News update
  • 248 arrested, illegal nets seized in 6-day drive: River Police     |     
  • Children in Gaza ‘going to bed starving’ amid blockade     |     
  • Plague of rats, insects latest challenge for war-torn Gazans     |     
  • Guterres tells UNSC two-State option near point of no return     |     
  • 14-year-old Suryavanshi smashes record-breaking T20 century     |     

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে লেবাননে ফের ইসরায়েলি হামলা, নয়জন নিহত

বিবিসি বাংলা সংঘাত 2024-12-03, 10:49am

tertret-cf8e8a4eda571a9ef95700d22feed24b1733201378.jpg




যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক সপ্তাহ না যেতেই আবারও লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার সন্ধ্যার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের দু’টি গ্রামে চালানো এই হামলায় অন্তত নয় জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

যদিও চুক্তি লঙ্ঘন করে হেজবুল্লাহই প্রথম ইসরায়েলি সেনা চৌকি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

ওই হামলার জবাব হিসেবে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কিছু অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর রাখতেই এটি করতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন আইডিএফ কর্মকর্তারা।

হেজবুল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্য ইসরায়েলের এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছে যে, আবারও লেবাননে হামলা চালানোর মাধ্যমেই ইসরায়েলই প্রথম যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

ওই হামলায় যে প্রাণহানি ও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, সেটির জবাবে “প্রতিরক্ষামূলক সতর্কতা” হিসেবেই ইসরায়েলি একটি সেনা চৌকি লক্ষ্য করে মর্টার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হেজবুল্লাহ।

ইসরায়েলের মাউন্ট ডোভ এলাকায় চালানো হেজবুল্লাহর ওই হামলায় যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

হেজবুল্লাহ’র হামলাকে “যুদ্ধবিরতি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন” হিসাবে বর্ণনা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুল। ইসরায়েল “শক্তভাবে” এই হামলার জবাব দিবে বলেও হামলার ঘটনার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন মি. নেতানিয়াহু।

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সম্প্রতি তারা সরাসরি যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে।

এ অবস্থার অবসানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় গত ২৭শে নভেম্বর দু’পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

যদিও গত সপ্তাহে যখন যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, হেজবুল্লাহ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে সেটার জবাবে পাল্টা হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না তার দেশ।

এরপর সোমবার পাল্টা-পাল্টি হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আবারও সংঘাতমত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

চুক্তিতে কী বলা হয়েছিল?

গত ২৭শে নভেম্বর যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, সেটির মাধ্যমে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে আশা করা হয়েছিল।

চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, লেবাননে বেসামরিক, সামরিক বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ইসরায়েল আক্রমণাত্মক কোনো সামরিক অভিযান চালাবে না।

এর বিপরীতে হেজবুল্লাহও ইসরাইলে কোনো হামলা চালাতে পারবে না। এমনকি লেবাননের অন্য কোনো সশস্ত্রগোষ্ঠীও যদি ইসরায়েলে হামলা চালাতে চায়, সেখানেও বাধা সৃষ্টি করবে হেজবুল্লাহ।

চুক্তিতে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে নিজেদের সশস্ত্র উপস্থিতি তুলে নিতে হেজবুল্লাহকে ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

একই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলও লেবানন থেকে তাদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।

চুক্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় যোগ দেবে বলে শুরু থেকেই জানা যাচ্ছিলো।

এ ব্যবস্থায় বর্তমানে লেবাননের সামরিক বাহিনী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এবং লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউনিফিল) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ উঠলে পক্ষগুলো সেটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাঠাবে।

লেবাননের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সেনা থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ফরাসি বাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং যোগাযোগের মাধ্যমে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে।

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশগুলো লেবাননের সামরিক বাহিনীকে একটি সামরিক কারিগরি কমিটি বা এমটিসি’র মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা করবে।

হেজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করার সময় নিজের ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রধানত তিনটি কারণ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন।

সেগুলোর একটি ছিলো- ইরানের হুমকির প্রতি মনোযোগ দেয়া। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও মি. নেতানিয়াহু তার ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন যে, ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান অংশ এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংস করেছে।

হেজবুল্লাহকে সবসময় ইরানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ঢাল হিসাবে দেখা হতো। কিন্তু হেজবুল্লাহ’র ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক ভারসাম্য ইসরায়েলের পক্ষে চলে গেছে।

দ্বিতীয় কারণটি হলো ইসরায়েলি সেনাদের ক্লান্তি। এই শব্দটি সরাসরি উচ্চারণ না করলেও তিনি বলেছেন যে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি বিরতি নেয়া এবং পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করাটা প্রয়োজন।

ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী দুই দিকে দুইটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

তবে এখন লেবাননে যদি সংঘাত শেষ হয়, তাহলে গাজায় আরও বেশি ইসরায়েলি বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধের কোনও সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।

আর তৃতীয় কারণ ছিল হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা। হেজবুল্লাহকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হলো হামাসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া। হামাস বরাবরই মনে করেছে যে ইরানের ‘এক্সিস অব রেজিসট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ এর বাকি সদস্যরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন যে, ইসরায়েল তার জিম্মি নাগরিকদের মুক্ত করার জন্যই যুদ্ধ করছে। যদিও তার এই দাবি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

গাজায় এখনও আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার ও আত্মীয়রা এখনও মি. নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের প্রধানমন্ত্রী গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করেছেন এবং বন্দিদের মুক্তি নিয়ে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন।