোট প্রদান করা হলে ভোটটি বাতিল ঘোষণা না করে বরং “না” ভোট হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।
১৯. জোটবদ্ধ ভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের নিবন্ধিত প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
শেষ কথা
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জনরায়কে পদদলিত করে, যে কোন অনৈতিক পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতায় বহাল থাকার যে অসুস্থ ও বিকারগ্রস্ত প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার সর্বনাশা পরিণতি থেকে রাষ্ট্র ও জনগণকে রক্ষা করতে হলে; অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। শাশ্বত সত্য হল, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা জনিত কারণে সৃষ্ট দুর্বলতা ও সরকারের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণেই মূলতঃ নির্বাচন কলুষিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নির্বাচন কমিশনের অনমনীয় দৃঢ়তা ও সততাই, ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার থেকে দূরে রাখতে পারে।
আশা করি আপনারা দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে নির্বাচন বিমুখ জনগণকে আবারও নির্বাচন মুখী করতে সক্ষম হবেন। মহান আল্লাহ-তায়ালা আপনাদের মহান উদ্দেশ্যকে সফল করুন। আমিন।
২৫ জুলাই ২০২২