News update
  • Dhaka’s air ‘unhealthy for sensitive groups’ Wednesday morning     |     
  • US proposes that the UN authorize a Gaza stabilization force for 2 years     |     
  • Democrat Zohran Mamdani is elected New York City mayor     |     
  • Martyr Mugdha's brother Snigdha steps into politics with BNP     |     
  • FAO Warns of ‘Silent Crisis’ as Land Loss Threatens Billions     |     

দিনে কতটুকু আম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক স্বাস্থ্য 2024-05-27, 10:07pm

tweryreyer-46da904f8ef40727d61485ad4c9f70f21716826148.jpg




বাংলাদেশের বাজারে ইতোমধ্যে গাছপাকা রসালো আম ওঠা শুরু হয়েছে। আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, রাজশাহী বা চুয়াডাঙ্গার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুপরিচিত নানা জাতের আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

তবে আম যে শুধুমাত্র তার স্বাদের জন্য অনন্য, তা নয়। এই ফলটি বিশেষ পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। কিন্তু পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই আছেন, যারা আম খেতে পারেন না।

কারণ আমে প্রাকৃতিকভাবেই চিনির পরিমাণ বেশি। তাই এটি খেলে মানুষের শরীরের স্যুগারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

এ কারণে অনেকে বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়া উচিৎ না। কিন্তু আম কি আসলেই ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ? ডায়াবেটিসের রোগীরা কি কখনও আম খেতে পারবেন না? যদি পারেন, সেটি কখন?

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে সেসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

আমের পুষ্টিগুণ

বাংলাদেশে এপ্রিল মাস থেকেই কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে পাকা আম আসতে শুরু করে মে মাস থেকে। জুলাই বা অগাস্ট পর্যন্ত দেশীয় আম পাওয়া যায়।

ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, শর্করা, আমিষ, ভিটামিন এ, বিটা ক্যারটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে।

তাই, কাঁচা আমের তুলনায় আঁশযুক্ত পাকা আম শরীরের জন্য বেশি ভালো।

তিনি বলেন, “পাকা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় উপাদান পেকটিন থাকে, যা পাকস্থলিতে থাকা খাদ্যকে ভালোভাবে পরিপাক হতে সাহায্য করে।”

এছাড়া, আমের বিশেষ কিছু এনজাইম খাদ্য উপাদানের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে কাজ করে। যা সামগ্রিকভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় অবদান রাখে।

আমে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও অন্যান্য ২৫ ধরনের ক্যারোটেনয়েডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, আমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও চোখের চারপাশের শুষ্কভাবও দূর করে।

আমে প্রচুর বিচাক্যরটিন থাকায় এবং ভিটামিন এ , ই থাকায় আমাদের স্কিন খুব ভালো রাখে এবং এটি খেলে চোখের দৃষ্টি শক্তিও ভালো থাকে।

“ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে আম”, তিনি যোগ করেন।

তবে পাকা আমের উপকারিতাও কম না। কৃষি তথ্য সার্ভিসের বর্ণনা অনুযায়ী, পাকা আমে যেহেতু কাঁচা আমের তুলনায় শর্করার পরিমাণ বেশি, তাই কাঁচা আম দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম উপকারী। এটি বাইল এসিড নিঃসরণ বাড়ায়। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে পরিষ্কার করে। দেহে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।

সবমিলিয়ে, আমে থাকা নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানের জন্য এটি উপরে উল্লিখিত বিষয়ের বাইরেও খসখসে চামড়া, চুলপড়া, হজমের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

একাধারে অতুলনীয় স্বাদ ও একাধিক পুষ্টিগুণের কারণেই একে ফলের রাজা বলা হয়।

দৈনিক কতটুকু আম খাওয়া উচিৎ?

একজন মানুষের দৈনিক কতটুকু আম খাওয়া উচিৎ, এটি আসলে প্রশ্নসাপেক্ষ একটি বিষয়। কারণ একজন মানুষের শারীরিক পরিস্থিতি কেমন, তার উপর নির্ভর করবে যে ওই ব্যক্তি কতটুকু আম খেতে পারবেন, কতটুকু পারবেন না।

এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ মিজ তাসনিম বলেন, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অনায়াসেই দৈনিক দু’টো আম খেতে পারেন।

সেক্ষেত্রে, ফজলি আম খাওয়াটা বেশি ভালো বলে জানান তিনি। কারণ ফজলি আমে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ অনেক।

তবে যারা কিডনি বা ডায়াবেটিসের রোগী, আম খাওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি জানান, কিডনি রোগীদের ডাক্তার ও পুষ্টিবদের সাথে পরামর্শ করে আম খাওয়া উচিৎ। কারণ আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

এছাড়া, যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এর প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯ থেকে ৬৪ বছরের পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকায় এটি ৬০ মিলিগ্রাম।

এখন, যেহেতু এক কাপ আমে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, সেহেতু অন্য কোনও জটিলতা না থাকলে একজন সুস্থ মানুষ ওই পরিমাণ আম খেতেই পারেন।

অতিরিক্ত আম খেলে মানুষ মোটা হয়?

