
Bangladesh Muslim League discussion meeting marking the day of the reorganisation of the Party on 8 August Friday.
১৯০৫সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৬সালের নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে মুসলিম লীগ গঠন ও প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, কংগ্রেসের নেতৃত্বে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রাম, ১৯৪০সালে শের-এ-বাংলা এ.কে ফজলুল হক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাব ও দ্বিজাতী তত্ত্ব, ১৯৪৬এর নির্বাচন, ১৯৪৭ সালে আজাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ভারত বিভক্ত করে আমাদের বুনিয়াদী স্বাধীনতা অর্জন ইতিহাসের অপরিহার্য কিছু মাইলফলক। জুলাই ঘোষণাপত্রে এক শব্দে ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসনের কথা বলে আমাদের এ অভূতপূর্ব অর্জনকে অবহেলা, অবজ্ঞা ও কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একই ভাবে অবহেলিত ও অনুচ্চারিত রয়ে গেছে ভারতীয় ইন্ধনে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের ঘটানো নৃশংস পিলখানা হত্যাকা-, শাপলা চত্ত¦র ট্র্যাজেডি ও সাজানো মানবতাবিরোধী বিচারের অজুহাতে বিচারিক হত্যাকাণ্ড। এসবই জুলাই-২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত এবং অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্র ও জনসম্পৃক্ততা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট জনগণ নিরপেক্ষতা আশা করেছিল কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্রে এসব ঐতিহাসিক বিষয়াবলী অনুচ্চারিত থাকায় জনগণ বিশেষ করে মুসলিম জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী নাগরিক সমাজ চরম হতাশ হয়েছে। মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত অভূতপূর্ব বিজয়ের ইতিকথা ভারতীয় আধিপত্যবাদী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বরাবরই ইতিহাস থেকে ব্যবচ্ছেদের চেষ্টা করে যাচ্ছে। জাতীকে বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাস শিকড়ের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে জনগণকে অবশ্যই এ ধরনের ব্যবচ্ছেদ চেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র অসম্পূর্ণ বিধায় অবিলম্বে তা সংশোধনের জোর দাবী জানিয়েছেন মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ।
আজ (০৮ আগস্ট, ২০২৫) বিকাল ৩.০০টায় বাংলাদেশে মুসলিম লীগের ৪৭তম পুনর্গঠন দিবস উপলক্ষে দলের বাংলামটরস্থ প্রধান কার্যালয়ে দলীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ আব্দুল হান্নান নূরের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত মন্তব্য করেন। আরও বক্তব্য রাখেন, দলীয় মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী ও শেখ এ সবুর, অতিরিক্ত মহাসচিব কাজী এ.এ কাফী, মাকসুদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক, মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া (চট্টগ্রাম), প্রচার সম্পাদক মামুনুর রশীদ, শ্রম সম্পাদক ক্যাপ্টেন আনিসুর রহমান, যুব সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জাবেদ, ত্রাণ সম্পাদক রায়হান খান, কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, মো. শাহজাহান প্রমুখ। সভায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাতা নবাব সলিমুল্লাহ ও বাংলাদেশে মুসলিম লীগের পুনর্গঠক খান এ সবুরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলা হয়, নবাব সলিমুল্লাহ ২০০বছরের ব্রিটিশ শাসন ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের শোষণে, রাজার জাতী থেকে ভিখারিতে পরিণত হওয়া, দিশেহারা উপমহাদেশের মুসলিম জাতীকে ঐক্যবদ্ধ ও শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে, নিজ জমিদারীকে কার্যত দেউলিয়া করে দিয়েছিলেন। অথচ জুলাই ঘোষণাপত্রে বিতর্কমুক্ত এ মহামানবের নাম এবং অবদানও অনুচ্চারিত। খান এ সবুর ১৯৭৬ সালের ৮ই আগস্ট মুসলিম লীগ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়ে মুসলিম জাতিসত্তা অনুসারীদের শুধু ঐক্যবদ্ধই করেননি বরং তৎকালীন সময়ে বাকশাল কর্তৃক ঘোষিত একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান নেতৃবৃন্দ। সভা শেষে নবাব সলিমুল্লাহ, খান এ সবুর ও জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।