News update
  • 2 dead, six hurt in Sherpur micro-autorickshaw-motorbike crash     |     
  • One killed over loud music row at wedding party in Natore     |     
  • Fire breaks out at jacket factory in Chattogram     |     
  • Dhaka, Delhi agree to bring down border killings to zero     |     
  • Natore’s Baraigram OC closed over negligence in bus robbery case     |     

মধ্য বয়স থেকে যে অভ্যাসগুলো আপনার আয়ু বাড়াবে

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক স্বাস্থ্য 2024-05-09, 10:30am

sakjkdasldla-463239d0a2436be8dfbc1a4a745aa1611715229022.jpg




মধ্যবয়সে পৌঁছালে অনেকেই বয়স বেড়ে যাওয়া এবং সেইসাথে নানা জটিলতা নিয়ে উদ্বেগে থাকেন।

বয়স তো বাড়বেই, সেটি তো থামানো যাবে না। তবে আপনি বুড়িয়ে যাবেন কি, যাবেন না সেই নিয়ন্ত্রণ কিন্তু আপনার হাতেই আছে।

অনেকেই মনে করেন কে কতো বছর বাঁচবেন তা নির্ভর করে জিনের ওপর।

কিন্তু গবেষণা বলছে এর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবেশের ওপর নির্ভর করে, যেটি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

সুস্থভাবে বেশিদিন বাঁচতে, বয়সকালে অসুস্থ না থেকে হাসি খুশি ও স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতে ছয়টি দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বন্ধুত্ব

আইরিশ জেরিয়াট্রিশিয়ান বা বয়স্কদের রোগ বিশেষজ্ঞ রোজ অ্যান কেনির মতে, সুস্থভাবে দীর্ঘ সময় বাঁচতে বন্ধু থাকা খুব জরুরি।

দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য ব্যায়াম, সুষম খাবার এবং ধূমপান পরিহার যেমন জরুরি, বন্ধুত্বের গুরুত্ব ঠিক তেমনই।

কারণ ভালো বন্ধু মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, তার প্রভাবে আয়ুও বাড়ে।

ভালো বন্ধু বানাবেন কীভাবে তা নিয়ে মনোবিজ্ঞানী জুলিয়ান হল্ট-লুন্ডস্ট্যাড দুটি উপায়ের কথা বলেছেন।

১. পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সাথে আপনার ইতোমধ্যে যে সম্পর্ক আছে তা শক্তিশালী করতে পারেন। এজন্য তাদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান ও যোগাযোগ বাড়ান।

২. তবে আপনার যদি এমন বিদ্যমান সম্পর্ক না থাকে তবে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলুন এজন্য বাড়তি প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

আপনার সাথে মিলে যায় এমন মানুষ খুঁজে পেতে অনেক মানুষকে যাচাই করতে হতে পারে। তাই আপনি যদি অল্প সময়ে ভালো বন্ধু খুঁজে না পান তাহলে ধৈর্য হারাবেন না।

মনে রাখবেন সেরা বন্ধু রাতারাতি হয় না এবং সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগে।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

হাসি

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একদম ছোট শিশু দিনে গড়ে ৪০০ বার হাসে। কিন্তু বয়স যতো বাড়ে হাসির পরিমাণ ততো কমে।

হাসলে আমাদের মানসিক চাপ কমে যায়। সেটি নার্ভাল সিস্টেম সংক্রান্ত চাপ হোক বা হরমোন সংক্রান্ত চাপ।

গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেস বা উদ্বেগে ভুগছেন এমন নারীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক বা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দুই গুণ বেশি এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে তিনগুণ বেশি।

কিন্তু হাসি ও আশাবাদী মনোভাব মানসিক চাপ কমায়। এতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।

সুখী ব্যক্তিদের ওপর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে তাদের অকালে মৃত্যু হার বাকিদের তুলনায় তিন দশমিক শতাংশ কম। সুখী লোকেরা তাদের চেয়ে কম সুখীদের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি বাঁচতে পারে।

সুখী হতে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করতে পারেন। ভালো লাগার মানুষের সাথে সময় কাটাতে পারেন।

এদিকে সুখী হওয়ার পাশাপাশি আশাবাদী হওয়া ও ইতিবাচক চিন্তাভাবনাও বেশ জরুরি।

গবেষণা বলছে হতাশাবাদী ব্যক্তিদের চেয়ে আশাবাদী মানুষের অকালে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪২ শতাংশ কম।

তাই পরিস্থিতি যেমনই হোক, আপনার বয়স যতোই হোক 'হাসুন'। হাসির চেয়ে ভালো ওষুধ নেই। এটি আপনাকে দীর্ঘজীবী করবে।

ইতিবাচক ও আশাবাদী থাকার আরেকটি উপায় হলো প্রার্থনা করা।

জাপানের ওকিনাওয়া শহরে শতবর্ষীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যারা ধর্মে বিশ্বাস রাখেন এবং যার যার ধর্ম পালন করেন তারা অবিশ্বাসীদের চাইতে এক থেকে পাঁচ বছর বেশি বাঁচেন।

