News update
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     
  • Imported fruit prices surge by up to Tk 100 per kg     |     
  • 35% of air pollution in BD originates from external sources: Experts     |     

হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার কেন হয়?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক স্বাস্থ্য 2024-03-09, 11:34am

dfopiofopo-82baca4ce74b4a02f51aee60562455f01709962488.jpg




সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ‘হেড অ্যান্ড নেক’ অর্থাৎ ‘মাথা ও ঘাড়’ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের শিশুরা যত ধরনের ক্যান্সারে ভোগে তার আট থেকে ১০ শতাংশই হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত।

শিশুদের মধ্যে এই ক্যানসার জিনগত কারণে হয় বলে এটি প্রতিরোধের কোনো উপায় নেই। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি নির্ণয় হলে এবং সঠিক সময় চিকিৎসা নিলে সব বয়সী রোগীর শতভাগ সেরে ওঠা সম্ভব।

কিন্তু দেরিতে শনাক্ত হলে এর ফল মারাত্মক হতে পারে।

এই প্রতিবেদনে হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারের বিষয়ে বিস্তারিত জানবো, যার সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও নাক কান গলা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার কী

হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার বলতে মানুষের মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত অন্তত ৩০টি অংশের ক্যান্সারকে বুঝিয়ে থাকে।

এর মধ্যে রয়েছে মানুষের নাক, নাকের গহ্বর, সাইনাস, ঠোঁট, জিহ্বা, মাড়ি, গালের ভেতরের অংশ, মুখের তালু, গলা, কণ্ঠনালী, শ্বাসনালী, খাদ্যনালী, টনসিল, লালাগ্রন্থি, হেড নেকের ত্বক, ইত্যাদি।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পুরুষের প্রথম ১০টি ক্যানসারের মধ্যে অন্তত চারটি এই হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের সাথে সম্পৃক্ত।

অন্যদিকে, নারীদের প্রথম ১০টি ক্যানসারের মধ্যে তিনটি হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসারের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ সব ক্যান্সারের মধ্যে হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

লক্ষণ

মাথা ও ঘাড়ের একেকটি অংশের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে একেক ধরণের লক্ষণ দেখা দেয়। তাই নীচের লক্ষণের কোনো একটি বা একাধিক দেখা দিলে এবং ১৫ দিনেও না সারলে দেরী না করে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলেছেন চিকিৎসকরা।

গলায় দীর্ঘসময় ধরে ব্যথা, খাবার চিবিয়ে খেতে বা গিলতে কষ্ট

শ্বাস নিতে কষ্ট, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে গেলে শব্দ হওয়া, গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া

অবিরাম কাশি

গালে, জিহ্বায় বা মুখ গহ্বরে কোথাও কোনো সাদা বা লাল ক্ষত হওয়া, যা দুই সপ্তাহ পরেও সারছে না

দীর্ঘদিন সর্দি, নাক থেকে রক্তক্ষরণ

গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, কথা বলতে কষ্ট হওয়া

মুখের কোনো অংশ যেমন চোখের ওপরে, ঘাড়ে, গলায়,নাকের চারপাশ, কানের আশপাশ বা চোয়াল ফুলে যাওয়া বা মুখের এক পাশ ফুলে যাওয়া, যা দীর্ঘদিনেও সারছে না

মুখে ব্যথা, মুখ খুলতে সমস্যা, মুখে অসারতা বা মুখ ঝুলে যাওয়া

কানে ব্যথা, এক কানে শুনতে সমস্যা

দাঁতে ব্যথা

থেমে থেমে জ্বর ও দীর্ঘদিন মাথাব্যথা

কেন হয় এবং কাদের হয়

এই ক্যান্সার হওয়ার মূল কারণ তামাক ও মদ।

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান

ধূমপান ও মদ্যপান একসাথে করা

পান, জর্দা, সাদা পাতা, চুন, গুল, খৈনি ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস

মুখ অপরিস্কার রাখা ও দাঁত ব্রাশ না করা

দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

বংশে কারো ক্যান্সারের ইতিহাস এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়

সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির অতিরিক্ত সংস্পর্শ, গায়ের রং পুড়িয়ে কালো করার প্রবণতা বেশি থাকলে ঠোঁটের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে

মাথা ও ঘাড়ে অতিরিক্ত রেডিয়েশন ট্রিটমেন্ট নেয়া

নির্মাণ, টেক্সটাইল, সিরামিক ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে কাজ করা, যা মানুষকে প্রতিনিয়ত কাঠের ধুলো, ফর্মালডিহাইড, অ্যাসবেস্টস, নিকেলসহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আনে, এতে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে

এপস্টাইন-বার ভাইরাসের সংক্রমণে মনোনিউক্লিওসিস কিংবা অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে অথবা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে

শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সীরা এতে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুন বেশি

দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জন ক্যান্সার আক্রান্ত পুরুষের মধ্যে ৩৩ জন এবং ১০০ জন ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ১১-১৩ জন হেড ও নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত।

ঝুঁকি কমাতে করণীয়

এ ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কয়েকটি বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা-

ধূমপান, মদপান ও যেকোনো ধরণের তামাক গ্রহণ বন্ধ করা

মুখের ভেতর পরিস্কার রাখতে প্রতিদিন ব্রাশ করা

নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে চেকআপ করানো কারণ প্রায়শই মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের লক্ষণ দাঁতের পরীক্ষা করাতে গিয়ে বেরিয়ে আসে

চিকিৎসকের পরামর্শে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস-এইচপিভি টিকা গ্রহণ

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ছাতা ও টুপি ব্যবহার, ত্বকে সানস্ক্রিন ও ঠোঁটে সানস্ক্রিনযুক্ত লিপবাম ব্যবহার করা

চিকিৎসা

চিকিৎসা দেয়ার আগে চিকিৎসকরা মূলত রোগীর ইতিহাস জেনে নিয়ে থাকেন যে, কবে থেকে এসব লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।

এরপর কোন অংশে ক্যান্সার সেই তথ্যের ভিত্তিতে শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পিটিই, ন্যাজো অ্যান্ডোস্কোপি, সেইসাথে রক্ত ও প্রস্রাবের বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়।

পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা অস্ত্রপচার করতে পারেন এবং বায়োপসি করানো হতে পারে।

প্রয়োজন হলে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি চলে।

তবে ক্যান্সার একবার সেরে উঠলেও পুনরায় ফিরে আসতে পারে। এজন্য চিকিৎসকরা ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার পর পরবর্তী চেক আপ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।