সুদহার বাড়ছে, ডলার রেটও বাড়ছে। রপ্তানি পণ্যের দর পাচ্ছি না। অপরদিকে চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট। এতে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য ব্যবসায়ীরা সেফ এক্সিট পলিসি চাইছে সরকারের কাছে।
আক্ষেপ করে তারা বলেন, দিনশেষে আমরা ডলার দেশে আনার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আমরা যদি এত প্রতিবন্ধকতার জন্য ব্যবসা করতে না পারি, তাহলে সরকারের ডলার আসবে কোত্থেকে?
ব্যাংকগুলোর জন্য সরকার সহজ এক্সিট পলিসি করেছে দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলেন, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহক সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ টাকা পাবে। এর বেশি পাবে না। অথচ শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য কোনো সহজ এক্সিট পলিসি নেই।
অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে তারা বলেন, আপনি আমাদের গ্যাস দেন। গ্যাস-বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের কারখানা চালানোর ব্যবস্থা করেন। এলপিজি দিয়ে এই কারখানা চালানো আর সম্ভব নয়। রেভিনিউ যা চান, আমরা দিতে রাজি আছি।
ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং ব্যবসা না করে ডলার ব্যবসায় নেমেছে বলে অভিযোগ করে শিল্পোদ্যোক্তারা।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির সভায় এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন শিল্পোদ্যোক্তারা। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং এনবিআরের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সভায় এমন নানা সংকটের সমাধান চাওয়া হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীমের সভাপতিত্বে সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন।
সভার শুরুতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ডলার সংকট, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে ব্যবসা এখন নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য এক্সিট পলিসি দিন। দিনশেষে আমরা ডলার দেশে আনার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আমরা যদি এত প্রতিবন্ধকতার জন্য ব্যবসা করতে না পারি, তাহলে সরকারের ডলার আসবে কোত্থেকে?
সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম রপ্তানি খাতের সংকট তুলে ধরে বলেন, সুদহার বাড়ছে, ডলার রেট বাড়ছে। ব্যাংক আমাদের সাথে ব্যবসা না করে ডলার ব্যবসায় নেমেছে। রপ্তানি পণ্যের দর পাচ্ছি না। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দরে অর্ডার নিতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় এবার বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের জন্য সেফ এক্সিট পলিসি দরকার।
ব্যাংকগুলোর জন্য সরকার সহজ এক্সিট পলিসি করেছে দাবি করে তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহক সর্বোচ্চ মাত্র ১ লাখ টাকা পাবে। অথচ শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য কোনো সহজ এক্সিট পলিসি নেই।
ইস্পাত শিল্পের ব্যবসায়ী মাসুদুল আলম মাসুদ বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ খাতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। গ্যাসের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। গ্যাসের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে দেশে বিনিয়োগ আসবে না বলে হুঁশিয়ার করেন সরকারকে।
দেশের সব শিল্পই গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য ভোগান্তি পোহাচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য সবার খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে দাবি করে উত্তরা মোটর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে বলেন, আপনি আমাদের গ্যাস দেন। রেভিনিউ যা চান, আমরা দিতে রাজি আছি। গ্যাস-বিদ্যুৎ দিয়ে আমাদের কারখানা চালানোর ব্যবস্থা করেন। এলপিজি দিয়ে এই কারখানা চালানো আর সম্ভব নয়।
এসময় কর ব্যবস্থায় হয়রানি ও জটিলতা দূর করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, এ জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
একই সঙ্গে বিশেষত ব্যবসার খরচ কমিয়ে আনতে বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগসহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ কমানো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ প্রতি ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
অপরদিকে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিপন্থী উল্লেখ করে বিকেএমইএর মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অস্বাভাবিকভাবে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে, যা এখন অসহনীয় হয়ে গেছে। এর মূল কারণ কর্মকর্তাদের প্রণোদনা। এর কারণে তারা অন্যায়ভাবে রপ্তানি আটকে রেখে জরিমানা আদায় করছেন।
সবাইকে আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বলেন, সবার সুচিন্তিত মতামত বিবেচনা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সবার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করতে চান। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।