News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

দেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের কী লাভ?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2024-09-19, 7:41am

7ada04cb6b7d71d2e95d2ca0f2f6b58ba32cb8c50bc58d0e-2861a5af5ea12876e2be49aa19b2bbaa1726710105.jpg




বাংলাদেশ’স লস মে বিকাম ইনডিয়া’স গেইন (বাংলাদেশের ক্ষতিতে হতে পারে ভারতের লাভ)’, সম্প্রতি ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতা নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন শুরু হয় এই লাইনটি দিয়েই। ভারতের বাণিজ্য বিষয়ক গণমাধ্যম ’দি সেক্রেটারিয়েট’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির লেখিকা মহুয়া ভেঙ্কটেশ এই প্রতিবেদনে মূলত তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে চলমান সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং এই অস্থিরতার ফায়দা ভারত কীভাবে তুলতে পারে- সেই বিষয়টি।

শুধু এই গণমাধ্যমটিই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের অস্থিরতার ফলে যে ভারতই সবচেয়ে বেশি ফায়দা তুলতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ’দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’, ’টাইমস অব ইন্ডিয়া’, ’ইকোনমিক টাইমস’ ও ’দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর মতো সুপরিচিত গণমাধ্যমগুলোতেও।

বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে শোরগোল ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতেও

বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার বিষয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম; বিশেষ করে ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোও সরব। অনেক সুপরিচিত ও জনপ্রিয় চ্যানেলই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অস্থিরতায় ভারতের লাভবান হওয়ার নানা দিক তুলে ধরা হচ্ছে। সেই রকমই একটি ইউটিউব চ্যানেল ‘স্টাডি আইকিউ আইএএস’, যার সাবস্ক্রাইবার ১ কোটি ৮০ লাখ।

এই চ্যানেলে প্রচারিত ’উইল ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বেনিফিট ফ্রম বাংলাদেশ ক্রাইসিস?’ শিরোনামের ভিডিওতে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চলমান অস্থিরতার কারণে যদি বাংলাদেশ থেকে মাত্র দশ শতাংশ অর্ডারও ভারতে চলে আসে, তাহলেও বছরে ভারতের রফতানিতে যোগ হবে অতিরিক্ত আরও ৩ বিলিয়ন ডলার।

পাশাপাশি ভারতের খ্যাতনামা বাণিজ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এস চন্দ্রসেকারানের উদ্ধৃতি দিয়ে ভিডিওতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান পোশাক কারখানাগুলোর চার ভাগের একভাগই ভারতীয় মালিকানার এবং এই ভারতীয় কারখানা মালিকরা বর্তমানে তাদের কারখানা ভারতে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও উল্লেখ করা হয় ভিডিওতে।

দেশের পোশাক শিল্পে অস্থিরতায়, ভারতের অতি উৎসাহ অশনি সংকেত!

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর এই মাতামাতিকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। এমনকি বিষয়টি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও।

সম্প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ’দি ইকোনোমিস্ট’ এর প্রতিবেদনেও পোশাক খাতে বাংলাদেশ ও ভারতের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি উঠে আসে। ‘ইন্ডিয়া ভার্সাস বাংলাদেশ: ক্যান ইন্ডিয়া’স গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বেনিফিট ফ্রম বাংলাদেশ’স টার্ময়েল?’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক খাতের অস্থিরতার মধ্যে ভারতে বাড়ছে পশ্চিমা অর্ডারের সংখ্যা।

বিগত সরকারের ভুল নীতির শিকার পোশাক খাত

মূলত দেশের পোশাক খাতে এক ধরনের অস্থিরতার রেশ দেখা যায় গত বছর থেকেই। গত বছর থেকেই বাংলাদেশের প্রধান প্রধান বৈশ্বিক রফতানি বাজারে কমতে শুরু করে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি। এজন্য অবশ্য দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা দায়ী করেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাকে। এরমধ্যে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি দায়ী করেন আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে সংঘটিত রিজার্ভ সংকটকে।

রিজার্ভ সংকটের কারণে সময়মতো ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে এলসি করাই কঠিন হয়ে পড়ে দেশের কারখানাগুলোর জন্য। অনেক প্রতিষ্ঠানই সময়মতো এলসি না করতে পেরে প্রতিশ্রুত লিড টাইমে তাদের রফতানি পণ্য শিপমেন্ট করতে ব্যর্থ হন। অনেককে আবার লিড টাইমের মধ্যে শিপমেন্ট করার জন্য এয়ার শিপমেন্টে বাধ্য হন। এতে রফতানি খরচ অনেকটাই বেড়ে যায় তাদের। মূলত গত বছর থেকে শুরু হওয়া এই সমস্যা আরও ঘনীভূত হয় চলতি বছরে।

