বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতনের যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায় বলে মনে করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। একইসঙ্গে এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলেও মনে করে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে কথা জানানো হয়।
বুধবার (১৪ আগস্ট) এক দৈনিক পত্রিকায় ‘গুম হওয়াদের সন্ধান চান স্বজনরা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
প্রতিবেদন মতে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে নিখোঁজ ও গুম হওয়াদের সন্ধান চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও কার্যালয় যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্বজনরা। ওইদিন দুপুরে রাজধানীর ভিআইপি সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন।
এ সময় শতাধিক নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। কারও স্বামী, কারও বাবা, কিংবা কারও ভাইয়ের খোঁজে তারা অবস্থান করেন। ‘আয়নাঘর, খুলে দাও খুলে দাও’, ‘মুক্তি চাই মুক্তি চাই, গুম স্বজনদের মুক্তি চাই’, ‘আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে’ বলে স্লোগান দেন তারা।
তেজগাঁও থানা যুবদলের নেতা বশির উদ্দীন হাওলাদার ২০১১ সালের ১৪ জুন রাজধানীর গুলিস্তান থেকে নিখোঁজ হন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। তার স্ত্রী হোসনে আরা ও সন্তানরা যমুনার সামনে তাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানান। এমন অনেক গুম ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা নতুন সরকারের কাছে নিখোঁজদের সন্ধান চেয়ে আবেদন জানান।
মানবাকিার কমিশনের সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভ একটি সাংবিধানিক অধিকার। কোনো ব্যক্তি অপরাধ করে থাকলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু কোনো প্রকার গ্রেফতার না দেখিয়ে বিগত কয়েক বছরে বহু মানুষ নিখোঁজ ও গুমের শিকার হয়েছে মর্মে খবর পাওয়া যায়। যাদের অনেকের খোঁজ আজঅবধি পাওয়া যায়নি।
‘বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতনের যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।’ এ ধরনের নিখোঁজ বা গুমের প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত বলে কমিশন মনে করে।
এ অবস্থায় নিখোঁজ বা গুমের শিকার প্রত্যেক ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান নিশ্চিতকরণ এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযু্ক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সময় সংবাদ।