News update
  • $10mn Approved for Climate Resilience in CHT: ICIMOD     |     
  • At least 143 dead in DR Congo river boat fire tragedy     |     
  • Dhaka has worst air pollution in the world Saturday morning     |     
  • Container ships to ply between Mongla and Chattogram ports     |     
  • France to Break Away from UK & US in Recognising Palestine as Nation State     |     

আনলাকি থার্টিন! কেন এখনো ১৩ সংখ্যা নিয়ে এত সংশয়

বিবিসি বিবিধ 2024-11-18, 5:37pm

tyertert-bbf7e99a090f61e6ae9e573906f463f41731929821.jpg




মাসের ১৩ তম দিনে, একটি চমৎকার উষ্ণ ও রোদ্রজ্জ্বল সাপ্তাহিক ছুটির পরে আবহাওয়া হঠাৎ ভেজা, ঠাণ্ডা এবং ধূসর হয়ে ওঠে। এটি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক।

এটাকে কি কাকতালীয় বলবেন? অবশ্যই - কারণ এটি ব্রিটিশ আবহাওয়া। তবে এক জরিপে উঠে আসে ১৪% ব্রিটিশ জনগণ বিশ্বাস করে যে ১৩ সংখ্যাটি সহজাতভাবেই দুর্ভাগ্যজনক, আরও ৯% মানুষ আবার এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন।

১৩ সংখ্যাটি অপয়া, এই বদ্ধমূল বিশ্বাস আমাদের সংস্কৃতিতে এতটাই মিশে গেছে যে, নির্মাণ কাজের মতো একটি বাস্তবমুখী পেশাও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়, কার্ডিফে একটি নির্মাণস্থলে এর প্রমাণ দেখা যায়।

কিছু যাত্রী যাওয়া আসার পথে লক্ষ্য করেন যে, পুরানো ব্রেইনস ব্রুয়ারি সাইটে সেন্ট্রাল কিই উন্নয়নের অংশ হিসেবে নির্মিতব্য একটি অভ্যন্তরীণ ভবনের প্রতিটি তলায় সেই অসমাপ্ত ভবনের নাম্বারগুলো লেখা থাকলেও - সেখানে ১৩তম তলায় ১৩ সংখ্যাটি বেমালুম অনুপস্থিত।

আপনি যতোটা ভাবছেন এই একুশ শতকে এসেও এমন ভাবনা তার চেয়ে বেশি চোখে পড়তে পারে আপনার। কিছু ভবন, যার মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক এবং হোটেল অন্তর্ভুক্ত, সেসব ভবনে সম্পূর্ণভাবে ১৩ নম্বরটি বাদ দেয়া হয়।

এক্ষেত্রে ১৩তম তলার নামকরণ হতে পারে ১২-এ অথবা অ্যাপার্টমেন্ট ও অফিসের পরিবর্তে সেই ফ্লোরে ভবনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন করা হতে পারে।

অন্যান্য ভবন, যেমন কার্ডিফের একটি উঁচু হোটেল ভবন, সরাসরি ১২ থেকে ১৪-তে চলে যায়।

যেসব বাড়ির নাম্বার ১৩, সেসব সাধারণত একটু সস্তা হয়। অতীতে কিছু কাউন্সিল নতুন আবাসিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই নম্বরটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে কারণ বাসিন্দারা সেখানে বসবাস করতে পছন্দ করেন না।

কার্ডিফের গ্রেনজটাউনের সারা থমাস, তার অফিস নেটওয়ার্ক রেল থেকে বের হওয়ার সময় ব্রেইনস সাইটে এমন একটি টাওয়ার দেখতে পান।

"এই সংখ্যাটি না দেখতে পেয়ে আমার কৌতূহল বেড়ে যায়," বলেন তিনি।

"আমি ভেবেছিলাম এটি কুসংস্কারের কারণে, কিন্তু আমি এটা নিশ্চিত হতে গুগল করি এবং তখনই বুঝতে পারি কতটা ব্যাপকভাবে চালু এই বিষয়টি। আমার বেশ কিছু বন্ধুরা বলেছে তারা এমন সব ভবন বা লিফটে ছিল যেখানে ১৩ নম্বরটি অনুপস্থিত ছিল - স্পষ্টতই আমাকে আরও কিছু উঁচু স্থাপনা ঘুরে দেখতে হবে।"

সারা নিজেকে কুসংস্কারমুক্ত দাবি করেন, কিন্তু কিছু অভ্যাস সাধারণ জ্ঞান থেকে আসে বলে মনে করেন তিনি, বলেন: "চোটের ঝুঁকি এড়াতে সম্ভব হলে আমি মইয়ের নিচ দিয়ে হাঁটতে চাই না।”

"আমি কুসংস্কারের পিছনের ইতিহাসকে আকর্ষণীয় মনে করি, কারণ তারা আমাদেরকে দেখায় কিভাবে মানুষ কিছু নির্দিষ্ট ঘটনাকে তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করে ফেলে।"

