News update
  • Dams in Chenab Basin and Climate Change: Need to Exercise Caution     |     
  • Dr. Yunus for body to ensure fair price of animals, rawhides     |     
  • Bus workers go on indefinite strike in Bhola     |     
  • CA Urges Formation of Body to Ensure Fair Rawhide Prices     |     

প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করলো দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট

বিবিসি বাংলা মিডিয়া 2024-12-14, 6:52pm

ertwtwerw-8f62fb4e0ee72a56888943cb654c51061734180720.jpg




দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে ইমপিচ বা অভিশংসন করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। এরপর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দেশটির সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

পার্লামেন্টের ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০৪ জন তাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ইউনের নিজের দলের অন্তত ১২ জন এমপি তাকে অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

অভিশংসনের ভোটের আগেই হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন। ভোটের ফলাফল জানার পর তাদের উল্লাস মিছিল করতে দেখা গেছে।

এ মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করে দেশে সামরিক শাসন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন। কিন্তু পার্লামেন্ট সেই আদেশের বিরুদ্ধে ভোট দিলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি মার্শাল ল' তুলে নিতে বাধ্য হন।

কিন্তু এরপর থেকেই প্রেসিডেন্ট ইউনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠতে থাকে।

গত সপ্তাহেও তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট অভিশংসনের একদফা ভোটাভুটি হয়েছিল, যদিও সেই ভোটে তিনি টিকে যান।

তবে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসিত হওয়ার কারণে নোটিশ পাওয়ার পর থেকে সাময়িকভাবে তার সব ক্ষমতা স্থগিত থাকবে।

অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সো।

প্রেসিডেন্ট ইউন এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি সাময়িকভাবে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখছেন।

''সাময়িকভাবে আমার যাত্রা বন্ধ রাখছি। তবে গত আড়াই বছর ধরে যে পথে আমি হেঁটে আসছি, সেই যাত্রা থামবে না,'' তিনি বলেছেন ওই বিবৃতিতে।

মি. ইউনের দল পিপলস পাওয়ার পার্টির প্রধান হান ডং-হোন বলেছেন, তিনি ভোটের ফলাফল মেনে নিয়েছেন এবং এটাকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছেন।

পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার আগে তিনি প্রেসিডেন্টকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন যেন তিনি ভোটের আগেই পদত্যাগ করেন।

তিনি বলেছেন, তার দল 'ভুল সংশোধনের পক্ষে এবং সংবিধান ও গণতন্ত্রের সুরক্ষায়' কাজ করে যাবে।

এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইউন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করা হবে কিনা, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সেদেশের সাংবিধানিক আদালত।

পার্লামেন্টে অভিশংসনের ছয় মাসের মধ্যে এই বিষয়ে ওই আদালতের রায় জানাতে হবে যে প্রেসিডেন্ট ইউন প্রেসিডেন্ট হিসাবে থাকবেন নাকি বরখাস্ত হবেন।

সাংবিধানিক আদালত যদি অভিশংসনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে, তাহলে সেই রায় দেয়ার পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।

দেশটির সংবাদ মাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট ইউনের বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী সোমবার সাংবিধানিক আদালতের বসার কথা রয়েছে।

এর আগে গত তেসরা ডিসেম্বর সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানকার পার্লামেন্ট এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়ায় সামরিক আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।

তার এ ঘোষণার পর সামরিক আইন জারির প্রতিবাদ করতে যারা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন তারা উৎসবে মেতে উঠেছিলেন।

এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত এই দেশটিতে গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম মার্শাল ল বা সামরিক আইন জারি করা হলে তাতে হতবাক হন দেশটির মানুষ।

পরে দেশটির শাসক দলের প্রধান সতর্ক করে বলেছিলেন যে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল যদি ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে দক্ষিণ কোরীয়রা "বড় ধরনের বিপদের" মুখে পড়তে পারে।

তাই, তিনি অবিলম্বে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব স্থগিত করার আহ্বান জানান।

পিপলস পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)-এর নেতা হান দুং-হুন দলের এক জরুরি বৈঠকে বলেন, তার দল "বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ" পেয়েছে যে সামরিক আইন জারি করার সময় প্রেসিডেন্ট ইউন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের "রাষ্ট্রবিরোধিতার" অভিযোগে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে প্রেসিডেন্ট ক্ষমা প্রার্থনা করায় ধারণা করা হচ্ছিলো যে তিনি হয়তো অভিশংসন এড়াতে পারবেন। তবে তিনি সংসদকে "দানব" এবং বিরোধী দলকে "বিপজ্জনক" বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন যে সামরিক আইন জারি করে তিনি জনগণকে এবং গণতন্ত্র রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন।

কট্টরপন্থী রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইউন ২০০২ সালের মে মাসে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয় বিরোধীরা। ফলে তার সরকার নিজেদের প্রত্যাশা মতো কোন বিল পাশ করাতে পারছিলো না সংসদে।

তার জনপ্রিয়তাও কমে আসছিলো। চলতি বছর কিছু দুর্নীতির ঘটনাতেও তার নাম জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটি হলো ফার্স্ট লেডিকে নিয়ে আরেকটি হলো শেয়ার বাজার ঘিরে।

এমনকি মাসখানেক আগেই তিনি সরকারি টিভিতে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিতেও বাধ্য হয়ে বলেছিলেন যে ফার্স্ট লেডির কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে।

তবে এ নিয়ে বিরোধীদের বড় ধরনের তদন্তের দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

একই সাথে ফার্স্ট লেডির বিষয়ে তদন্তে ব্যর্থতার জন্য বিরোধীরা মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারি অডিট সংস্থার প্রধানসহ শীর্ষ প্রসিকিউটরদের অভিশংসনের উদ্যোগ নেয়।

দক্ষিণ কোরিয়াকে এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, তবে দেশটির পরিস্থিতি সবসময় এমন ছিল না।

এটি এমন এক দেশ যা প্রথম ৪০ বছরে ১৬টি সামরিক আইন দেখেছে। বেশিরভাগ সময় দেশটির শাসনে ছিল স্বৈরাচারী নেতা।

এই কারণেই দক্ষিণ কোরিয়ানরা তাদের গণতন্ত্রকে অনেক কষ্টে অর্জিত অধিকার হিসেবে দেখে।

এই কারণেই রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওলের চলতি সপ্তাহে সামরিক আইনের ঘোষণা - ৪৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম, তাও আবার গণতান্ত্রিক শাসনকালে এমন একটি ঘোষণা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল এবং মানুষের মনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিলো।