News update
  • NCC for referendum, after July Charter order promulgation     |     
  • World Enters New Era of Climate Action, Urgent Steps Needed     |     
  • Israel Accused of Four Genocidal Acts in Gaza, UN Told     |     
  • BNP rejects Consensus Commission’s call for pre-poll referendum     |     
  • At Least 64 Killed in Deadly Rio Drug Gang Raids     |     

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর থেকে কী পেল বাংলাদেশ?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক খবর 2024-07-12, 7:55pm

eewrewrewt-9acf8d9ddcd3bd99997537aa4a4184441720792523.jpg




বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল আলোচিত চীন সফরের মাধ্যমে প্রাপ্তি কতটা হয়েছে সেটি নিয়ে এখন চলছে নানা বিশ্লেষণ। চীন সফরে যাবার কিছুদিন আগ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং কর্মকর্তারা ধারণা দিয়েছিলেন, এই সফর হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের আগে ধারণা করা হচ্ছিল যে বাংলাদেশের দিক থেকে কয়েকটি বিষয় চীনের সাথে আলোচনা হতে পারে। শুধু আলোচনাই নয়, বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকা যেসব প্রত্যাশা করে সেগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে চীন হয়তো ভূমিকা রাখবে।

এর মধ্যে রয়েছে - তিস্তা প্রকল্প, রোহিঙ্গা সমস্যা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য চীনের ঋণ।

কিন্তু সফরের শেষে দুই দেশের দিক থেকে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে তিস্তা মহা-পরিকল্পনা নিয়ে কোন কথা নেই।

এছাড়া বাণিজ্য, বিনিয়োগ কিংবা অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের দিক থেকে বড় কোন প্রতিশ্রুতিও দেখা যাচ্ছে না।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তি মিলিয়ে দেখার মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন অনেকে।

যেসব সমঝোতা হয়েছে

সফরে ঢাকা ও বেইজিং এর মধ্যে ২১টি সমঝোতা স্বাক্ষর ও সাতটি ঘোষণা এসেছে। এই সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চার ধরনের ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে চীন।

এছাড়া, চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন 'ইউয়ান' আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন, ডলারের মূল্যমানে যা প্রায় ১৪ কোটি।

গত চৌঠা জুলাই ঢাকায় নিযুক্ত চীন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রিজার্ভের স্বল্পতা কাটাতে চীনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময়ই এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে, এমন ইঙ্গিতও দেন মি. ওয়েন।

তার একদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারকে উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানায়, চীনের কাছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ চায় বাংলাদেশ।

কিন্তু শেখ হাসিনার চীন সফরে সেটির কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

২০১৬ সালে বাংলাদেশে চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের পর থেকে ঋণ দেয়ার পরিমাণ দ্রুত বেড়েছিল। গত চার অর্থবছরে বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলার এসেছে চীন থেকে।

সেই ধারবাহিকতায় এবারের সফরে সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছিল বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে।

কিন্তু, পাঁচ বিলিয়ন বা পাঁচশো কোটি ডলারের জায়গায় মাত্র ১৪ কোটি ডলার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অঙ্কে নতুন 'প্রশ্নের উদ্রেক' করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

'কোথাও ছন্দপতন হয়েছে'

সফরের শেষ দিন বুধবার সকালে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সাথে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বিকেলে বৈঠক হয় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে।

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চীনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস্ এ বলা হয়, দুই দেশ তাদের সম্পর্ককে 'ব্যাপক কৌশলগত' সহযোগিতার এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা- বাসস জানায় দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাণিজ্য ও উন্নয়নে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো প্রধান্য পেয়েছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ২১ সমঝোতা ও ৭ ঘোষণার পাশাপাশি সফর শেষে দুই দেশের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিও দেয়া হয়।

তবে, এগুলো “প্রত্যাশার তুলনায় নগণ্য” বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, মোটা দাগে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ কিছু অর্জন করতে পারেনি। চীন গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে একটা বড় অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে।

“সেই নিরিখে সফরের আগে বাংলাদেশ সরকারের যে প্রত্যাশা ছিল তাতে আশাভঙ্গ হয়েছে বলাই যায়,” বলেন ড. ফাহমিদা খাতুন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীরও মনে করেন, “প্রত্যাশার আলোকে প্রাপ্তিটা খুব একটা আকর্ষণীয় নয়।"

“অনেক বিষয়ে হয়তো আমরা সহমত হতে পারিনি। সেইজন্যই অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুব একটা প্রাপ্তির যোগ দেখছি না,” বলেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যে দুই দেশের সাম্প্রতিক বোঝাপড়ায় কোথাও না কোথাও একটা 'ছন্দপতন' হয়েছে।

