Atiqur Rahman Salu
ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর - বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের পানি ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতা, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির (আইএফসি) চেয়ারম্যান, আতিকুর রহমান সালুর (৭৮) আকস্মিক মৃত্যুতে আইএফসি গভীর শোক প্রকাশ করছে। ক্যান্সার চিকিৎসাধীন আতিকুর রহমান সালু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার আইএফসি নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, উনসত্তরের ১১-দফা ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা, পূর্ব পাকিস্তান বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী পল্টন ময়দানে স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রস্তাবের পাঠক, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর স্নেহধন্য ছাত্রনেতা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা আতিকুর রহমান সালু বাংলাদেশের নদী-পানি অধিকার আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দিয়ে গেছেন।
হিমালয়ের নদীগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে জনমত গঠন ও এবিষয়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মধ্যে যোগসূত্র তৈরীর জন্য তার নেতৃত্বাধীন আইএফসি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের পানি বিশেষজ্ঞ ও কর্মিদের নিয়ে ঢাকায় তিনাটি আন্তর্জাতিক ও অসংখ্য জাতীয় সেমিনার ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। তার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একই মঞ্চে এসে নদী পানির অধিকার রক্ষার তাগিদে সামিল হন। নদী পানির অধিকার রক্ষা জাতীয় দাবিতে পরিনত হয়।
তার নেতৃত্বে আইএফসি প্রতিনিধিদল দিল্লীতে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ সমাবেশে এবং কোলকাতার সাবেক মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও পরিবেশ রক্ষায় শতকরা ৯০ ভাগ মিষ্টি পানির উৎস যৌথ নদীগুলো বাঁচিয়ে রাখার অপরিহার্যতার বিষয় তুলে ধরেন। বাংলাদেশের নদী পানির অধিকার রক্ষার স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার জন্য তার নেতৃত্বে আইএফসি প্রতিনিধিদল মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য, চীনের রাজধানী বেজিংয়ে চীনা নেতাদের কাছে এবং জাতিসংঘের ৬ষ্ঠ কমিটিতে বক্তব্য তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, হিমালয় থেকে বয়ে আসা গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা, নদীসৃষ্ট বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে গিয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক নদী প্রবাহ থেকে অব্যাহতভাবে বঞ্চিত হতে থাকলে বাংলাদেশের পরিবেশ, মানুষের জীবন ও জীবিকার অপূরনীয় ক্ষতি ঠেকানো যাবেনা। গঙ্গা-নির্ভর খুলনা অঞ্চলের মত, তিস্তা-ব্রহ্মপূত্র নির্ভর উত্তরাঞ্চল এবং মেঘনা-নির্ভর পুর্বাঞ্চলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি, মৎস, কৃষি-শিল্প, শিল্প, বানিজ্য, পানি-নির্ভর জীববৈচিত্র ও জীবচক্র। আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যাবে পরিবেশ উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা।
মওলানা ভাসানীর আদর্শে দীক্ষিত আতিকুর রহমান সালুর নেতৃত্বে ২০০৫ সালের ৪ মে ঢাকা থেকে লংমার্চ শেষে চিলমারিতে অনুষ্ঠিত হয় কমপক্ষে পাঁচ লাখ লোকের নদী-পরিবেশ সম্মেলন। তাতে স্বক্রীয়ভাবে সহায়তা করেন তিস্তা অববাহিকার আইএফসি নেতা ও কর্মীরা। সাধারণ মানুষের এত বিশাল পরিবেশ সম্মেলন বিশ্বের অন্য কোথাও কখনো হয়নি।
আইএফসি নেতৃবৃন্দ আতিকুর রহমান সালুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সাথে সাথে তার অসমাপ্ত কাজ অব্যাহত রাখার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং তার সহধর্মিনি ফরিদা ইউসুফজাই ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের অন্য সকল সদস্যকে সমবেদনা জানান। তারা দেশবাসিকে আতিকুর রহমান সালুর আত্মার শান্তির জন্য মোনাজাত করার আহবান জানান।
যৌথ বিবৃতিতে সাক্ষর করেন আইএফসি নিউইয়র্ক মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ হোসেন খান, আইএফসি বাংলাদেশ সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী ও আইএফসি সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদার।