শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীপ্ত শিখার মতো ক্ষোভ জ্বলে উঠেছিল তার কণ্ঠে। তারই কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে কোমল হৃদয়ানুভব আবেগ। তিনি বিদ্রোহী, তিনিই ছিলেন সুমধুর গানের পাখি বুলবুল। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
রোববার (২৭ আগস্ট) কবি নজরুলের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলার বুলবুলি। দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
বাংলাসাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাসংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
কাজী নজরুলের ইসলামের কবিতা, গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতা সংগ্রামে পথ দেখিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস, এগিয়ে যাবার ব্রত।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্মবাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল । জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন তিনি। আজও তার কবিতা, গান মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
তিনি বজ্রকণ্ঠে গাইছেন -
বল বীর, বল বীর
বল উন্নত মম শির।
শির নেহারি আমারি নত শির
ওই শিখর হীমাদ্রির।
চির প্রেমের কবি, যৌবনের দূত ছিলেন নজরুল। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। অনায়াসেই বলছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়‘।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি দেন।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয় ।
কাজী নজরুল ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস স্মরণে দেশের সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বেশ কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে-
আরটিভি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ নাটক ‘পরীর কথা’ প্রচার হবে আরটিভিতে। প্রচার হবে আজ বিকাল ৮টায়। পরিচালনায় নাহিদ আহমেদ পিয়াল। অভিনয়ে নুসরাত ইমরোজ তিশা, রওনক হাসান প্রমুখ। এদিন বিকাল ৫টায় প্রচার হবে সুজন আহমেদের প্রযোজনায় বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র ‘তবু আমারে দেবনা ভুলিতে’।
বিটিভি
বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার হবে। নোমান হাসান খানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন ড. সৌমিত্র শেখর। প্রচার হবে আজ (২৭ আগস্ট) রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটে।
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেছেন মাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও নায়লা তারানুম চৌধুরী। গান গেয়েছেন প্রিয়াংকা গোপ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, ছন্দা চক্রবর্তী, ইয়াসমিন মুশতারি, শেখ জসিম উদ্দিন ও মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া। আলোচনায় চিলেন ড. রফিক উল্লাহ খান ও ড. এ এফ এম হায়াতুল্লাহ খান।
দিবসটি স্মরণে দুপুর আড়াইটায় ও সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে প্রচার হবে কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান, বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে প্রচার হবে নজরুল সংগীতের অনুষ্ঠান। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে থাকছে ‘মুজিব চেতনায় নজরুল’। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।