বিশেষ করে বিগত সরকারের দেয়া চলতি অর্থবছরের বাজেট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন উদ্যোক্তারা। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই হঠাৎ করেই জুলাই মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হলে আরও টালমাটাল হয়ে পড়ে দেশের গার্মেন্টস শিল্প। বিশেষ করে ছাত্রদের আন্দোলন দমানোর নামে জুলাই মাসে তৎকালীন সরকারের ইন্টারনেট শাটডাউন ও কারফিউ জারির প্রভাব সরাসরি আঘাত হানে দেশের পোশাক খাতকে।

প্রায় এক সপ্তাহ অচল থাকে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর। বন্ধ থাকে দেশের পোশাক কারখানাগুলোও। বাংলাদেশে অবস্থিত সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক ইমেজ সংকটে পড়ে দেশের পোশাক খাত।

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ পোশাক খাতের শৃঙ্খলা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর হামলা ও ভাঙচুর হয় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানায়। তবে সে সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেয়া তড়িৎ পদক্ষেপে দ্রুত শান্তি ফিরে আসে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরসহ তৈরি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। পরবর্তীতে কারখানাগুলোতে কাজ শুরু হলেও আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী বন্যা।

এই বন্যায় অচল হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও। মূলত এই বন্যার ধাক্কা দেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর ছিলো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। অপরদিকে সরকার পতনের পর টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ- এই তিন সংগঠনেই হয় নেতৃত্বের পরিবর্তন। সব মিলিয়ে টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে জুলাই ও আগস্ট- দুই মাসেই পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন এবং রফতানি পণ্য শিপমেন্ট ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ায়, কারখানা মালিকরা তাদের শ্রমিকদের আগস্ট মাসের বেতন দিতে পারবেন কি না, তা নিয়েও তৈরি হয় সংশয়।

এ পরিস্থিতিতে পোশাক খাতকে রক্ষায় এগিয়ে আসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পোশাক খাতের কারখানাগুলোকে আগস্ট মাসের বেতন হিসেবে দেয়া হয় জরুরি প্রণোদনা।

পোশাক খাতের অস্থিরতার পেছনে অন্য দেশের ইন্ধন!

পোশাক কারখানার মালিকরা সরকারের প্রণোদনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন দেয়া ও কারখানা চালুর রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। সরকারের প্রণোদনা এবং মালিকদের কারখানা চালু রাখার প্রতিশ্রুতিতে আশার আলো দেখা দেয় দেশের তৈরি পোশাক খাতে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশের তৈরি পোশাকের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরে দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ। বিভিন্ন কারখানায় চালানো হয় ভাঙচুর।

বকেয়া বেতনের দাবিতে এসব আন্দোলনের দাবি করা হলেও দেখা যায়, যে সব কারখানায় কখনও বেতন বাকি রাখা হয় না সেসব কারখানাতেও চালানো হয় ভাঙচুর, লুটপাট। এসব ভাঙচুরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিকরা জড়িত থাকার বদলে বহিরাগত অচেনা দুষ্কৃতকারীরা জড়িত বলে দাবি করেন কারখানা মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে ফের সামনে আসে দেশের পোশাক খাত ঘিরে তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি।

বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে একটি প্রতিবেশী দেশ- এমন আলোচনাও জোরেশোরে হতে শুরু করে দেশের পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে। পোশাক কারখানার মালিকদের পাশাপাশি, শ্রমিক সংগঠনগুলো এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যেও উঠে আসে বিষয়টি।

বিদেশি ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে যা বলছেন পোশাক মালিকরা

দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোর চলমান শ্রমিক অসন্তোষ ও পোশাক খাতের অস্থিরতা নিয়ে পোশাক কারখানা মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর উত্তরার প্রধান কার্যালয় বিজিএমইএ’ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় এক উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্ত মতবিনিময় সভা। হাইপ্রোফাইল এই মতবিনিময়ে অংশ নেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা। আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ ছাড়াও পোশাক কারখানা মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএর শীর্ষ নেতারাসহ শ্রমিক সংগঠনের নেতারা, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ বিজিএমইএর সাধারণ সদস্য কারখানা মালিকরা। সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় খোলামেলা আলোচনা হয় দেশের পোশাক খাতের চলমান অস্থিরতা নিয়ে।

সেখানে পোশাক মালিকদের তরফে দেশের অন্যতম বৃহৎ রফতানিকারক হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘পোশাক কারখানাগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের অর্ডারগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারছেন না। বহিরাগতরা কারখানাগুলোতে অশান্তির চেষ্টা চালাচ্ছে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের মধ্যে তেমন কোনো অসন্তোষ নেই। কিছুদিন আগেই প্রায় অর্ধেক বেতন বাড়ানো হয়েছে। মালিকরা তা বাস্তবায়ন করছেন।’

