News update
  • BNP expels 73 leaders for contesting first phase of UZ polls     |     
  • Chuadanga witnesses season’s highest temperature at 42.7°C     |     
  • Dhaka, Bangkok to work together to deal with Rohingya issue: FM     |     
  • Dhaka, Bangkok ink five bilateral documents     |     
  • Bangladeshi youth shot dead by Indian BSF in Lalmonirhat     |     

ঢাকায় চিকিৎসায় অবহেলা করে বিদেশী পাইলটকে হত্যার অভিযোগ বোনের

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2023-01-30, 11:13pm

aa6b2730-a08f-11ed-aa07-9d2a7790a71c-c974054f0b6829ddd9a843f7fa65d9f21675098797.jpg




ঢাকার একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালের অবহেলায় জর্ডান-আমেরিকান একজন পাইলটের মৃত্যু হয়েছে বলে তার বোন অভিযোগ করেছেন।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার পরেও গালফ এয়ারের পাইলট মোহাম্মদ ইউসুফ হাসান আল হেন্দিকে যথাসময়ে এবং ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার বোন তালা ইলহেন্দি জোসেফানো।

যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা তালা ইলহেন্দি ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাইতে বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান। তারা দুজনেই জর্ডান-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক।

‘’আমি এতদূর বাংলাদেশে এসেছি শুধুমাত্র আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে। আমার ভাই ভুল চিকিৎসা এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন,’’ বলেছেন তালা ইলহেন্দি।

এই ঘটনায় গালফ এয়ার ও ইউনাইটেড হসপিটালের বিরুদ্ধে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।ঐ

তবে এ অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, ভুল চিকিৎসা দেয়ার এবং চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ "সম্পূর্ণ অসত্য ও মনগড়া।"

কী অভিযোগ করেছেন তালা ইলহেন্দি

ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য পেতে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে এসেছেন জর্ডান এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক তালা ইলহেন্দি জোসেফানো।

সোমবার তিনি ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, তার ভাই গালফ এয়ারলাইন্সের পাইলট মোহাম্মদ ইউসুফ হাসান আল হেন্দি একজন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন।  ঢাকার হোটেল থেকে ১৪ই ডিসেম্বর রাত পৌনে তিনটায় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য যখন তিনি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে যান।

ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া করার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  

তালা ইলহেন্দি অভিযোগ করেছে, ভোর সাড়ে পাঁচটায় তার ভাইকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার পর আরও তিনবার হার্ট অ্যাটাক হয়। কিন্তু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তির পরেও কোন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ উপস্থিত হননি এবং তার হৃদরোগের সঠিক চিকিৎসা শুরু করা হয়নি।

‘’প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট পার হওয়ার পরেও আমার ভাইয়ের জ্ঞান ফিরিয়ে আনতে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেননি তারা। এমনকি যথাযথ পরামর্শের জন্য কোনও কার্ডিওলজিস্টকেও তারা হাজির করতে পারেননি,’’ তিনি অভিযোগ করেছেন।

‘’আমার ভাই তৃতীয়বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট করলে সোয়া দুই ঘণ্টা পর্যন্ত তাকে কোনও চিকিৎসা সেবা ছাড়াই ফেলে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ তিনি চিকিৎসা বঞ্চিত ছিলেন।...সংকটাপন্ন অবস্থায় যখন আমার ভাইকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়, তখন সেখানে কোন কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন না। বরং অনভিজ্ঞ জুনিয়র কনসালটেন্ট তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। যার এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার যোগ্যতা ছিল না। তারা রোগীর কাগজপত্র হেরফের করার চেষ্টা করেছেন,’’ তিনি অভিযোগ করেছেন।

তার অভিযোগ,  ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির পর পাইলট ইউসুফ হাসানের যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, তার ৮০ শতাংশ প্রয়োজন ছিল না। জরুরি বিভাগে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন না। এভাবে চিকিৎসাকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে তাকে সংকটাপন্ন অবস্থার দিকে ঢেলে দেয়া হয়েছে।

এমনকি অস্ত্রোপচারের অনুমতির জন্য যখন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখনো তাদের রোগীর প্রকৃত চিত্র এবং ঝুঁকি জানানো হয়নি।

‘’তারা যখন আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে, আমাদের সঠিক পরিস্থিতি অবহিত করেনি। এমনকি ঝুঁকি সম্পর্কেও ঠিকমতো বলেনি,’’ বলেছেন তালা ইলহেন্দি।

জর্ডান-আমেরিকান নাগরিক মোহাম্মদ ইউসুফ হাসান আল হেন্দি দুই সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে বাহরাইনে বসবাস করতেন।

তালা ইলহেন্দি অভিযোগ করেছেন, পাইলট ভাইয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য এবং কাগজপত্র চাওয়ার পরেও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেগুলো সরবরাহ করেনি। বরং হাসপাতালের সিসিটিভি ও কাগজপত্রে কারসাজি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

