কলকাতার আর জি কর সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। প্রথমে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই প্রতিবাদে যোগ দেন সাধারণ নাগরিকরা। তবে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগ দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। মমতার পদত্যাগের দাবি করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
গত বুধবার (২৮ আগস্ট) তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলকাতায় এক জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, আর জি কর মামলায় কিছু লোক তাদের দলকে ব্যবহার করে রাজ্যকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে যদি বিজেপি আগুন লাগায় তাহলে ‘থেমে থাকবে না’ বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোও। তার কথায় ‘কেউ-কেউ মনে করছেন, এটা বাংলাদেশ। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। ওরা আমাদের মতো কথা বলে। ওদের সংস্কৃতি, আমাদের সংস্কৃতি এক। কিন্তু মনে রাখবেন, বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র। ভাবতবর্ষ একটা আলাদা রাষ্ট্র।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মোদিবাবু, আপনার পার্টিকে দিয়ে আগুন লাগাচ্ছেন? মনে রাখবেন, বাংলায় যদি আগুন লাগান, আসামও থেমে থাকবে না। উত্তর-পূর্বও থেমে থাকবে না। উত্তরপ্রদেশও থেমে থাকবে না। বিহারও থেমে থাকবে না। ঝাড়খণ্ডও থেমে থাকবে না। ওড়িশাও থেমে থাকবে না। আর দিল্লিও থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ারটা আমরা টলমল করে দেব।’
এই হুঁশিয়ারির পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এক্স হ্যান্ডেলে বলেন, ‘উত্তর-পূর্বকে হুমকি দেয়ার সাহস কী করে হল দিদি আপনার? এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমি। এজন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। অবিলম্বে বিভেদমূলক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’
মমতার মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেন, ‘তৃণমূল সরকারের নারীবিরোধী আচরণ গণতন্ত্রের লজ্জা।’ এরপর তার বিরুদ্ধে দিল্লিতে এফআইআর দায়ের করা হয়।
মমতার বিরুদ্ধে আইপিসির ১৫২, ১৯২, ১৯৬ এবং ৩৫৩ ধারার অধীনে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন আইনজীবী বিনীত জিন্দাল। অভিযোগের কপি রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এফআইআরের আবেদনে আইনজীবী জিন্দাল বলেন, তৃণমূল ছাত্র শাখার সদস্যদের জনসভায় মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘মনে রাখবেন, আপনি যদি বাংলাকে পোড়ান, আসাম, উত্তর-পূর্ব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং দিল্লিও জ্বলবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার কাঁপিয়ে দেব। এটা স্পষ্ট যে, তার এই বক্তব্য আসলেই উসকানিমূলক ও দেশবিরোধী।’