
রাজধানীতে চড়েছে মাছের বাজার। শুধু ইলিশের দামই সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন সবজিও। তবে দাম কমেছে ডিম ও সোনালি মুরগির।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আশপাশের কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রুপালি ইলিশ। ফলে ভোজনরসিক বাঙালির পাতে ইলিশ ওঠাই এখন যেন দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে গিয়েও ক্রেতারা ইলিশের দিকে হাত বাড়াতেও ভয় পাচ্ছেন। এতে চিরচায়িত প্রবাদ ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এখন অনেকটাই ফিকে।
বিক্রেতারা বলছেন, সপ্তাহ ব্যবধানে ইলিশ কেজিতে বেড়েছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ২০০ টাকায়। আর ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য মাছও। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়ে প্রতিকেজি তেলাপিয়া ২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ টাকা, রুই ৫৫০ টাকা, কাতলা ৫০০ টাকা ও পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
ইলিশের দাম নিয়ে বাজারে ক্রেতাদের স্পষ্ট ক্ষোভও লক্ষ্য করা গেছে। তারা বলেছেন, দাম তো কমছেই না। উল্টো বেড়ে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে আসা আজিজুল বলেন, ‘ইলিশের দাম ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ইলিশ কেনার সামর্থ্য অনেকেরই নেই, ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যান্য মাছের দামও বেশ চড়া।’
মাছের দামের ঊর্ধ্বমুখিতা স্বীকার করে মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে সরবরাহ একেবারেই কম। ইলিশ ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী বলেন, ‘বাজারে ইলিশের সরবরাহ তেমন একটা নেই। ইলিশ কম আসছে। এতে দাম বাড়ছে।’
এদিকে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করলেও দাম কমার বদলে উল্টো বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, কিছু কিছু সবজির দাম সপ্তাহ ব্যবধানে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১২০ টাকা, শিম ১৪০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা ও মুলা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি বেগুন ১০০ টাকা,আলু ২৫ টাকা ও শসা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি পিস ছোট সাইজের ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর প্রতি কেজি ধুন্দল ৭০ টাকা, কহি ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও কাঁচা মরিচের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।
ত্রেতারা বলছেন, শীতকালীন সবজির দাম অনেক বেশি। এটি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। ক্রেতা আশিকুর বলেন, শীতের মৌসুমেও বাড়তি দামে সবজি কিনতে হলে আর কিছু বলার নাই। যেটাতেই হাত দিচ্ছি, সেটারই দাম বেশি। ৬০-৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করলেও সেটি চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে সরবরাহের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। এতে বাড়ছে দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। শীতকালীন সবজি বাজারে কম আসছে। বাজারে প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতারও।’
তবে বাজারে সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। কেজি ১০ টাকা পর্যন্ত কমে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি দেশি রসুন ১০০ টাকা ও আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আর প্রতিকেজি দেশি আদা ২২০ টাকা ও ভারতীয় আদা ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কমেছে ডিম ও সোনালি মুরগির দামও। তবে স্থিতিশীল রয়েছে ব্রয়লার ও লাল লেয়ার মুরগির দাম। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬৫-১৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা।
ডজনে ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন সাদা ডিম ১২০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।