News update
  • Dhaka rejects India's statement on incident at BD HC residence, New Delhi      |     
  • Stocks end lower; trading falls at DSE, improves at CSE     |     
  • No need to be kind to election disruptors: EC to law enforcers     |     
  • No Media Faced Arson Attacks in 53 Years: Mahfuz Anam     |     
  • Janaza of six Bangladeshi peacekeepers held at Dhaka Cantonment     |     

বিজেপি কেন পুরো ভারতে একসঙ্গে ভোট করতে চায়?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক গনতন্ত্র 2023-09-03, 8:25am

9ab6f4d0-49af-11ee-9b58-cb80889117a8-77cd7ddb6a277f211f4a1b72361f47211693707955.jpg




ভারতের লোকসভা নির্বাচন আর সবকটি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন একই সঙ্গে করানো অনেকদিন আগে থেকেই বিজেপির লক্ষ্য, তবে এবারই প্রথম সে উদ্দেশ্যে সরকারিভাবে কোনও পদক্ষেপ নিলো তারা।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ নীতি বাস্তবায়ন করা যাবে কী না, তা খতিয়ে দেখবে।

সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “এখন তো শুধু কমিটিই তৈরি হয়েছে। তারা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে, তা নিয়ে বিচার বিবেচনা, বিতর্ক হবে সংসদে।

“ভারতে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তো একসঙ্গেই লোকসভা আর বিধানসভাগুলির নির্বাচন হত। এটা নিয়ে আলোচনা তো হতেই পারে,” বলেছেন মি. যোশী।

মোদী চান একসঙ্গে ভোট করাতে

বিগত বেশ কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও লোকসভা আর বিধানসভাগুলির নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলছেন। মি. মোদী যে বছর প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সেই ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারেও বিজেপি লিখেছিল যে তারা সারা দেশে একসঙ্গে ভোট করাতে চায়।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি তৈরি করে দিয়ে সরকার এটা বোঝাতে চাইছে যে এখন বিষয়টা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শুধু যে প্রধানমন্ত্রী কয়েক বার বিষয়টা উত্থাপন করেছেন, তা নয়। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে মি. কোভিন্দও মি. মোদীর ভাবনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছিলেন।

ইতিহাস বলছে লোকসভার ক্ষেত্রে সাতবার মেয়াদের আগে সরকার পড়ে গেছে বলে ভোট করতে হয়েছে। সব রাজ্য বিধানসভাগুলির হিসাব মেলালে দেখা যাবে - একশোরও বেশি বার রাজ্য সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচন করতে হয়েছে।

কোন প্রক্রিয়ায় সারা দেশে একবারই ভোট?

বর্তমানে রাজ্য বিধানসভা এবং লোকসভার ভোট পাঁচ বছর অন্তর হয়ে থাকে। যদি কোনও রাজ্য বিধানসভা ভেঙ্গে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে পাঁচ বছরের আগেই ভোট হয়।

আবার সরকার পড়ে গেলে ভোট না করেও নতুন সরকার গঠন করা যায়, যেমনটা করা হয়েছিল গতবছর মহারাষ্ট্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন একজন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার যদি বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে যায়, সেক্ষেত্রে রাজ্যপাল এমন কাউকে সরকার গড়ার জন্য ডাকতে পারেন - যার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমএলএ-র সমর্থন রয়েছে বলে তার মনে হবে ।

এই ক্ষেত্রে রাজ্যপাল, যিনি আবার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

কিন্তু এখন যেসব রাজ্যে সরকার চলছে এবং তার পূর্ণ মেয়াদ, অর্থাৎ পাঁচ বছর পর্যন্ত সরকার চালানোর ক্ষেত্রে কোনও আশু বিপদও নেই, তাদেরও ভোট কি সারা দেশে একসঙ্গে ভোট করানোর প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হবে?

সেই সব বিধানসভা কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে? পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি কি সেই প্রস্তাব মেনে নেবে?

সিনিয়র সাংবাদিক প্রদীপ সিং বলছেন, “এ নিয়ে দুটো প্রস্তাব আগে থেকেই এসেছে। একটা হতে পারে যে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে আর পরে যেসব রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন নির্ধারিত হয়ে আছে, সেই সবগুলো একসঙ্গে মিলিয়ে লোকসভা ভোটের সঙ্গে করানো হল।

“দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হল বিজেপি আর সহযোগী দলগুলির সরকার যেসব রাজ্যে আছে, তারা নিজেরাই বিধানসভা ভেঙ্গে দিল আর বাকি রাজ্যগুলোতে সরকার বরখাস্ত করে দেওয়া হল,” বলছিলেন মি. সিং।

নির্বাচন কমিশন আগে একাধিকবার বলেছে যে সারা দেশে একসঙ্গে ভোট করানোর মতো লজিস্টিকাল বন্দোবস্ত তাদের রয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন সেখানেও থেকে যায়, এত বড় দেশে একসঙ্গে ভোট করাতে গেলে সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে এবং অন্যান্য এলাকাতেও যত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেটা কি সম্ভব হবে?

পক্ষে-বিপক্ষে যেসব যুক্তি

সারা দেশে একই সঙ্গে লোকসভা আর রাজ্য বিধানসভাগুলির ভোট করানো নিয়ে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বিজেপির মতপার্থক্য আছেই।

বিজেপির যুক্তি, একসঙ্গে সারা দেশে ভোট করালে নির্বাচনের বিপুল খরচ অনেকটা বাঁচবে। সেই অর্থ দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থে দলগুলি নির্বাচনী প্রচার করতে পারবে, তাতে কমে যাবে রাজনৈতিক দুর্নীতি।

এছাড়াও একেক রাজ্যে একেক সময়ে ভোট হওয়ার ফলে আদর্শ আচরণ বিধি বলবৎ হয়ে যায়, যার ফলে সরকারি প্রকল্প রূপায়ন বন্ধ থাকে,এই যুক্তিও দিচ্ছেন দলের নেতারা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বিজেপি নেতা বিমল শঙ্কর নন্দ বলছিলেন, “আমাদের মতো দেশে যেখানে সম্পদ খুব বেশি নেই, সেখানে সম্পদ সুষ্ঠুভাবে ব্যয় করতে হবে। দেশের একটা বিরাট খরচ হয়ে যায় এই নির্বাচনগুলো করতে গিয়ে। তারওপরে যদি উপনির্বাচন হয় বা মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়, বিধানসভা বা লোকসভা উভয়েরই ক্ষেত্রে, তাতে বিপুল একটা খরচ হয়।

“এরপরে ভোট এলেই আদর্শ আচরণ বিধি চালু হয়ে যায়, উন্নয়নের কাজ আটকিয়ে যায়। সব মিলিয়ে ভারতের মতো একটা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়। এটা ভারতবর্ষের সামর্থ্যের বাইরে” বলছিলেন মি. নন্দ।

এই যুক্তির পাল্টা প্রশ্ন করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী।

তার কথায়, “ধরে নেওয়া যাক ২৮টা রাজ্য বিধানসভা আর লোকসভার নির্বাচন একসঙ্গে করানো হল। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মে সেই সরকারগুলো চলবে যতদিন তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে, ততদিন। কিন্তু তার আগে যদি কোনও সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়, সেক্ষেত্রে কী হবে? পাঁচ বছরের বাকি সময়টায় কি সেখানে কোনও নির্বাচিত সরকার থাকবে না?”

তিনি বলছেন, “এক রাষ্ট্র এক নির্বাচন নীতি ভারতের সংসদীয় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সম্ভব না। এটা অবাস্তব।“

কিন্তু বিজেপি নেতা অধ্যাপক নন্দ বলছিলেন, “এরকম পরিস্থিতি হলে এমন নিয়ম করতে হবে, জার্মানির মতো, যেখানে বিকল্প সরকার না গড়তে পারলে চলতি সরকার ফেলে দেওয়া যায় না।“

সংবিধান, নির্বাচন আইন সংশোধন করতে হবে

নির্বাচন কমিশন এবং আইন কমিশনও একই সঙ্গে সারা দেশে ভোট করানোর পক্ষে থেকেছে, তবে এর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে, একাধিক আইন, বিশেষ করে জন-প্রতিনিধিত্ব আইন, যার দ্বারা ভারতে ভোট নিয়ন্ত্রিত হয়, সেটারও বদল আনতে হবে।

এর ওপরে দেশের অর্ধেক রাজ্যের আইনসভায়, অর্থাৎ ১৪টি রাজ্য বিধানসভাতেও একই সঙ্গে ভোট করানোর প্রস্তাব পাশ করিয়ে আনতে হবে।

তবে ১৪টি রাজ্য বিধানসভা থেকে এই প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়ে আসতে খুব একটা সমস্যা হবে না বিজেপির, কারণ তাদের নিজেদের অথবা সহযোগী দলগুলিরই সরকার আছে ১২টি রাজ্যে।

এর বাইরে উড়িষ্যা এবং অন্ধ্র প্রদেশও নানা সময়ে বিজেপির দিকেই সমর্থন দিয়ে এসেছে এবং ওই দুটি রাজ্যের ভোট সাধারণত লোকসভা ভোটের সঙ্গেই হয়ে থাকে। এছাড়া আরও দুই-তিনটি রাজ্য এই প্রশ্নে বিজেপিকে সমর্থন দিয়ে দিতে পারে।

এরপরে সংবিধান সংশোধন বিল যখন সংসদে যাবে, নিম্ন-কক্ষ লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বিজেপি সহজেই বিলটি পাশ করাতে পারবে। তবে রাজ্যসভায় যদি কংগ্রেস বিলের সমর্থনে না দাঁড়ায়, তাহলে বিল পাশ করানো কঠিন হবে। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।