
ডায়াবেটিস মানে উৎসবের আনন্দ বাদ দেয়া নয়। একটু পরিকল্পনা, সচেতনতা এবং সঠিক খাবার ব্যবহার করে নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে আনন্দঘন সময় উপভোগ করা সম্ভব। এজন্য রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট কৌশল, পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের পরিচিতি। চলুন জেনে নিই এমন কিছু টিপস যা ছুটির দিনগুলোতে আপনাকে আনন্দঘন সময় উপহার দেবে-
১. শুরুতেই নিজের রক্তের শর্করা চেক করা: ছুটি মানেই পার্টি, নাস্তা আর মিষ্টি। ডায়াবেটিস থাকলে এসময় রক্তের শর্করা উঠানামা করতে পারে। তাই পার্টি শুরু হওয়ার আগে একবার শর্করা চেক করুন। খাবারের ১-২ ঘণ্টা পরে আবার চেক করতে ভুলবেন না। যদি রেকর্ড না রাখেন তাহলে অ্যাপ বা ডায়েরিতে নোট করুন।
২. আগে থেকে পরিকল্পনা করা: সামনে বড় কোনো দাওয়াত রয়েছে? আগে একটু পরিকল্পনা করা জরুরি। ফোনে ক্যালেন্ডারে ছোট ছোট রিমাইন্ডার রাখুন। যেমন, তিন দিন আগে স্ন্যাক্স কিনে রাখা, দাওয়াতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে নিজের A1C চেক করা, প্লেটে কি নিলাম ছবি তুলে অ্যাপে লগ করা, এবং শেষপর্যন্ত আবার চেক করা। এই ছোট্ট কাজগুলোই রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রেখে আপনাকে পার্টি উপভোগে সাহায্য করবে।
৩. খাবারের অপশন আগে দেখা: পার্টিতে পৌঁছানোর আগে একটু ভেবে নিন, খাবারের টেবিলে কি কি আছে। প্রথমে আপনার প্লেট পূরণ করুন ডায়াবেটিস বান্ধব খাবার যেমন বাদাম, কাঁচা সবজি, মাছ বা মাংস, এবং কম-শর্করার ফল যেমন আপেল বা আঙুর ইত্যাদি দিয়ে। সবুজ সবজি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার আগে খেলে রক্তের শর্করা স্থিতিশীল থাকে। পরে চাইলে ছোট্ট ট্রিট বা প্রিয় মিষ্টি যোগ করতে পারেন। সঙ্গে রাখুন স্পার্কলিং ওয়াটার। মূল কথা হলো মন দিয়ে বাছাই করে খাওয়া, যাতে উপভোগ ও রক্তের শর্করা দুটোই ঠিক থাকে।
৪. নিজের মিষ্টি নিজেই বানানো: ছুটির পার্টিতে নিজেই মিষ্টি নিয়ে যাওয়া দারুণ আইডিয়া। এতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে আর স্ট্রেসও কমে। বানাতে পারেন স্টিভিয়া, খেজুরের চিনি বা দারচিনি দিয়ে। খেজুরের চিনি পাউডার, পেস্ট বা সিরাপ—সবই বেকিংয়ে কাজে দেয়। এটি মিষ্টি হলেও রক্তে শর্করা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ায় না, তাই চিন্তা ছাড়াই পার্টি উপভোগ করতে পারবেন।
৫. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার: ডাক্তার অনুমতি দিলে, কিছু সাপ্লিমেন্ট পার্টিতে সাহায্য করতে পারে। যেমন, ক্রোমিয়াম শরীরকে চিনি শোষণে সাহায্য করে। আর হজম এঞ্জাইমস খাবারের ফ্যাট, প্রোটিন, কার্ব এবং ল্যাকটোজ ঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে। বিশেষ ধরনের এঞ্জাইম আমাইলেস সুগার হজমে কাজে লাগে। পার্টিতে খাওয়ার আগে বা খাওয়ার সময় এটি নিতে পারেন। সাপ্লিমেন্টগুলো ছোট প্যাকেটে বা ব্যাগে রাখলে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। মনে রাখতে হবে, ডাক্তার অনুমোদন ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত না, এবং এটি ডায়াবেটিসের ওষুধের বিকল্প নয়।
৬. হালকা শরীরচর্চা: খাবার শেষ হলে একটু শরীর নড়াচড়া, হাঁটাহাঁটি বা হালকা নাচ করলে তা ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। পার্টি যদি আপনার হোস্ট করা হয়, তবে একটু স্পট ক্লিনিং বা হালকা কাজ করেও চলবে। অতিথি হলে সাহায্য করতে পারেন—এর ফলে আপনার শরীরচর্চাও হবে আর মেজাজও ভালো থাকবে।
৭. নিজেকে দোষ না দিয়ে আনন্দ উপভোগ: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা কোনো একবারের পরীক্ষা নয়। খাবারে একটু হিসাব-নিকাশ রাখা ভালো, কিন্তু পুরো আনন্দটাকে হারাবেন না। ছুটির সময়গুলোতে আমরা অনেক সময় পরিকল্পনার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলি—এটা স্বাভাবিক। এমন সময় নিজেকে দোষ দেবেন না। সামঞ্জস্য রেখে খান, আর উপভোগ করুন মুহূর্তগুলো।