চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি। খুব শিগগির এ দাবিতে সোচ্চার হবে দলটি। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা জানানোর পর বিএনপি বৈঠক করে নির্বাচনের এই সিদ্ধান্ত নেয়। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় নির্বাচন ঠেকাতে এই কৌশল নিয়েছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলন কিংবা সভা-সেমিনারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের এই দাবিকে শিগগিরই সামনে নিয়ে আসা হবে বলে জানায় দলীয় সূত্র।
বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যে আলোচনা-চিন্তা তা জাতীয় নির্বাচনের সময়ক্ষেপণ মাত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়ে জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী চলতি বছরের মাঝামাঝিতেই জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং এর সব আয়োজন সম্পন্ন করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচন করার যে কথা বলা হচ্ছে তা একটি দূরভিসন্ধি। এটাও সংসদ নির্বাচন প্রলম্বিত করার একটি চেষ্টা।
বৈঠকে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসারত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য ক্রমাগত উন্নতির দিকে থাকায় শুকরিয়া আদায় করেন বিএনপি নেতারা। কোনো কোনো নেতা বলেন, ধীরে ধীরে ম্যাডামের স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়া আমাদের জন্য সুখবর।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলছে। এতদিন তারা চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও এখন সেখান থেকে সরে এসে বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন চাইছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ–সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো- মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট এবং ট্যাক্স বৃদ্ধির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বৈঠকে।
বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কোনো নির্বাচিত সরকার থাকলে তারা কোনোভাবে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানোর কারণ হয়ে দাঁড়াত না। তারা জনঘনিষ্ঠ এবং দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পণ্যে এভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়াতো না।
স্থায়ী কমিটির পুরো বৈঠকের ওপর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হবে এই সংবাদ সম্মেলন। সেখানে বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হবে।
এর আগে গত কয়েকদিন ধরে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে বিএনপি। এসব বৈঠকে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে মাঠে কর্মসূচি দেয়ার ব্যাপারে একমত হয় দলটি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না হওয়া ও দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করবে তারা।
এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন দলগুলো। তবে সরকার ব্যর্থ হোক, সেটা তারা চায় না।
তাদের মতে, সরকারের ব্যর্থতা মানে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের ব্যর্থতা। সময়।