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশে কিংবা অন্য দেশে এই দেশের ব্যবসা সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে, অপরদিকে যদি বাংলাদেশে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করা যায়, তাহলে লাভটা কার, তা বুঝতে হয়তো আপনাদের কারোই বাকি নেই। এ অবস্থায় অন্য দেশের যেন লাভ না হয়, সে বিষয়টিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাংলাদেশের টেক্সটাইল কারখানাগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে দেশের পোশাক খাতের অস্থিরতার পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমাদের টেক্সটাইল মিলের মালিকরা শত অসুবিধা সত্ত্বেও সময়মতোই সব বেতন ভাতা পরিশোধ করছেন। কিন্তু আমরা এখন ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে গেছি।’

বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্টরা কারখানাগুলোতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আগুন লাগানোর পেছনে জড়িত উল্লেখ করে বিটিএমএ নেতারা আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কোন কোন আইডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিল্পাঞ্চলগুলোতে অস্থিরতা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোতে ভাঙচুর শুরু করা হয়। একই ধরনের লাঠি ও হ্যামার হাতে একটি গ্রুপ কারখানাগুলোতে ভাঙচুরের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কাউকেই স্থানীয়রা এবং কারখানার শ্রমিকরা চেনেন না। এরাই হলো বিদেশি এজেন্টদের লোক। যাদের কেউ চেনে না। কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলেও শ্রমিকরা কখনই কারখানার মেশিন ভাঙচুর করে না। কিন্তু এই অচেনা দাঙ্গা-হাঙ্গামাকারীদের উদ্দেশ্যই থাকে কারখানার মেশিন ভাঙচুর।

পোশাক খাতে ষড়যন্ত্র, যা বলছেন নীতিনির্ধারকরা

বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ সেপ্টেম্বরের মতবিনিময় সভায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টার মধ্যে ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। তিনি বলেন, দেশের পোশাক খাতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যার সুযোগ নেবে প্রতিবেশী দেশ।

উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের পোশাক খাতের অস্থিরতার সুযোগ নিতে পারে প্রতিবেশী দেশ। এরমধ্যেই ভারতের কোনো কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিভিন্ন ভিডিওতে বলছেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক খাতের এই অস্থিরতার সুযোগ নিতে হবে ভারতকে।’ প্রতিবেশী কোন দেশ যেন এই পরিস্থিতি থেকে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।

এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে স্থানীয় চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রও জড়িত রয়েছে।

তবে ইকোনোমিস্টের ঐ প্রতিবেদনে উঠে আসে বাংলাদেশের পোশাক খাতের শক্তিশালী ভিত্তির কথা, যার জেরে সাময়িক এই অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাজার দখল করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হবে না বলেই মনে করছে এই প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা কঠিন হবে। বর্তমান অস্থিরতা স্বল্পমেয়াদি। কারখানাগুলো এরমধ্যেই আবার চালু হয়েছে এবং পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ এখনো তার প্রতিযোগীদের তুলনায় বড় সুবিধা ভোগ করছে। শ্রমিকদের মজুরি এখনও অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে কম।

এমনকি ইউরোপীয় বাজারে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার ভোগ করছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বস্ত্র উৎপাদনের দীর্ঘ ইতিহাস থাকার কারণে দেশটি বড় অর্ডার সামলাতে দক্ষ। গ্যাপের সাপ্লাই চেইনপ্রধান জানান, আমেরিকান ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশকে নিয়ে ’সতর্ক কিন্তু আশাবাদী’।

প্রতিবেদনে একজন শিল্প বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, এ মুহূর্তে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা নেই। ভারতের মনোযোগ এখন পুঁজিনির্ভর খাত, যেমন বৈদ্যুতিক পণ্যের সম্প্রসারণের দিকে, শ্রমনির্ভর বস্ত্রশিল্পের দিকে নয়। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতীয় পোশাক রফতানির আয় ১৫ শতাংশ কমেছে, যেখানে বাংলাদেশের রফতানি ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। এরজন্য বিশ্বব্যাংক তাদের একটি প্রতিবেদনে ভারতের সুরক্ষাবাদী নীতিগুলোকেই দায়ী করেছে। ২০১৭ সাল থেকে বস্ত্র ও পোশাকের ওপর গড় আমদানিশুল্ক ১৩ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে, যার ফলে উৎপাদকদের জন্য দাম বেড়ে গেছে।

তবে চীনের কম মূল্যের পোশাক উৎপাদন ব্যবস্থার পতন হলে ভারতের জন্য একটি বড় সুযোগ আসতে পারে। কিন্তু এ খাতে বাংলাদেশ থাকায় ভারতকে এখানেও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। সময় সংবাদ।