News update
  • Man held for tying, beating up youth on theft suspicion in Gazipur     |     
  • Sajid (2) lifted after 32 hrs from deep Rajshahi well, not alive     |     
  • Spinning sector seeks urgent govt step to prevent collapse     |     
  • Dilapidated bridge forces Lalmonirhat residents to risk life daily     |     
  • High-level consultation to shape BD climate finance strategy     |     

‘শিল্পীরাতো একটু অভিমানী হয়, অনেক কিছু নিয়ে হয়তো অভিমান ছিল’

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সেলিব্রিটি 2024-03-15, 8:15am

33a8d600-e1e4-11ee-9410-0f893255c2a0-5d69f94bd361a6d18cb2b5e017f8e8f21710468920.jpg




“শিল্পীরাতো একটু অভিমানী হয়। অনেক কিছু নিয়েই হয়তো তারমধ্যে অভিমান ছিল, হয়তো আমরা ধরতে পারিনি,” প্রয়াত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদকে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নৃ্ত্যশিল্পী ও তার পারিবারিক বন্ধু শামীম আরা নিপা।

বেশ কিছুদিন ধরে সাদি মোহাম্মদ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে বিবিসিকে জানান বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই নৃত্যশিল্পী।

“বিশেষ করে গত বছর জুলাইয়ে তার মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ ও পরে বোনের মৃত্যুর পর তার মধ্যে আত্মহত্যার বিষয়টি প্রবল হয়ে ওঠে,” বলছিলেন মিজ নিপা।

কাজের স্বীকৃতি পাননি বলেও অভিমান ছিল সাদি মহম্মদের। এর আগেও তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান এই নৃত্যশিল্পী।

বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় শিল্পী সাদি মহম্মদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন বিবিসিকে জানান, বুধবার আনুমানিক সাড়ে আটটায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি।

সেখান থেকে উদ্ধারের পর সাদি মহম্মদকে শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গলার দাগ এবং দরজা ভেঙ্গে যেভাবে বাসায় ঢোকা হয়েছে- সব মিলিয়ে একে আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পরিবারের সিদ্ধান্তের কারণে তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষণ্ণতায় ভোগার বিষয়টিই বারবার সামনে আসছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে শান্তিনিকেতনে

সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর। তারা বাবা সলিমউল্লাহ ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ অবাঙালি প্রতিবেশীরা তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তার বাবাকে বাড়ির সামনে হত্যা করা হয়।

পরবর্তীতে তার নামেই মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন সাদি মহম্মদ। তবে তাতে মন বসেনি তার।

সেসময়ই শান্তিনিকেতনে পড়ার সুযোগ পান তিনি।

বৃত্তি পেয়ে ১৯৭৫ সালে সংগীত বিষয়ে সেখানে পড়তে যান তিনি। এরপর বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

সেখানে শান্তিদেব ঘোষ ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গান শেখেন তিনি।

রবীন্দ্র সংগীত ও আধুনিক গানসহ তার ষাটটিরও বেশি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

২০০৭ সালে আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

২০০৯ সালে তার শ্রাবণ আকাশে ও ২০১২ সালে তার সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর আর সবশেষ ঠিকানা হলো মোহাম্মদপুর জামে মসজিদের কবরস্থানে।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রবীন্দ্র চর্চা এবং পরবর্তী প্রজন্মে তা ছড়িয়ে দেয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

এমনকি ’৭৫ পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্র চর্চার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক শক্তি নানাভাবে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল তা থেকে নতুন প্রজন্মকে বের করে আনার ক্ষেত্রেও তার বিশেষ ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

“সাদি মহম্মদ বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের কিংবদন্তি শিল্পী। বাঙালি সংস্কৃতির উদারনৈতিক ভাবধারাকে সামনে নিয়ে আসা, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ এবং তরুণ প্রজন্মকে সেই উদারবাদী, প্রতিবাদী, আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক প্রজন্ম হিসেবে তৈরি করার ক্ষেত্রে সাদি মহম্মদ ও তার রবীন্দ্র চর্চা বড় ভূমিকা রেখেছে,” বলেন তিনি।

তার এভাবে চলে যাওয়াকে ‘সামগ্রিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনতো বটেই, বিশেষ করে সংগীতের ক্ষেত্রে একে এক অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে আখ্যায়িত করেন এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

অভিমান থেকে চলে যাওয়া?

