ইথিওপিয়ার যুদ্ধ জর্জরিত টিগ্রায় অঞ্চলে শিশুরা জন্মের প্রথম মাসে যুদ্ধের আগের তুলনায় চারগুণ হারে মারা যাচ্ছে। যুদ্ধের ফলে এলাকাটিতে বসবাসকারী ৫০ লক্ষ মানুষ অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। মা ও শিশুদের ভোগান্তি সম্পর্কে এই পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে সামগ্রিক গবেষণাটিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
নারীরা গর্ভকালীন সময়ে বা প্রসবের পর ৪২ দিন সময়ের মধ্যে, যুদ্ধের আগের তুলনায় পাঁচগুণ হারে মারা যাচ্ছেন। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা যুদ্ধের আগের তুলনায় দ্বিগুণ হারে মারা যাচ্ছে। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই প্রতিকারযোগ্য। গবেষণাটিতে এসব তথ্য পাওয়া যায়। গবেষণাটি এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে সেটির লেখকরা সেটি দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দিয়েছেন।
যুদ্ধ আরম্ভের প্রায় দুই বছর পার হয়েছে। সে সময় থেকেই ইথিওপিয়ার সরকার টিগ্রায় অঞ্চলটিকে বিশ্বের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এবং বিদ্যুৎ, ফোন, ইন্টারনেট, ব্যাংকিং এর মত প্রাথমিক সেবাগুলো বিচ্ছিন্ন করেছে।
জাতিসংঘ সমর্থিত অনুসন্ধানকারীরা গত মাসে বলেন যে, টিগ্রায় বাহিনী সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই নির্যাতন সংঘটিত করেছে। তবে তারা বলেন যে, ইথিওপিয়ার সরকার “বেসামরিক মানুষজনের অনাহারকে” যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
প্রতি ১,০০,০০০ জীবিত জন্মে মাতৃ মৃত্যুহার, যুদ্ধের আগের ১৮৬ -র নিম্নহার থেকে বেড়ে ৮৪০ এ পৌঁছেছে। প্রসবকালীন রক্তক্ষয় ও উচ্চ রক্তচাপ এমন মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। গবেষণাটিতে বলা হয়, “এই হার অগ্রহণযোগ্যভাবে বেশি এবং ২২ বছর আগের হারের সমতুল্য।”
নবজাতক মৃত্যুহার বা জন্মের প্রথম ২৮ দিনে মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে ৩৬ বলে গবেষণাটিতে বলা হয়। যুদ্ধের আগের তুলনায় এটি চারগুণ বেশি। এর মধ্যে অর্ধেক মৃত্যুই কোন প্রকার চিকিৎসা সেবা ছাড়া বাড়িতে হয়েছে। এমন মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণগুলো হল অপরিণত অবস্থায় জন্ম, সংক্রমণ ও নবজাতকের শ্বাসরোধ, যা হল জন্মের পর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া আরম্ভ করানোর ব্যর্থতা।
৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে ৫৯, যা যুদ্ধের আগের তুলনায় দ্বিগুণ। গবেষণাটিতে বলা হয়, “টিকার মাধ্যমে প্রতিকারযোগ্য রোগ যেমন, ডাইরিয়াজনিত রোগ, নিউমোনিয়া ও পেরটুসিস অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ।” তথ্য সূত্র ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।