
ঢাকাই চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রনায়ক সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগে করা মামলায় তার স্ত্রী সামিরা হক ও খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন। ডিএমপি প্রসিকিউশন বিভাগের এডিসি (প্রশাসন) নাসির আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে, গত ২২ অক্টোবর আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক আতিকুল আলম খন্দকার তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, সামিরা ও খলনায়ক আশরাফুল হক মামলার এজাহার নামীয় পলাতক আসামি। তারা যেকোনো সময় বিদেশ গমন করবে মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তারা বিদেশ গমন করলে বাদী মামলার সুবিচার থেকে বঞ্চিত হবে এবং তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে। এ অবস্থায় মামলা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিদেশ গমন রহিত থাকা প্রয়োজন, তাই আসামিদের বিদেশ গমন রহিতকল্পে ‘স্টপ লিস্টে’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের অনুমতি বিশেষ প্রয়োজন।
এদিকে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহর মৃত্যুর পর রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। তবে, গত ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের করা রিভিশন মঞ্জুর করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন সালমান শাহর মামা মোহাম্মদ আলমগীর। মামলায় সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
সামিরা ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন— শিল্পপতি ও সাবেক চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুছি, খলনায়ক ডন, ডেবিট, জাভেদ, ফারুক, মে-ফেয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আব্দুস ছাত্তার, সাজু এবং রেজভি আহমেদ ফরহাদ (১৭)। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে মোহাম্মদ আলমগীর উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার বোন নিলুফার জামান চৌধুরী (নীলা চৌধুরী), বোনের স্বামী কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী এবং তাদের ছোট ছেলে শাহরান শাহ নিউ ইস্কাটনের বাসায় সালমান শাহর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন, সালমান শাহ ঘুমাচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর প্রোডাকশন ম্যানেজার সেলিম ফোন করে জানান, সালমান শাহর কিছু হয়েছে। দ্রুত তারা বাসায় ফিরে দেখেন, সালমান শাহ শয়নকক্ষে নিথর পড়ে আছেন এবং কয়েকজন বহিরাগত নারী তার হাত-পায়ে তেল মালিশ করছেন। পাশের কক্ষে সামিরার আত্মীয় রুবি বসে ছিলেন।
সালমান শাহর মা চিৎকার করে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পথে তারা সালমান শাহর গলায় রশির দাগ এবং মুখমণ্ডল ও পায়ে নীলচে দাগ দেখতে পান। পরে তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সালমান শাহ অনেক আগেই মারা গেছেন।
মোহাম্মদ আলমগীর আরও উল্লেখ করেন, সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী মৃত্যুর আগে ছেলের মৃত্যুকে হত্যা বলে সন্দেহ করে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি দরখাস্ত দাখিল করেন। এতে তিনি রমনা থানার অপমৃত্যু মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ এবং সিআইডির মাধ্যমে তদন্তের আবেদন জানান।
সালমান শাহর বাবার মৃত্যুর পর আলমগীর তার বোনের পক্ষ থেকে মামলাটি পরিচালনা করছেন। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ মারা গেলে প্রমাণ সাপেক্ষে তারা মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন। তবে, এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে সালমান শাহকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।আরটিভি