যুক্তরাজ্যের কিছু হাই প্রোফাইল উঁচু ভবন এই কুসংস্কার বজায় রেখেছে।

যখন লন্ডনের ক্যানারি ওয়ার্ফ পুনরায় র্নির্মাণ করা হয় এবং ১৯৯০ সালে বিশেষ এক ক্যানাডা স্কয়ার টাওয়ার তৈরি করা হয় - যা তখন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল - সেটি ১৩তম তলা ছাড়াই খোলা হয় এবং আজও একই রকম আছে।

আপনি যদি লন্ডন আই-এর ৩২টি পডের মধ্যে একটিতে ভ্রমণ করতে চান, আপনি জেনে অবাক হতে পারেন যে আপনি সেখানে ৩৩ নম্বর পড বুক করতে পারবেন, যা মূলত অনুপস্থিত থাকা ১৩ নম্বর পডের পরিবর্তে রাখা হয়েছে।

প্রচলিত ধারণায় ১৩-এর কল্পিত দুর্ভাগ্যের জন্য বেশ কয়েকটি উৎসকে দায়ী করা হয়।

যার একটি খ্রিস্টধর্মের সাথে যুক্ত - যীশু খ্রিস্টের লাস্ট সাপার বা শেষ নৈশভোজে ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন, যা জুডাস ইস্কারিওটের বিশ্বাসঘাতকতা করার ঠিক আগ দিয়ে ঘটে, জুডাস ১৩তম ব্যক্তি হিসেবে আসন গ্রহণ করেন, এবং যীশু খ্রিস্টকে ধর্মদ্রোহের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।

একইভাবে, নর্স পুরাণে, লোকি - যিনি অনিষ্ট এবং প্রতারণার দেবতা, তিনি দেবতাদের একটি নৈশভোজে ১৩তম অতিথি হিসাবে উপস্থিত হন এবং সেখানে ওডিনের একজন পুত্রের দ্বারা অন্য আরেকজন পুত্রকে হত্যা করতে প্ররোচিত করেন।

এই যে ১৩-এর ভীতি - এটা আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইস্কাইডেকাফোবিয়া নামে পরিচিত – অর্থাৎ ১৩ সংখ্যাটি যখন শুক্রবারের সাথে যুক্ত হয় তখন এ নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়ে যায়, এদিনেই যীশু খ্রিস্ট মারা যান বলে দিনটা দুর্ভাগ্যের সাথে যুক্ত বলে অনেকে মনে করেন।

কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের মানুষেরা এখনও কেন এমন একটি বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে আছে?

কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পুরাণ এবং লোককথার বিশেষজ্ঞ ডঃ জুলিয়েট উডের মতে এর কারণ সম্ভবত আশ্চর্যজনকভাবে এটি আসলে একটি বেশ আধুনিক বিশ্বাস এবং হয়তো এর পেছনে শত শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য যুক্ত নয়।

"এটি লোককথা নয় সেই অর্থে যে এটি পুরনো ঐতিহ্য নয়। এর সাথে শেষ নৈশভোজে ১৩ জন লোক থাকার কোনো সম্পর্ক নেই," বলেন তিনি ।

বরং, তিনি বিশ্বাস করেন এটি মূলত মিডিয়ার সৃষ্টি, যা ২০ শতকের গোড়ার দিকে জনপ্রিয় হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত নিজে থেকেই একটি আধুনিক লোককথায় রূপ নিয়েছে এবং আবার মিডিয়ার মাধ্যমেই এই ধারণা দৃঢ় হয়, যার মধ্যে আছে “ফ্রাইডে দ্য থার্টিনথ”-এর মতো চলচ্চিত্রের ভূমিকাও।

প্রতিনিধিত্ব করেন

এই সময়ের আরও আগে খুঁজে দেখলে অপয়া ১৩ সম্পর্কে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়না।

কিন্তু মানুষ এমন সব গল্প খুঁজে বের করে যা একটি মিথ তৈরির সাথে মানিয়ে যায় এবং সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণগুলির সাথে জড়িয়ে পড়ে।

"এটি অনেকটা সত্যি মনে হতে থাকে, বিশেষ করে দ্য লাস্ট সাপার বা শেষ নৈশভোজের সাথে সংযোগের কারণে, আর সেখানেই এটি আটকে গেছে," ডঃ উড ব্যাখ্যা করেন।

আর এর লোকির যুক্ত হওয়ার ধারণাটি সম্ভবত আরও সাম্প্রতিক।

তিনি যোগ করেন: "সংস্কৃতির জন্য নর্স পুরাণকে একটি আদর্শ হিসেবে ধরা আসলে বেশ সাম্প্রতিক একটা বিষয়।”

"এটি ১৯ শতকে ব্রিটেনে আমাদের জার্মানিক ঐতিহ্য খুঁজে বের করার যে আগ্রহ দেখা যায় সেই সময়ের এবং তখন বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ পণ্ডিত প্রথমবারের মতো নর্ডিক মিথগুলির অনুবাদ করেন।”

