News update
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     
  • CPJ denounces Trump administration's action against AP     |     

১০০০ দিন পার হলো রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, শেষ কবে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-12-23, 8:57am

img_20241223_085307-50d3bcd86ce863dd0caf68745a05a88f1734922627.jpg




আর কিছু দিন পর বিদায় নেবে ২০২৪ সাল। শেষ হতে যাওয়া বছরে বিশ্বে যেসব বিষয় আলোচনায় ছিল তার মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত। এক হাজার দিন পার করা এ যুদ্ধ কবে থামবে তা কারই জানা নেই। তবে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ যুদ্ধের নতুন সমীকরণ দিতে পারেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। এই সময়কালে দুই দেশেরই অসংখ্য নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গৃহচ্যুত হয়েছে। এই যুদ্ধ ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের পর মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া-চারটি প্রদেশের আংশিক দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। এই চার প্রদেশের রাশিয়ার দখলে যাওয়া অংশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধে সমাপ্তি নিয়ে আলোচনার গতি পেয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর এই সংঘাতের ইতি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ট্রম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান করবেন’। কীভাবে তা করবেন, এ নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিলেও শপথ নেওয়ার আগেই যুদ্ধ বন্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ট্রাম্পের কিছু উদ্যোগ দেখা গেছে।

এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। লাখ লাখ মানুষ বাইরের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাত। এর ফলে সামরিক দিক থেকে কার কত ক্ষতি হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। গোয়েন্দাদের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা দেশগুলো যে হিসাব করেছে, তাতে এক দেশের হিসাবের সঙ্গে অন্য দেশের হিসাবের ব্যাপক ফারাক রয়েছে। তবে সব রিপোর্টই বলছে, দুপক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের প্রতিটি অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই যুদ্ধের সময় শোক নেমে এসেছে। বড় শহর থেকে দূরের গ্রাম পর্যন্ত সব জায়গায় সামরিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়মিত হয়েছে, রাতেও বারবার সাইরেন বেজেছে। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করেছেন। ঘুমহীন রাত কাটিয়েছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প আসার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তিনি এবার এই যুদ্ধ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন? প্রশ্ন উঠেছে, ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার নীতির, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কী হবে?

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দুদেশের মধ্যে কোনোরকম আলোচনা হয়নি। সম্ভাব্য আলোচনার আগে দুদেশই তাদের শক্তি বাড়িয়ে নিতে চাইতে পারে। ইউক্রেন ও রাশিয়া চাইবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের আরও কিছুটা জমি দখল করে নিয়ে আলোচনায় বসতে।

রাশিয়া ইরানের কাছ থেকে ড্রোন পেয়েছে। কুরস্কে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজারের মতো সেনাও যুদ্ধে নেমে পড়েছে। কিয়েভের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া এক লাখ সেনা পাঠাবার ক্ষমতা রাখে।

ইউক্রেন আবার আগস্ট থেকে রাশিয়ার কুরস্কের একটা অংশ দখল করে রেখেছে। সেখানে তারা সবচেয়ে দক্ষ সেনা পাঠিয়েছে।

ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া সেখানে ৫০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। তাছাড়া তারা পূর্ব ইউক্রেনেও দ্রুত কিছু এলাকা দখল করতে চায়।

ক্রমশ শীত আসছে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি রাশিয়া একদিনে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার গভীরে মার্কিন রকেট দিয়ে হামলার অনুমতি দেওয়া, ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত দুই বছরে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে মাঝারি বৃদ্ধি হয়েছে। তা সত্ত্বেও যুদ্ধের আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে ইউক্রেনের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লেগেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে, ইস্পাত শিল্প ও কৃষিক্ষেত্র।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, আগামী বছর কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। তবে যে কোনো আলোচনা শুরুর আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে এবং ইউক্রেনকে উপযুক্ত নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে হবে।

ক্রেমলিন বলেছে, গত জুনেই প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উচ্চাশা বন্ধ করতে হবে। আর চারটি এলাকা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। কিন্তু ইউক্রেন সেই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে।

গত শুক্রবার জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস প্রায় দুই বছর পর পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তারপরই জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার নেতা একঘরে হয়ে ছিলেন। এই ফোনের ফলে তার সেই দশা কিছুটা হলেও কমলো। জেলেনস্কি সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, প্রকৃত শান্তি দরকার।

যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিতে আগ্রহী জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে ‘চুক্তি’ করতে আগ্রহী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ফ্রান্সের প্যারিসে দুজনের বৈঠক শেষে ৮ ডিসেম্বর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে, ৭ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এ বৈঠকের আয়োজন করেছেন, যখন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে সংশয়ে রয়েছে কিয়েভ।

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সংঘাতের অবসান ঘটাবেন তিনি। তার এই প্রতিশ্রুতি কিয়েভের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কেননা দেশটি মনে করছে, এটি মূলত মস্কোর শর্তানুযায়ী হতে পারে। আর এমনটি হলে নিজ ভূখণ্ডের কিছু অংশ হয়তো তাদের হারাতে হবে ইউক্রেনকে।

দায়িত্ব গ্রহণের আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কাজ শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সংঘাত নিরসনে দুই দেশের সঙ্গে গোপনে ও প্রকাশ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টারা।

ট্রুথ স্যোশালে ট্রাম্প লেখেন, একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর এবং এই পাগলামি বন্ধের পথ বেছে নেবে জেলেনস্কি ও ইউক্রেন। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু হওয়া উচিত। অপ্রয়োজনে অনেক বেশি প্রাণ ঝরে গেছে, অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি এভাবে চলতে থাকে, এটি আরও বড় ও খারাপ কিছুতে রূপ নেবে।

যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে উল্টো দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ওই পোস্টে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেবল একটি কাগজের টুকরা এবং কয়েকটি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ সংঘাত বন্ধ করা সম্ভব নয়। ইউক্রেনের বাসিন্দারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

গত ৭ ডিসেম্বর প্যারিসে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনেস্কির বৈঠক হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কো জানিয়েছে, যেকোনো সমঝোতা তখনই সম্ভব হবে যখন ইউক্রেন রাশিয়ার অঞ্চলগুলো থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করবে।

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পরই নতুন করে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মার্কিন প্রশাসন। ইউক্রেনের জন্য নতুন এই অস্ত্র সহায়তার মধ্যে রয়েছে ড্রোন, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, হিমার্স রকেট লঞ্চারের গোলাবারুদ এবং আর্টিলারি সিস্টেমের সরঞ্জামসমূহ।

এদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়ক যেকোনো আলোচনায় ইউক্রেনের নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি।

৭ ডিসেম্বরের আলোচনার সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন ইউক্রেনের নেতা।

বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত অবসানের আলোচনা কীভাবে কার্যকর হতে পারে এ নিয়ে কিছু প্রাথমিক সূত্রের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনায় বসানোর প্রক্রিয়াটি জটিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখনও স্পষ্ট নয়।

সূত্র জানিয়েছে, সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প একটি বন্ধুত্বপূর্ণ, সম্মানজনক ও খোলামেলা আচরণ করেছিলেন। এ সময় কিছু বলার চেয়ে তিনি বরং শুনতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন বলে মনে হয়েছিল।

ট্রাম্প কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা যারা ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করছেন, তারা ঠিক কীভাবে যুদ্ধের সমাধানের পরিকল্পনা করছেন এবং যেকোনো মীমাংসার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের সুরক্ষা গ্যারান্টির দাবিটিকে দেখছেন এসব বিষয় এখনও স্পষ্ট করেননি। আরটিভি