News update
  • অতিথি পাখির বিচরণ আর দুষ্টুমিতে নান্দনিক হয়ে উঠেছে কুয়াকাটার চর বিজয়      |     
  • Remittance inflow exceeds $632 million in first six days of Dec     |     
  • 18 migrants die as inflatable boat sinks south of Greek island of Crete     |     
  • TIB for polls manifesto vows to curb misuse of powers and religion     |     
  • Khaleda now not fit for travelling: Medical Board     |     

প্রতিবেশী দেশে সরকার বদল, ভারতের 'নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতিতে কী প্রভাব পড়বে?

বিবিসি নিউজ, দিল্লি কুটনীতি 2024-09-29, 10:17pm

ytrytyert-9990eee4b968a9174eae0ca71e1016421727626672.jpg




নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনুস।

জো বাইডেনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রেস নোটে বিশেষ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতার বিষয়টি। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে 'আরও প্রচেষ্টা চালাতে হবে'।

তবে মি. ইউনুস ও জো বাইডেনের মধ্যে যে উষ্ণতা দেখা গেছে নিউইয়র্কে, তা নরেন্দ্র মোদী সরকারের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে মোদী সরকার।

বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী দেশ, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে সেই সব দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।

গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় বামপন্থী আনুরা দিসানায়েক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। নেপাল আর মালদ্বীপে ২০২৩ সালে এবং মিয়ানমার ও আফগানিস্তানে ২০২১-এ ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে।

অন্যদিকে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন তো চলছেই।

নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর তার সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে 'নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতি চালু করে।

অনেকে মনে করছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরকার পরিবর্তনের পরে ওই নীতি কতটা কার্যকরী, তা এখন বিচার করার সময় হয়েছে।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত তার বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে।

কীভাবে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশীদের সংঘাতগুলো চলেছে, সেদিকে নজর দেওয়া যাক।

প্রথমে মালদ্বীপ।

সেদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট মুহম্মদ মুইজের নির্বাচনি স্লোগানই ছিল 'ইন্ডিয়া আউট'।

ক্ষমতায় আসার পরেই কয়েক দশক ধরে চলে আসা একটি প্রথা ভেঙেছেন তিনি। প্রথাটা ছিল মালদ্বীপে ক্ষমতায় আসার পর প্রত্যেক প্রেসিডেন্টেরই প্রথম বিদেশ সফরটা হয় ভারতে।

কিন্তু প্রথম সফরের জন্য তুরস্ককে বেছে নেন মি. মুইজ। এবছরের শুরুর দিকে চীন সফর থেকে ফিরে এসেই তিনি ভারতকে অনুরোধ করেন যে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

ভারত সেই অনুরোধ মেনে নিয়ে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে জুলাই মাসে মি. মুইজের মনোভাবের কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়।

তিনি ভারতকে তার দেশের ‘ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ বলে অভিহিত করেন এবং আর্থিক সহায়তা চান।

এবার আসা যাক নেপালের প্রসঙ্গে।

নেপালে ২০২০ সালে ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বলেছিলেন যে ভারত নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।

তবে ২০২৪ সালে মি. ওলি আবারও নেপালের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন এবং এখন ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন মি. ওলি এবং নরেন্দ্র মোদী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন। দুই দেশই এই বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী মি. মোদী বলেছেন যে ভারত ও নেপালের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ় এবং তারা এই সম্পর্ককে আরও গতিশীল করার দিকে এগোচ্ছেন।

আফগানিস্তানের প্রসঙ্গে দেখা যায় যে ভারত এখনও পর্যন্ত তালিবানকে সেদেশের বৈধ সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে আফগানিস্তানে কূটনৈতিক উপস্থিতি রয়েছে এমন ১৫টি দেশের তালিকায় ভারতও রয়েছে।

সবশেষে বাংলাদেশ।

মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পর ভারত কিছুটা ব্যাকফুটে চলে আসে। শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক ছিল।

কিন্তু বাংলাদেশে যখন হাসিনা-বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় তখন সেখানকার মানুষ ভারতকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মি. ইউনুস উভয়ই একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তবে এর অভিমুখ কী হবে তা এখনও স্থির হয় নি।

‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতি কতটা কার্যকরী?

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো বড় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করার প্রচেষ্টায় নিজের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে প্রাধান্য দেয় নি ভারত।

সিনিয়র সাংবাদিক ও দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার বলেন, “নিজের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টা ভারতের পক্ষে কখনোই সহজ ছিল না। গত ১০ বছরে সরকার নেইবারহুড ফার্স্টের কথা বলেছে ঠিকই, কিন্তু তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এই বিষয়ে খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া হয় নি। সুতরাং ভারতের এটা আশা করা উচিত নয় যে ভারতের ব্যাপারে এই দেশগুলোর সুখানুভূতি হবে।“

সুহাসিনী হায়দার বলছেন, "প্রতিবেশী দেশগুলির সরকার সবসময়ে যে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে একমত হবে, এমন ভাবাটা ভুল। ভারত তার প্রতিবেশীদের ওপর নিজের পররাষ্ট্রনীতি চাপিয়ে দিতে পারে না। প্রতিবেশী দেশগুলিতে লাগাতার পটপরিবর্তন হওয়ার ঘটনা থেকে সরকার এই শিক্ষাই পাচ্ছে।“

তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি মনে করেন যে ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতি যথেষ্ট গতিশীল।