মিজ তাসনিম জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ৭৯ থেকে ৮২ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়।

এছাড়া, একটি আমের ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পানি থাকে। তবে মজার বিষয় হলো, আমে কোনও 'কোলেস্টেরল' থাকে না। এমনকি এতে ক্ষতিকর লবণও নেই।

তারপরও অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে আম খেতে চান না।

“আমে কোলেস্টেরল কম থাকলেও এতে শর্করা বেশি থাকায় এবং অন্যান্য খাবারের বাড়তি ক্যালরির জন্য এটি পরবর্তীতে আমাদের শরীরে গিয়ে শর্করা ই ফ্যাট হিসেবে জমা হয়,” বলেন পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, “আমে যেহেতু ক্যালরি অনেক, তাই বেশি আম খেলে ওজন বেড়ে যাবে।”

“সেজন্য যার ওজন বেশি থাকবে, সে আরও কম আম খাবে। আর কেউ আম না হয় খেল, কিন্তু আম খেলে সে অন্য কিছু খাবে না। তাহলেই তো হলো,” তিনি যোগ করেন।

“সকালে বা দুপুরে আম খেল, তার পরিবর্তে ভাত খেল না। তাহলে তো মোটা হবে না।”

এ বিষয়ে মিজ তাসনিম বলেন, “আমের ক্যালরি এবং শর্করা তুলনামূলক বেশি। তাই কেউ সারাদিনের মোট ক্যালরি চাহিদার বেশি আম খেলে সেটা আমাদের শরীরে গিয়ে ফ্যাট হিসেবে জমতে পারে। যার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।”

কিন্তু তিনিও জানান যে পরিমিত খেলে “মোটা হবার সম্ভাবনা কম।

ডায়াবেটিস রোগী কতটুকু আম খেতে পারবেন?

অনেকেই বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীরা আম খেতে পারবেন না। যদিও এ বিষয়ে গবেষণার ফলাফল এবং চিকিৎসকদের বক্তব্য ভিন্ন কথা বলছে।

২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘ম্যাংগো অ্যান্ড ডায়াবেটিস’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে যে ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ না।

তবে তাদেরকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আম খেতে হবে।

এই গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি সতর্কতার সাথে আম খাওয়া হয়, তাহলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে না। তবে একসাথে অনেকখানি না খেয়ে অল্প আম খাওয়া উচিৎ।

যেমন, একজন ডায়াবেটিক রোগী দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম আম খেতে পারেন। অথবা, দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিনি ৫০ গ্রাম করে তিনবারও আম খেতে পারেন।

তবে খাবার খাওয়ার পর এমনিতেও একজন মানুষের রক্তে স্যুগারের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। সেখানে আম খেলে এটি আরও বেশি পরিমাণে বাড়বে। সেইসাথে, অন্যান্য শর্করার সাথে আম বেশি খেলেও ডায়াবেটিস বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে মিজ তাসনিম পরামর্শ দেন, “দুই বেলার মেইন খাবার খাওয়ার পরে আম খাওয়া ভালো। অথবা, খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর আম খাওয়া উচিৎ।”

“আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি মাত্রার, ৬০ থেকে ৮৫। তাই বেশি আম খেলে রক্তে শর্করা বেড়ে যেতে পারে। একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক একটি ছোট আম বা অর্ধেক মাঝারি আম খেতে পারেন,” বলেন তিনি।

এ বিষয়ে ডা. খানও বলেন, “আম বেশি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হবে। তাই যত এড়িয়ে চলবে, তত ভালো। কিন্তু এখন যেহেতু এটা মৌসুমি ফল, সেহেতু একবারে না খেলে কেমন হয়? কম খাক, তাহলেই হলো। এটা এরকম না যে একেবারেই খাবে না।”

তিনি আরও বলেন যে এক টুকরো আম খেলে যে সমস্যা হয়, তার চেয়ে বেশি হয় যদি কেউ দুই চামচ পরিমাণ চিনি খান। “একটু আম খেলে কী হবে? আবার কমে যাবে।”

কিন্তু সাধারণত আম খেলে মানুষ একটি বা কয়েক টুকরা আম খায়। তবে যখন আম দিয়ে শরবত বানানো হয়, তখন সেখানে একাধিক আম ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই না, সঙ্গে কিছুটা চিনিও দেওয়া হয়। তখন তাতে চিনির মাত্র দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই, আমের শরবত খাওয়ার চেয়ে অল্প পরিমাণ আম খাওয়া ঢের ভালো।

সুতরাং, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে কোনোপ্রকার সমস্যা ছাড়াই ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত পরিমাণ আম খেতে পারবেন। বিবিসি বাংলা