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাঙালী সংস্কৃতির বিকাশ এবং ‘রবীন্দ্র সঙ্গীতের জোয়ার’ আনতে যারা ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে সাদি মহম্মদ অন্যতম।

বাংলাদেশে রবীন্দ্র সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করা, একইসঙ্গে রবীন্দ্র সঙ্গীতের আবহ তৈরি আরও অনেককে এতে আগ্রহী করার পেছনে ভূমিকা ছিল এই শিল্পীর।

তিনি যেমন শিষ্য তৈরি করেছেন, তেমনই তৈরি করেছেন নতুন শিল্পী।

‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যদি একজনও পুরুষ রবীন্দ্র কণ্ঠের কথা বলা হয়, তবে প্রথম নামটিই আসবে সাদি মহম্মদ স্যারের’, বিবিসিকে বলছিলেন সংগীতশিল্পী অনিমা রায়।

কেবল গান দিয়েই নয়, পরবর্তী প্রজন্মের নতুন রবীন্দ্র শিল্পীদের বেশিরভাগই সাদি মহম্মদের হাতেই তৈরি বলে দাবি এই শিল্পীর।

কিন্তু সংস্কৃতির জগতেই হোক কিংবা রবীন্দ্র চর্চা- কোনক্ষেত্রেই নিজের প্রতিভা ও কাজের মূল্যায়ন পাননি বলে ক্ষোভ ছিল শিল্পী সাদি মহম্মদের। নৃত্যশিল্পী ও সাদি মহম্মদের পারিবারিক বন্ধু শামীম আরা নিপা যেমনটা বলছিলেন, সেই অভিমানের কথাই যেন প্রতিধ্বনিত হলো সংগীতশিল্পী অনিমা রায়ের কণ্ঠেও।

“এমন একটি পরিবার থেকে তিনি এসেছেন যেখানে তার বাবা পতাকা উড়িয়েছিল বলে বাড়িতে আগুন দেয়া হয়। তার চোখের সামনে বাবা-চাচাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্যার সারাজীবন সুর আশ্রয় করে, গান আশ্রয় করে বেঁচে ছিলেন। তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় পদক পাননি। এটা তার অভিমানের ক্ষেত্র ছিল,” বলেন মিজ রায়।

এসময় মায়ের মৃত্যু পরবর্তী বিষণ্ণতা সাদি মহম্মদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উঠে আসার খবরের বিষয়ে তিনি বলেন ‘সেগুলো বড় কারণ নয়’।

ছাত্র-ছাত্রী ও শ্রোতাদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেও রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মান পাননি সাদি মহম্মদ। আর এ নিয়ে দুঃখের কথা ব্যক্ত করতেন তার ঘনিষ্ঠজনদের সাথে।

কোন হিসেবে সাদি মহম্মদ সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন সেই প্রশ্নও তোলেন এই শিল্পী।

সাদি মহম্মদের মৃত্যু নিয়ে আরেক সংগীত শিল্পী ফারহিন খান জয়িতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, “গতকাল হাসপাতাল থেকে সাদী মামার বাসা...... পুরোটা সময় একবারো আমার মনে হয়নি কেন এমন করলো? আমার শুধু মনে হয়েছে এই জীবনটা , এই পৃথিবীটা আর ভালো লাগছিল না তাঁর। জোর করে এই ভালো থাকার ভানটা তাঁর জন্য ক্লান্তিকর ছিল। উচিৎ- অনুচিত... এই তর্কে যাওয়ার কিছু নেই আর।

এই মহান শিল্পী , একজন দারুণ ,নরম মানুষ- সাদী মামার যাত্রা সুন্দর হোক, আরামদায়ক হোক। উনার সকল কষ্টের অবসান হোক।” তথ্য বিবিসি বাংলা।