তেহরানের এভিন কারাগারে রাজনৈতিক কারণে বন্দি নারীরা এই মর্মে একটি চিঠি লিখেছেন যে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টি প্রকাশ করলে তাতে নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হবে।
গেগালরোখ ইরায়ী নামের একজন রাজনৈতিক বন্দি এই চিঠিটি তার সামাজিক মাধ্যম এক্স ‘এ প্রকাশ করেন যেখানে তিনি এই চিঠিতে নারী স্বাক্ষরদাতাদের নাম প্রকাশ করেন। তারা হচ্ছেন নামিস সুলতান বেইগি, আনিশা আসাদোল্লাহি, মাহ্ওয়াশ সাবেত, নার্গিস মোহাম্মদী, সেপিদেহ ঘোলিয়ান, ভিদা রাব্বানি , জোয়ানা সেঞ্চ, পাখশান আজিজি, ফারিবা কামালাবাদি, মাহবুবে রেজাই এবং স্বয়ঙঅ গোলরোখ ইরাই।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, “ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে নারীদের সংগ্রামের কথা। একত্রিত হবার এই বৈশ্বিক দিনটির লক্ষ্য হচ্ছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমতা অর্জন এবং সকল ধরণের অবিচার, শোষণ আর সেই সাথে আইনগত, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বৈষম্যের বিরদ্ধে লড়াই করা।”
এই বন্দিনীরা , নারীদের অবস্থার উপর আলোকপাাত করে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য এবং ইরান ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে নারীদের অবস্থা সম্পর্কে বলেন, “ আমরা জানি মুক্তি ও সমতা অর্জনের সামনের পথটি দীর্ঘ।”
রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার কর্মীরা, শ্রমিক ইউনিয়নগুলি এবং এই ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সমালোচকরা ইরানি নারীদের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং নারীদের দাবিয়ে রাখার জন্য সরকারের নিন্দা করেছেন।
এর আগে এই ইসলামি প্রজাতন্ত্রে বন্দি, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়িনী নার্গিস মোহাম্মাদী “লিঙ্গ বৈষম্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার” এবং এটিকে , “ মানবতার বিরুদ্ধে অন্যতম অপরাধ” বলে অভিহিত করতে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি দেয়া একটি বার্তায় আহ্বান জানান । এই বার্তাটি তিনি ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর ইন্সটাগ্রাম পাতায়ও প্রকাশ করেন।
তাঁর ঐ বার্তায় তিনি কয়েক দশক ধরে “ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র সরকারের ছায়ায় নারীদের অবস্থার” উপর আলোকপাত করেন এবং জোর দিয়েই বলেন যে এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্র, “নিয়ম করে এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারের সব ব্যবস্থা ও ক্ষমতাকে , বিশেষত আইনের মাধ্যমে, ব্যবহার করে নারীদের প্রান্তিক অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের মানবাধিকার লংঘন করছে।”
তারই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল নারীরা যে প্রচন্ড অবিচারের সম্মুখীন হচ্ছেন, বিশেষত তালিবানের মতো সরকারগুলির অধীনে, তা তুলে ধরেন এবং “ লিঙ্গ বৈষম্যকে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” বলে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানান। এর আগে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন মোহাম্মাদী । এতে জাতিসংঘের তদন্তের আহ্বান জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মেক্সিকো, উগান্ডা ও সার্বিয়ার সদস্য সম্বলিত জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের এই প্যানেল জোর দিয়েই বলছে যে লিঙ্গ বৈষম্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা দীর্ঘদিন আগেই উচিত্ ছিল এবং এই ধরণের অপরাধকে আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সরাসরি মোকাবিলা করা হচ্ছে না।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপিকা কারিমা বেনৌনে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ লিঙ্গ বৈষম্য এসেছে বর্ণ বৈষম্যের আইনি কাঠামো থেকেই আর তাতে এ কথাটাই পরিস্কার হচ্ছে যে লিঙ্গ বৈষম্য সরকারের ব্যবস্থার মধ্যেই গ্রথিত রয়েছে।”
গত সপ্তাহে এই আলজেরিয়ান- আমেরিকান অধ্যাপিকা বেনৌনে যিনি সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের প্রাক্তন বিশেষ র্যাপটিয়ার ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাত্কারে লিঙ্গ বৈষম্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার আইনি দিকটি তুলে ধরেন। তথ্য ভুল আরটিভি নিউজ।