News update
  • Climate Change Drives Deadly Floods, Storms, and Water Crises     |     
  • UN Advances Peace, Development Amid Global Challenges     |     
  • S Arabia, Pak ink defence pact after Israeli strike on Qatar     |     
  • No new committee forming, focus on polls candidates: Tarique     |     
  • Dhaka-Beijing partnership to advance peace, prosperity: Yunus     |     

চাঁদে অবতরণ ভারতকে ভূরাজনীতিতে কী সুবিধা দিতে পারে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক

কুটনীতি 2023-08-26, 9:39pm

59e49750-4289-11ee-9e52-0561e61a3e07-e7c4c51baf02cfc50c57bf5e1d32f8bc1693064354.jpg




১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই চাঁদের বুকে প্রথম মহাকাশচারী নিইল আর্মস্ট্রং সেখানে পা রেখেই বলেছিলেন, “এটা একজন মানুষের ছোট একটা পদক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু সমগ্র মানবজাতির জন্য বিরাট একটা লাফ!”বিশ্বের মহাকাশচর্চার ইতিহাসে ওই বাক্যটি প্রায় প্রবাদে পরিণত হয়েছে।

সেই ঘটনার অর্ধশতাব্দীরও বেশি পরে ভারতের চন্দ্রযান-থ্রি বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমেছে – আর ‘বিক্রম’ ল্যান্ডারের ঢাল বেয়ে নেমে এসে মুন রোভার ‘প্রজ্ঞান’ও অতি ধীরে ধীরে চাঁদের বুকে তার পদচারণা শুরু করেছে।

প্রজ্ঞান হয়তো সেকেন্ডে বড়জোর এক সেন্টিমিটারই এগোতে পারছে, কিন্তু চাঁদের বুকে এই ছোট্ট পদক্ষেপ যে ভারতের জন্য ভূরাজনীতি ও চান্দ্র অর্থনীতিতে (‘লুনার ইকোনমি’) একটা ‘বিরাট লাফ’ - তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।

আন্তর্জাতিক সাময়িকী ফরেন পলিসি যেমন সোজাসুজি লিখেছে, ‘ভারতের মুন ল্যান্ডিং আসলেই একটি বিরাট জিওপলিটিক্যাল স্টেপ!”

বিশ্বের বহু দেশ এখন মহাকাশচর্চার বিভিন্ন মাইলফলক স্পর্শ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছে।

বিশেষ করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালানোর জন্য ভারত ছাড়াও রাশিয়া, চীন বা আমেরিকা – প্রত্যেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে।

সেই পটভূমিতে ভারতের এই নজিরবিহীন সাফল্য তাদের জন্য বিভিন্ন নতুন নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দেবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং তো ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস করে রেখেছেন, আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতের স্পেস সেক্টর বা মহাকাশ খাত এক ট্রিলিয়ন (এক লক্ষ কোটি) ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

এই খাতের বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন, চন্দ্রযান-থ্রির অভূতপূর্ব সাফল্যের পর ভারতের পক্ষে সেটা মোটেই অসম্ভব নয়।

তক্ষশীলা ইনস্টিটিউটে মহাকাশ ও ভূরাজনীতির গবেষক আদিত্য রামানাথন যেমন মনে করছেন, এই সাফল্য ভারতের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশকে মহাকাশচর্চায় উৎসাহিত করবে এবং তারা এটাকে পেশা হিসেবেও নিতে চাইবেন।

“চন্দ্রযানের এই অর্জনের ভিত্তিতে ভারতকে এখন ‘লুনার জিওপলিটিক্স’ বা ‘চান্দ্রেয় ভূরাজনীতি’র জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে”, টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন মি রামানাথন।

চাঁদের বুকে বিপুল পরিমাণে মূল্যবান খনিজ বা প্রচুর পরিমাণ জ্বালানির উৎসের সন্ধান মিলতে পারে – এই সম্ভাবনাও সাম্প্রতিককালে বহু দেশকে চন্দ্র অভিযানে আকৃষ্ট করেছে।

এই পটভূমিতে ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রযান-থ্রির সাফল্য ভারতকে ‘পোল পোজিশনে’ নিয়ে আসবে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক দৌড়ে এগিয়ে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চাঁদকে ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আর আমেরিকার মধ্যে চাঁদে আগে কে পৌঁছতে পারে, সেই বিখ্যাত দৌড়ের প্রায় ছয় দশক পরে চাঁদকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

এবারে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল – যেখানে বিজ্ঞানীরা জল বা বরফের অস্তিত্ত্ব আছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন।

রাশিয়া যেমন প্রায় ৪৭ বছর পর চলতি মাসেই তাদের প্রথম লুনার মিশন লঞ্চ করেছিল, যদিও গত রবিবার (২০ অগাস্ট) সেই লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণে ব্যর্থ হয়। এর তিনদিন পরেই সেখানে নামে ভারতের চন্দ্রযান-থ্রি।

আমেরিকা আবার ২০২৫ সালে মধ্যেই ওই এলাকাতে প্রথমবারের মতো মহাকাশচারীদের নামানোর পরিকল্পনা করছে – আর তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে পুরো দমে।

এই দশক শেষ হওয়ার আগেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নভোচারী-সমেত ও নভোচারী-ছাড়া মহাকাশযান নামানোর পরিকল্পনা আছে চীনেরও।

এছাড়া ইসরায়েল, জাপান বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরও নানা দেশই সম্প্রতি চাঁদে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যদিও তার সবগুলোই প্রথম পর্যায়েই ব্যর্থতার মুখ দেখেছে।

দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে এই আগ্রহের বড় কারণ হল ওখানে সত্যিই জল পাওয়া গেলে তা রকেটের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

এমন কী, পর্যাপ্ত জলের জোগান নিশ্চিত হলে চাঁদের বুকে একটি স্থায়ী স্টেশন (পার্মানেন্ট বেস) – কিংবা মঙ্গলগ্রহ বা আরও দূরে অভিযান চালানোর জন্য লঞ্চপ্যাডও স্থাপন করা যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।

নাসা-র শীর্ষ কর্মকর্তা বিল নেলসনও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সত্যিই জল পাওয়া গেলে তা ভবিষ্যতের মহাকাশচারী ও স্পেসক্র্যাফটগুলোর খুবই কাজে আসবে।

কিন্তু ওই এলাকায় যদি চীন প্রথম তাদের কোনও মহাকাশচারীকে নামাতে পারে, তারা চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের ওপর নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এই ধরনের প্রতিযোগিতা অচিরেই শুরু হতে পারে, এটা আশঙ্কা করেই যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে ‘আর্মেটিস অ্যাকর্ডসে’র অবতারণা করেছিল, যে চুক্তিতে শরিক দেশগুলো মহাকাশচর্চার ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি ও সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার অঙ্গীকার করে থাকে।

পৃথিবীর বহু দেশই এই সমঝোতায় সামিল হয়েছে। গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ভারতও এই অ্যাকর্ডে সই করেছে।

কিন্তু চীন ও রাশিয়ার মতো দুটি বড় ‘স্পেস পাওয়ার’ এখনও এই সমঝোতার শরিক হয়নি।

অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের ক্ষেত্রে চন্দ্রযান-থ্রির সাফল্য চাঁদকে ঘিরে এই নতুন ‘স্পেস রেস’কেই আরও ত্বরাণ্বিত করবে – এবং ‘ফার্স্ট অ্যাচিভার’ (প্রথম অর্জনকারী) হিসেবে ভারত সেখানে অবশ্যই কিছু অ্যাডভান্টেজ পাবে।

লুনার ইকোনমিতে লাভক্ষতি

ভারতের এই সফল চন্দ্র অভিযান ভারতকে তো বটেই, তার সঙ্গে বৃহত্তর বিশ্বকেও নানা ধরনের সুবিধা এনে দেবে বলে মনে করছেন উইলসন সেন্টারে সাউথ এশিয়া সেন্টারের অধিকর্তা মাইকেল কুগেলম্যান।

‘ফরেন পলিসি’তে তিনি লিখেছেন, “যে চলমান মহাকাশ গবেষণা কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও রিমোট সেন্সিং টেকনোলজির প্রসারে প্রভূত সাহায্য করেছে, তা এখন আরও বিস্তৃত হবে।”

নির্দিষ্ট উদাহরণ দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, ভারতের মহাকাশ গবেষণা অতীতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর মনিটর করতে এবং পৃথিবীতে আবহাওয়ার ধাঁচ (ওয়েদার প্যাটার্ন) পূর্বাভাস করতে খুবই কাজে এসেছে।

বিশেষ করে যে সব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপদের আশঙ্কায়, তাদের জন্য এই সব তথ্য-উপাত্ত খুবই কার্যকরী হবে বলেও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন।

ভারতের স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক রাজি রাজাগোপালনও বিবিসিকে বলেছেন, ভারতের এই সাফল্য নানা দিক থেকেই বিশ্বের মহাকাশচর্চায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ড: রাজাগোপালনের কথায়, “ভারতের মহাকাশ-প্রযুক্তি যে আগের তুলনায় অনেক আধুনিক, উন্নত ও পরিণত হয়েছে এই অভিযান সেটাই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে দিল।”

খুবই কম খরচে (আনুমানিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার) যেভাবে ভারত একটি সফল মহাকাশ অভিযান লঞ্চ করেছে, তা তাদেরকে ‘ব্যয়সাশ্রয়ী অথচ নির্ভরযোগ্য মহাকাশ-শক্তি’ হিসেবেও প্রতিষ্ঠা দেবে বলে মনে করছেন রাজি রাজাগোপালন।

আন্তর্জাতিক কনসালটেন্সি ফার্ম প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্সের একটি রিপোর্টে ‘লুনার ইকোনমি’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয় তা বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

তারা বলছে, চাঁদের বুকে যত ধরনের সম্পদ আছে – চাঁদের বুকে, পৃথিবীতে ও চাঁদের কক্ষপথে তার সফল ব্যবহারই এই অর্থনীতির সূচক।

যেমন চাঁদে হিলিয়ামের একটি আইসোটোপ হিলিয়াম-থ্রির বিরাট ভান্ডার আছে, যা পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিপুল উৎস হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু সেই হিলিয়াম-থ্রিকে কীভাবে পৃথিবীর উপকারে কাজে লাগানো যায়, সেটাই লুনার ইকোনমির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

এমন কী, চাঁদের বুকে ‘রিয়েল এস্টেট’ বা জমিজমা নিয়েও একদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হতে পারে বলে তারা পূর্বাভাস করে রেখেছে।

যদি কোনও দিন সত্যিই তা হয়, তাহলে দক্ষিণ মেরুতে ‘ফার্স্ট মুভার’ হিসেবে ভারতের যে একটা শক্ত দাবি থাকবে – অনেক বিশেষজ্ঞই সে কথা মেনে নিচ্ছেন। বিবিসি নিউজ বাংলা