“তারা যে আমাদের ওপর খুশি না সেটারই একটা বহিঃপ্রকাশ। এখানে আমরা বলে আসছি, বাংলাদেশের জন্য চীন হচ্ছে উন্নয়নের বন্ধু। সেই অবস্থান থেকে অনেকখানি সরে এসেছি আসলে,” বলছিলেন ড. ফাহমিদা খাতুন।

আগে চীন বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং অর্থায়ন করেছে কিন্তু গত এক বছরে তেমন কোনো সহায়তা আসেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আর মি. কবীর বলছেন, “চীনা প্রতিনিধি দল এসেছিল, চীনের রাষ্ট্রদূত আর্থিক সহায়তার কথা বলেছেন। চীনারা তো এমন কথা বলবেন না যেটার সারবত্তা নেই।”

একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত আলোচনা এগিয়েছিল বলেই মনে করেন তিনি।

ভিন্নমতও আছে

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান এর মতে, বেশ কিছু কারণে অর্থনৈতিকভাবে এই সফরের গুরুত্ব রয়েছে।

এক বিলিয়ন ইউয়ান সহায়তা প্রাপ্তিকে খাটো করে দেখতে নারাজ তিনি। সেই সাথে, যে চার ধরনের ঋণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তার মধ্যে সুদমুক্ত ও স্বল্পসুদের বাণিজ্যিক ঋণ আছে।

যদিও এগুলো কেবল প্রস্তাব পর্যায়েই রয়েছে। কোন কোন খাতে বা কীভাবে এ ঋণ বরাদ্দ হবে সে সংক্রান্ত কাজ শুরু করতে চীনের টেকনিক্যাল কমিটির শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করার কথা।

কিন্তু দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে এই ঋণ বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতিশীলতায় কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অধ্যাপক সাহাব এনাম খান।

তাছাড়া, সাত ঘোষণার অন্যতম 'চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্তি'। এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন মি. খান।

দুই দেশের মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে।

সেই সাথে ডিজিটাল কানেক্টিভটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তি বিষয়ক একটি ঘোষণাও রয়েছে।

অধ্যাপক সাহাব এনাম খানের দৃষ্টিতে “এই ডিজিটাল পার্টনারশিপ আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক।”

তিস্তা প্রকল্পের কী হলো?

২০০৯ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে এটি শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো চীন সফর।

এ বছরের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত প্রকল্পটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

গত ১৪ই জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে সংসদকে জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বার্থে সহজ শর্তের ঋণ পেতে চীন সরকারকে অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

কিন্তু শেখ হাসিনার বেইজিং সফরে সে সংক্রান্ত কোন আলোচনা হয়নি বলে মনে হচ্ছে। দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

জুন মাসে তার ভারত সফরের পর সর্বশেষ চীন সফর ঘিরে যেসব প্রশ্ন বেশি করে আলোচনায় আসে তার অন্যতম, তিস্তা প্রকল্পে ভারতের প্রস্তাব সামনে আসার পর এ প্রকল্পে চীনের প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ কী হবে? কোন দেশের সহযোগিতা নেবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত সপ্তাহে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে এবং চীনের দিক থেকে এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হতে পারে।”

যদিও, "বিষয়টি নিয়ে খুব দ্রুত কিছু হবে না,” নিজের এমন ধারণার কথাই জানান মি. মোমেন।

চীন সফরের আগে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “তিস্তা যেহেতু ভারতের সাথে যৌথনদী এবং তাদের দিক থেকে একটা প্রস্তাব আছে সুতরাং আমাদের প্রথমে সেই দিকটা বিবেচনা করতে হবে।”

চীন যদি আলোচনায় আনে, তাহলে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।

বেইজিংয়ে সফরের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলনে মি. মাহমুদের কাছ থেকে, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে অন্যান্য অনেক বিষয়ে আলোচনার কথা জানা গেলেও বহুল আলোচিত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সরকারের যে মূল্যায়ন

বেইজিংয়ে শেখ হাসিনা ও শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পরপরই বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পায়রা বন্দরসহ দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নে চীন সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।”

এই সফরকে শতভাগ সফল দাবি করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের পঞ্চাশ বছরে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে পরের ধাপে নিয়ে যেতে চায়।

তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়েও নানা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করতেও রাজি হয়েছে চীন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার বিষয়েও এই সফরে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. মাহমুদ। বিবিসি বাংলা