দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে উঠেছে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক। ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয়ার পাঁচ বছরেও কাজের অগ্রগতি মাত্র দুই শতাংশ। ফলে নিয়মিত সংস্কার বন্ধ থাকায় এ সড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তবে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, আগামী বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
খুলনার সঙ্গে কুষ্টিয়া ও উত্তরবঙ্গের অন্যতম যোগাযোগপথ এই মহাসড়কটি। নির্বিঘ্ন যাতায়াতের জন্য ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর (উইকেয়ার) প্রকল্পের অধীনে ২০২০ সালে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের মধ্যে যশোরাংশে ১৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরে অগ্রগতি মাত্র দুই শতাংশ। এদিকে প্রকল্পের কারণে গত তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নিয়মিত সংস্কারকাজও।
ট্রাকচালক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। খানাখন্দ থাকলেও আগে কিছুটা সংস্কার হতো, এখন সেটাও হয় না। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগে আড়াই ঘণ্টা। গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়, ভোগান্তির শেষ নেই।’
বাসচালক ওয়াহিদুজ্জামান রয়েল বলেন, ‘এই সড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। মহাসড়কের চেয়ে ইটের রাস্তা মনে হয়। বৃষ্টি হলেই খানাখন্দ বেড়ে যায়। গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়, প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি চালালে প্রতিদিন ড্যামেজ খরচ গুনতে হয়।’
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘ছয় লেন প্রকল্প হাতে নেয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী মহাসড়কটি প্রকল্প পরিচালকের কাছে হস্তান্তর করতে হয়। তাই আর আলাদা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ মিলছে না। তবে প্রকল্পের অধীনে জরুরি কিছু সংস্কার হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ইট দিয়ে তিন স্তরের সলিং করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর (উইকেয়ার, ফেজ-১) প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, ‘২০২০ সালে প্রকল্প অনুমোদন হলেও ডিজাইন ও ঠিকাদার নিয়োগে প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল চ্যালেঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ। জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হলে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। আশা করছি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে।’
অন্যদিকে যশোর জেলা প্রশাসনের দাবি, জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণ ৫০ একরের বেশি হওয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দরকার ছিল। সম্প্রতি সেই অনুমোদন পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অবকাঠামো ও অন্যান্য ক্ষতির প্রাক্কলন নির্ধারণের কাজ চলছে। নির্ভুলভাবে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি।’
প্রসঙ্গত, ৬২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পে যশোর সদরের মুরাদগড় থেকে যশোর শহরের চাঁচড়া মোড় পর্যন্ত মহাসড়কে নির্মিত হবে দুটি ফ্লাইওভার, একটি সেতু, ১৫টি কালভার্ট, একটি ভেহিকুলার ওভারপাস এবং একটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস। সময়