বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও হত্যা হচ্ছে এবং ইসলামি সন্ত্রাসীদের হুমকি রয়েছে বলে মার্কিনগোয়েন্দা প্রধান (ডিএনআই) তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সোমবার (১৭ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ‘নির্যাতন ও হত্যা’ নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে অভিযোগ করেছেন তা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেশের জন্য মানহানিকর।
ভারত সফররত তুলসী গ্যাবার্ড সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদ্বেগের একটি মূল জায়গাজুড়ে’ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সারাবিশ্বে ‘ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদের’ ওপর নজর রাখছে এবং একে পরাজিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সোমবার দিনগত মধ্যরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও দুঃখের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (ডিএনআই) প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের করা মন্তব্য লক্ষ্য করেছি। তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও হত্যা এবং দেশে ইসলামি সন্ত্রাসীদের হুমকি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এই হুমকির শিকড় একটি ইসলামি খিলাফতের শাসন ও পরিচালনার আদর্শ ও উদ্দেশ্যের মধ্যে নিহিত।
বিবৃতি মতে, তার এই বক্তব্য বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকর, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামকে আঘাত করে। বাংলাদেশ বরাবরই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ ইসলাম পালনের ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। বাংলাদেশ সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বিবৃতি অনুসারে, তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি। এটি একটি গোটা দেশকে অন্যায়ভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক সংস্কার ও অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশকে ইসলামি খিলাফতের ধারণার সঙ্গে ভিত্তিহীনভাবে যুক্ত করা দেশটির অসংখ্য নাগরিক ও বিশ্বব্যাপী তাদের বন্ধু ও অংশীদারদের কঠোর পরিশ্রমকে খাটো করে। যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে যে কোনো ধরনের ইসলামি খিলাফত ধারণার সঙ্গে দেশকে যুক্ত করার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক নেতা ও জনপরিচিত ব্যক্তিত্বদের এ সংবেদনশীল বিষয়গুলো সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কথা বলা উচিত। তাদের এমন কোনো মন্তব্য করা উচিত নয় যা ক্ষতিকর ধারণাকে শক্তিশালী করে, ভয় উসকে দেয় বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশ্বব্যাপী চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ তথ্য ও সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে যুক্ত থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সময়।