তার কথায়, "এই নীতিটি খুবই নমনীয়। আমরা (ভারত) যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারি। এর সবথেকে ভাল উদাহরণ হল ভারত যেভাবে মালদ্বীপে মি. মুইজের 'ইন্ডিয়া আউট' নীতির মোকাবেলা করল। ধীরে ধীরে বিষয়টা থিতিয়ে গেল।

“শ্রীলঙ্কা যখন ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন ভারত শ্রীলঙ্কাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভারত বলেছে যে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চায়,” বলছিলেন মিজ. সিক্রি।

তার কথায়, "এর থেকেই বোঝা যায় যে নেইবারহুড ফার্স্ট নীতির উন্নতি হচ্ছে এবং এখন তা বেশ শক্তপোক্ত হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরে এই নীতি পরীক্ষিত হয়েছে এবং এখন সেই পরীক্ষায় নীতিটি সফল হয়েছে।''

অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও গণতন্ত্র

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নানা কারণে প্রভাবিত হয়। এগুলির মধ্যে আছে ওইসব দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ও গণতন্ত্রায়ন।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বর্ণ সিং বলছেন, “কোনও সন্দেহ নেই যে, এসব দেশে ক্ষমতার পালাবদল ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

“কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে ওই পরিবর্তনগুলি ভারতের কারণে হয় নি। প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিবর্তনের কারণ তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি। আমেরিকার মাত্র দুটি বড় প্রতিবেশী রয়েছে- মেক্সিকো ও কানাডা। কিন্তু পাকিস্তান ছাড়াও ভারতকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু ছোট ছোট দেশ। এর ফলে 'স্মল স্টেট সিনড্রোম'-এর পরিস্থিতি তৈরি হয়,” বলছিলেন স্বর্ণ সিং।

তার ব্যাখ্যা, “এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশীদের মনে হয় যে ভারত তাদের রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে। এই ছোট ছোট দেশগুলিতে গণতন্ত্র যত শক্তিশালী হবে, ততই তাদের পক্ষে ভারতকে মোকাবেলা করা ওই দেশগুলির নিজস্ব পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভুটান ও ভারতের মধ্যে সবসময়ই চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন হলেই সেখানে ভারত-বিরোধী স্লোগান ওঠে।“

নেপাল, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলো চীন ও ভারত থেকে 'সম-দূরত্ব' নীতি নিয়ে চলে।

ভারত তার কোনও প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারে না, কিন্তু বাংলাদেশের মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারত দূরদর্শিতার অভাব দেখিয়েছে।

সুহাসিনী হায়দার বলছেন, "বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুতর, কারণ যেখানে ভারতের হাইকমিশন এবং দেশের চারটি উপদূতাবাস আছে, তা সত্ত্বেও সেখানকার পরিস্থিতি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি ভারত।

"বাংলাদেশে ভারত কেবল একটি পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখেছিল এবং সেদেশের বিরোধীদের উপেক্ষা করেছিল। এখন এই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে ভারতকে,” বলছিলেন সুহাসিনী হায়দার।

তিনি এও বলছেন যে এর বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারত অনেক ভালভাবে সামলিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগেই আনুরা দিসানায়েককে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

তবে অনেক প্রতিবেশী দেশে ভারতীয়দের প্রকল্পও রয়েছে, যেমন শ্রীলঙ্কায় আদানির প্রকল্প। ভারতকে বুঝতে হবে যে তারা যদি এইধরনের প্রকল্পগুলির হয়ে ওকালতি করে, তাহলে তার নিজস্ব পরিণাম তো হবেই।“

কোনদিকে এগোবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ভারতকে অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে।

বীণা সিক্রি বলেন, "আমি বলব যে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ইতিবাচক এবং আমাদের বিদেশ নীতি যে কোনও পরিস্থিতিই সামলানোর জন্য সক্ষম। বিশ্বজুড়েই সরকার বদলায়, কিন্তু আমাদের প্রতিক্রিয়া এমন হবে, যাতে দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে ওইসব পরিবর্তনগুলির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।“

সুহাসিনী হায়দার বলছেন যে ভারতের বোঝা উচিত যে তার অভ্যন্তরীণ নীতিমালাও প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে।

তার কথায়, "ভারতকে প্রতিবেশীদের নেতা হিসাবে দেখা হয়। তাই সিএএ-র মতো ভারতের নীতিগুলি প্রতিবেশীদেরও প্রভাবিত করে। যখন সিএএ ঘোষণা করা হয়, তখন বাংলাদেশেও বিক্ষোভ হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার সিএএ মেনে নিলেও তাতে ভারতের ভাবমূর্তি কিন্তু ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ সিএএ-র বিরোধিতা করেছে।''

“শুধু ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাই যথেষ্ট নয়, এসব দেশের সাধারণ মানুষের মনও জয় করা দরকার,” বলছিলেন সুহাসিনী হায়দার।

অধ্যাপক স্বর্ণ সিংয়ের মতে, ধৈর্যই হল মূলমন্ত্র।

তার কথায়, “নেপালে অলি আর বাংলাদেশে ইউনুসের ক্ষেত্রে ভারত অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। অশান্ত পরিস্থিতিতেও ভারত সংযম দেখিয়েছে। ভারত জানে যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে ক্ষতি তারই। কারণ এ ধরনের পরিস্থিতিতে চীন তার প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ পেয়ে যায়।“