এসব অবহেলার কারণে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে হাসপাতালটির লাইসেন্স বাতিল করার জন্যও তিনি দাবি করেছেন।

ইউনাাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে ২০২০ সালের ২৭শে মে রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে নির্মিত করোনা ইউনিটে আগুন লেগে পাঁচ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেছিল পুলিশের তদন্ত কমিটি।  সেই ঘটনায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেছিলেন নিহতদের একজন স্বজন।  সেই ঘটনায় পাঁচ রোগীর পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

তার আগের মাসেই একজন রোগীর স্বজন অভিযোগ করেছিলেন, তার মা চিকিৎসাধীন থাকার সময় কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার কারণে ভেন্টিলেশনে থাকার পরও তাকে বের করে দেয়া হয়।

গালফ এয়ারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পরিবারের

তালা ইলহেন্দি জোসেফানো অভিযোগ করেছেন, তার ভাই পাইলট মোহাম্মদ ইউসুফ হাসান আল হেন্দি মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক যে গালফ এয়ারলাইন্সের হয়ে কাজ করতেন, অসুস্থ হওয়ার পরে তারাও দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে।

তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘’পরিবারের অনুপস্থিতিতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে কোনও কর্মকর্তাকে হাসপাতালে পাঠায়নি গালফ এয়ার। আমার ভাইয়ের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি গালফ এয়ারকে।‘’

এই ঘটনায় তিনি এর মধ্যেই বাহরাইনে গালফ এয়ারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন।

ইউনাইটেড হাসপাতাল কি বলছে?

যদিও তালা ইলহেন্দি জোসেফানো বলেছেন, তিনি গত কয়েকদিন ধরেই ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন, কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তালা ইলহেন্দির অভিযোগের বিষয়ে তারা জানতে পেরেছেন।

পরে দেয়া এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল বলেছে যে, ১৪ ডিসেম্বর সকাল পৌনে পাঁচটার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় মোহাম্মদ ইউসুফ আল হেন্দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার সহকর্মীরা জানান, তিনি অচেতন থাকায় তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিবেচনা করে এয়ারপোর্টেই চার-পাঁচ মিনিট সিপিআর দেয়া হয়।

ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা সেবা দেয়ার পরও তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।

এতে বলা হয়, "ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর একজন ভদ্রমহিলা আমাদের কাছে মোহাম্মদ ইউসুফ আল হিন্দির বোন বলে নিজেকে পরিচয় দেন এবং ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ ও রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত মেডিকেল রেকর্ডস চান। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমরা তার পরিচয় এবং রোগীর সাথে তার সম্পর্ক প্রমাণসহ হাসপাতালের কাছে তথ্যাদি নেয়ার জন্য আবেদন করতে অনুরোধ করি। এরপর তিনি আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করে নি।"

ইউনাইটেড হাসপাতাল কি বলছে?

যদিও তালা ইলহেন্দি জোসেফানো বলেছেন, তিনি গত কয়েকদিন ধরেই ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন, কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তালা ইলহেন্দির অভিযোগের বিষয়ে তারা জানতে পেরেছেন।

পরে দেয়া এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল বলেছে যে, ১৪ ডিসেম্বর সকাল পৌনে পাঁচটার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় মোহাম্মদ ইউসুফ আল হেন্দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার সহকর্মীরা জানান, তিনি অচেতন থাকায় তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বিবেচনা করে এয়ারপোর্টেই চার-পাঁচ মিনিট সিপিআর দেয়া হয়।

ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা সেবা দেয়ার পরও তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।

এতে বলা হয়, "ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর একজন ভদ্রমহিলা আমাদের কাছে মোহাম্মদ ইউসুফ আল হিন্দির বোন বলে নিজেকে পরিচয় দেন এবং ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ ও রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত মেডিকেল রেকর্ডস চান। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমরা তার পরিচয় এবং রোগীর সাথে তার সম্পর্ক প্রমাণসহ হাসপাতালের কাছে তথ্যাদি নেয়ার জন্য আবেদন করতে অনুরোধ করি। এরপর তিনি আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করে নি।"

হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’হার্ট অ্যাটাকের পরে বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী এলে প্রথমেই একটা ইসিজি করে দেখা হয়। এতেই রোগীর অবস্থা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর অনেক সময় রোগীর রক্তনালীতে জমাট বেধে থাকা রক্ত সরিয়ে দিতে কিছু ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে।‘’

এরপর রোগীর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে এনজিওগ্রাম করে দেখা হয় যে, ধমনীতে কতটা ব্লক তৈরি হয়েছে। সেটার ভিত্তিতে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তিনি বলছেন, ‘’কিন্তু রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল না হলে অনেক সময় চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিতে চান না।‘’

কিন্তু রোগীর পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তার চিকিৎসা সম্পর্কিত সকল তথ্য স্বজনদের পাওয়ার এবং মতামত দেয়ার অধিকার তাদের রয়েছে বলে তিনি জানান। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।