কারণ তারা এই জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার থাকেন। যেকোনো বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে তারা সৃষ্টিকর্তার কথা ভেবে সান্ত্বনা পান।

তবে যারা ধর্মে বিশ্বাস রাখেন না তারা ধ্যান করা, বিভিন্ন সামাজিক ক্লাবে যোগ দেয়ার মাধ্যমে বেশিদিন বাঁচার স্বাদ নিতে পারেন।

ঘুম

আপনি যদি মধ্য বয়সে এসে পৌঁছান তাহলে প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া ভীষণ জরুরি। সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম হলো আদর্শ। এর চেয়ে কম ঘুম বা এর চেয়ে বেশি ঘুম আমাদের মস্তিষ্ক ও হার্টের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে।

উদাহরণস্বরূপ, প্রতি রাতে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার কম ঘুমলে প্রাথমিক মৃত্যুর ঝুঁকি ১২ শতাংশ বেশি, যেখানে প্রতি রাতে আট থেকে নয় ঘণ্টার বেশি ঘুমলে আপনার আয়ু ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

ঘুমের সময় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইনট্রিগ্রেন নামে এক ধরনের আঠালো পদার্থ নিঃসরণ করে। এই ইনট্রিগ্রেন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে টি সেলসকে সাহায্য করে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন ঘুম আয়ু বাড়াতে কতো সাহায্য করে।

এটা ঠিক যে বয়সের সাথে সাথে ঘুম বিপর্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু ঘুমের সাইকেল ঠিক করার নানা পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো অনুসরণ করে যে করেই হোক ঘুমের রুটিন ঠিক করুন।

ঠান্ডা পানিতে গোসল

প্রতিদিন সকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল, কিংবা ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটা হরমায়েসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের কোষে বয়স বাড়ার গতি কমিয়ে দেয়।

এতে ভালো কোষের সংখ্যা বাড়ে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে, ডিপ্রেশনের ঝুঁকি কমবে, মন প্রশান্ত ফুরফুরে থাকে। যা দীর্ঘায়ুর অন্যতম নির্দেশক।

ব্যায়াম

আয়ু বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম কিংবা কায়িক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আপনাকে মূলত এমন ব্যায়াম করতে হবে যা আপনার হৃৎস্পন্দন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বাড়বে।

এতে মূলত হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও পেশির সক্ষমতা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিস, স্থূলতা থেকে দূরে থাকা যায় এবং আয়ু বাড়ে।

ব্রিটেনের এক্সারসাইজ ক্লিনিক্যাল ফিজিওলজিস্ট হিথার মিল্টন জানিয়েছেন যারা মধ্য বয়সে পৌঁছেছেন তাদের উচিত নিয়মিত হার্ট, ফুসফুস ও পেশির সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যায়াম করা।

সেটা হতে পারে নিয়মিত দ্রুত হাঁটা এবং ভারোত্তোলন। কার জন্য কতোটুকু মাত্রার ব্যায়াম দরকার সেটি একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ বলতে পারবেন।

তবে গড়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উচিত হবে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা সপ্তাহে মাত্র ৭৫ মিনিট ব্যায়াম করেছেন অর্থাৎ প্রতিদিন হয়তো ১০ মিনিটের কিছু বেশি, তাদের ব্যায়াম না করাদের তুলনায় এক বছর আট মাস এবং যারা সপ্তাহে পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা ব্যায়াম করেছেন তাদের আয়ু অন্তত চার বছর বেড়েছে।

পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে টানা দুই সপ্তাহের হার্টের টিস্যু শক্তিশালী হয়, ফুসফুস বেশি পরিমাণে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে, রক্ত নালীগুলো আগের চেয়ে বেশি ইলাস্টিকের মতো মজবুত হয় এবং নতুন লোহিত রক্তকণিকা পেশিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে।

একটি ফিটনেস ওয়াচের মাধ্যমে ভিওটু ম্যাক্স, হার্ট রেট এবং স্টেপস কাউন্টের সাহায্য নিজের উন্নতি পরখ করতে পারেন।

কিন্তু আপনার ব্যায়ামের সুফল নষ্ট হয়ে যেতে পারে যদি আপনি টানা এক বা দুই ঘণ্টা বসে থাকেন।

এক্ষেত্রে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ইনফ্লামেশন অ্যান্ড এজিং-এর পরিচালক জ্যানেট লর্ড

আধা ঘণ্টা পর পর বসা থেকে উঠে হাঁটার অথবা চেয়ারে বসে দুহাত ক্রস করে উঠবস করার পরামর্শ দিয়েছেন।

যারা ব্যায়াম করেন না তাদের নানান রোগে ভোগার আশঙ্কা যেমন বেশি, তেমনি তারা বেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। অন্যদিকে কর্মঠ মানুষেরা বেশিদিন তো বাঁচেনই তাও সুস্থ ও স্বাধীনভাবে।  বিবিসি বাংলা