যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে 'কিছুই করেননি'। তাদের দুজনেরই আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার কথা রয়েছে।
মি. ট্রাম্প এও বলেছেন যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির হাতে শান্তি আলোচনার জন্য 'কোনো কার্ড' নেই।
"আমি তাকে বৈঠকগুলোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না," বলেছেন তিনি।
ইউক্রেনে ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও তাদের অন্য সহযোগীরা কিয়েভকে অস্ত্রসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
সৌদি আরবে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার একদিন আগে সোমবার ইউক্রেন বিষয়ে ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। ইউক্রেন ও ইউরোপকে শান্তি আলোচনা থেকে বাদ দেয়া হতে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যেই ইউরোপের নেতাদের বৈঠকটি হয়।
তবে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অবশ্য ম্যাক্রঁ ও স্টারমারের প্রশংসাও করেছেন।
ট্রাম্প বলেন, তিনি ম্যাক্রঁকে 'বন্ধু' ভাবেন এবং স্টারমারকে তিনি 'একজন চমৎকার মানুষ' হিসেবে উল্লেখ করেন।
ম্যাক্রঁ সোমবার ওয়াশিংটন যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আর স্টারমার যাবেন বৃহস্পতিবার।
এর আগ চলতি সপ্তাহেই স্টারমার বলেছেন, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যের সৈন্যদের ইউক্রেনে মোতায়েন রাখতে তিনি প্রস্তুত।
যদিও ইউরোপের নেতারা রাশিয়ার সাথে আলোচনার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপের নেতারা নিয়মিতই বৈঠকে বসে থাকেন।
রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানসহ কিছু দেশ রাশিয়ার ওপর ২০ হাজারের বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
অনেক ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জানুয়ারিতে স্টারমার ১০০ বছরের একটি 'মাইলফলক' চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
তখন তিনি মি. জেলেনস্কিকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, "আমরা শুধু আজকের, এ বছরের বা আগামী বছরের জন্য নয়, বরং ১০০ বছর আপনার পাশে থাকবো; যুদ্ধ শেষে ইউক্রেন মুক্ত হওয়ার পরেও।"
ওদিকে ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত কেইথ কেলোগ বলেছেন, কিয়েভে মি. জেলেনস্কির সাথে তার 'বিস্তারিত ও ইতিবাচক' আলোচনা হয়েছে।
কেলোগ জেলেনস্কিকে একজন 'সাহসী নেতা' হিসেবে প্রশংসা করেন। যদিও কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প তাকে 'স্বৈরশাসক' বলেছিলেন।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জেলেনস্কি বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতার সাথে ফোনে কথা বলেছেন, যারা ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ায় রাখার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প তার শুক্রবারের সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন তার ব্যক্তিগত অংশগ্রহণ ছাড়া শান্তি আলোচনা শুরু করতে চাইছে না।
তবে তিনি জেলেনস্কির সমালোচনা অব্যাহত রেখে বলেছেন, "আমি বহু বছর ধরেই তাকে দেখছি। তার শহরগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তার মানুষ মরছে, তার সৈন্যরা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমি দেখছি কোনো কার্ড ছাড়াই তিনি আলোচনা করছেন। তার কোনো কার্ড নেই এবং আপনি এটি দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে যাবেন। আপনি বিরক্ত হয়ে যাবেন এবং আমার হাতে কার্ড চলে আসবে।"
গত কয়েক সপ্তাহে ট্রা্পের মুখে জেলেনস্কির সমালোচনা শোনার পর বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, এগুলোর সূত্রপাত মস্কো থেকে হয়েছে।
তবে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অবশ্যই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ফোন কল গ্রহণ করবেন। যদিও কয়েকবার তিনি অভিযোগ করেছেন যে জেলেনস্কি যুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সৌদি আরবে শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের অনুপস্থিতির বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, "রাশিয়া মনে করে জেলেনস্কির সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো অসম্ভব"।
তিনি বলেন তিনি বিশ্বাস করেন যে রাশিয়া আন্তরিকভাবে যুদ্ধ অবসানে একটি চুক্তি করতে চাইছে, কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিনকেই সেই চুক্তি করতে হবে এমনটা নয়।
যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছে যাতে করে দেশটি তার খনিজ সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে অধিকার দেয়।
ট্রাম্পকে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অতীত সামরিক সমর্থনের মূল্য পরিশোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শুক্রবার তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন চুক্তি স্বাক্ষরের কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থ ফেরত পাবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধ অবসানে পুতিন ও জেলেনস্কিকে অবশ্যই 'একত্রিত' হতে হবে।
শুক্রবার রাতেএক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে যেটি কিনা "আমাদর সম্পর্কে তাৎপর্য যোগ করবে"।
তিনি এটাও বলেন, "চুক্তির বিস্তারিত সঠিকভাবে নির্ধারণ করাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ"।
হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালটজ বলেছেন, "জেলেনস্কি চুক্তিকে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন"।