"এখন অবশ্যই মার্ভেল সিনেমাগুলির পর থেকে, লোকি একজন নায়ক। তাই আপনি একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর মনোযোগ দিতে পারেন এবং এভাবেই এটার স্থানান্তর ঘটেছে।"

দুর্ভাগ্যজনক দিন

দুর্ভাগ্যজনক বা অপয়া দিনের ধারণা আসলে অনেক প্রাচীন - রোমান 'ইডস অফ মার্চ' (১৫ই মার্চ), যা রোমান বিশ্বাসে আরও দৃঢ় হয় ওই দিন জুলিয়াস সিজারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, যা পরবর্তীতে শেক্সপিয়রের ট্র্যাজেডি গল্প বলার মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়।

ডঃ উড বলেন: "আমরা কুসংস্কার ভালোবাসি। আমরা এই অত্যন্ত যান্ত্রিক ও অত্যন্ত অনিশ্চিত বিশ্বে এটা বলতে ভালবাসি যে 'ওহ আচ্ছা এটি দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে'।

"এটি এমনিতে আমাদের সাধারণ জ্ঞানের বিরুদ্ধ কিছু বলে মনে হয়, কিন্তু বাইরের কোন কিছু যেটা অত বেশি ক্ষতিকর না আবার ভাগ্যের সঙ্গে যুক্ত এভাবে বর্ণনা করতে পারাটা আমাদেরকে কিছুটা বেশি স্বস্তি দেয় এবং কম অনিরাপদ বোধ করায়।"

ডেভনে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করা এস্টেট এজেন্ট প্রপার্টিমার্কের কেটি গ্রিফিন নিশ্চিত করেন যে ভবন নির্মাণে ১৩ সংখ্যাটা এখনও একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

"আমি বলব না যে এটি [বাড়ির] দামে প্রভাব ফেলবে, তবে কখনও কখনও এটি এড়াতে, ডেভেলপাররা সম্পূর্ণভাবে ১৩ নম্বরটি বাদ দিবে। অতীতে এটি হয়েছে যে আপনি দেখবেন ১১, ১২, ১৪, এভাবে ফ্লোরগুলো করা হয়েছে" তিনি বলেন।

"আমি বিশেষভাবে কাউকে দেখি না যে এসে বলছেন 'আমার এই ব্যাপারটি নিয়ে কুসংস্কার আছে এবং আমি ১৩ নম্বরে থাকতে চাই না', বরং তারা বলতে পারে 'আমি গির্জা বা কবরস্থানের কাছাকাছি থাকতে চাই না''।

"তাই যখন আপনি এটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন তখন হঠাৎ মনে হবে যে আরে এখানে এইসব বিষয়গুলি রয়েছে। এটি নির্ভর করে আপনি কতটা সংবেদনশীল প্রকৃতির, কারণ আপনি এটি এড়িয়ে উল্টে বলতে পারেন যে যদি আপনি ১৩ নম্বরটি কিনেন, তাহলে হয়তো আপনি একটি ভাল দামে সেটা পেতে পারেন।"

ওডেসা বারথর্প 

টাওয়ার ভবনের কাছে চলাচল করা যাত্রীদের একটি সংক্ষিপ্ত জরিপে দেখা গেছে বেশিরভাগ মানুষ কুসংস্কারকে হালকাভাবে গ্রহণ করে।

কার্ডিফের ওডেসা বারথর্প বিশ্বাস করেন কুসংস্কার হল একটি সংস্কৃতি বা লালনের ফল, তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি ১৩তম তলায় সুখে বাস করতে পারবেন, "আমার মনে হয় এটি সম্ভবত সেই সময় থেকে আসা যখন আমরা জানতাম না পৃথিবী কিভাবে কাজ করে এবং আমাদের কোন না কোন ব্যাখ্যা তৈরি করতে হতো।”

"এটি আকর্ষণীয়। কিন্তু এই ভাবনা নিয়ে বেঁচে থাকা না।"

ভেল অব গ্লামোরগানে রুসের কারমেন আবাদ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বেড়ে উঠেছেন, যেখানে "অনেক কুসংস্কার" রয়েছে কিন্তু তিনি সেগুলিতে বিশ্বাস করেন না।

" ব্যক্তিগতভাবে আমি ১৩তম তলায় বাস করা নিয়ে চিন্তা করব না। যদি এটি একটি সস্তা অ্যাপার্টমেন্ট হয় তবে আমি সেটি বেছে নেব," তিনি বলেন।

কার্ডিফ টাওয়ারের ভবিষ্যৎ বাসিন্দাদের জন্য – এখানকার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে ১৩তম তলায় নম্বর এবং অ্যাপার্টমেন্ট উভয়ই থাকবে যা সম্পন্ন হলে ভাড়া দেওয়া হবে।

এখন সেটা কি সস্তায় মিলবে? তাহলে সেটি হবে সৌভাগ্য বৈকি!