News update
  • BB to appoint administrators to merge troubled Islami banks     |     
  • Bangladesh Bank allows loan rescheduling for up to 10 years     |     
  • Guterres Urges Leaders to Act as UNGA Week Begins     |     
  • BNP to go door to door for hearts and votes     |     
  • Chittagong port tariffs increased up to 50 per cent     |     

ঢাবির কিছু শিক্ষক নিজেদের ‘ফ্যাসিবাদের দালাল’ প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন : নাহিদ ইসলাম

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক রাজনীতি 2025-02-11, 9:58am

nahid-53c8f03f8cd8947ab96c056a8dd69fab1739246314.jpg




অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নানামাত্রিক ভূমিকার কথা আমরা জানি। বিগত ১৫ বছর শিক্ষকদের একটি অংশ নিজেদের ফ্যাসিবাদের দালাল হিসেবে প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন। আবার কিছু শিক্ষক মেরুদণ্ড নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে আগাব ঠিকই কিন্তু আমরা পেছনের ঘটনা ভুলে যাব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ১৫ বছরে যে নির্যাতন হয়েছে, সে নির্যাতনের ইতিহাস সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত। আমরা যখন প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম তখন দেখেছি, যেকোনো আন্দোলন হলে সেখানে দমন করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসবের বিচার নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখেনি।’

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে জুলাই আন্দোলনে ঢাবির আহত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘দ্যা হিরোজ অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ শীর্ষক এই সম্মাননা অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আইনের ভিত্তিতে বিচার নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। আইনের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এই মতাদর্শ, এই নামে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। এটিই আমাদের শহীদদের প্রতি অঙ্গীকার।’

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বৈরশাসকের সময়ে বিগত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ও ক্যাম্পাসে নির্যাতন, নিপীড়ন ও ভয়ের সংস্কৃতি চালুর মধ্য দিয়ে আমাদের সব কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ স্বৈরশাসকরা ভালো করেই জানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে গেলে সমগ্র জাতি দাঁড়িয়ে যাবে এবং পরিবর্তন আসন্ন হবে।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে বিগত সময়ে শিক্ষার্থীদের শত শত নিপীড়নের ঘটনার অভিযোগপত্র পাওয়া যাবে। কোনো অভিযোগপত্রের বিচার বিগত সময়ে করা হয়নি।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি জায়গা এক একটা ইতিহাস বহন করে। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়। ফলে সব স্বৈরশাসকরাই সব সময় চেষ্টা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দমন করে রাখতে।’

উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা যে পরিবর্তনের স্বাদ এখন পাচ্ছি, তা যদি অব্যাহত থাকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি আত্মমর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে পারে, মেধার স্বাক্ষর যদি অব্যাহত রাখতে পারে, যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অ্যাকাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত থাকে, তাহলে এই জাতির পরিবর্তন হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে যে পথ দেখিয়েছে সেই পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাব।’ 

নাহিদ ইসলাম বলেন, “২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমাকে আক্রমণ করা হয়েছিল। এনআরসিসি নিয়ে আমরা একটি প্রোগ্রাম করেছিলাম, সেই প্রোগ্রামে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন আমাকে আক্রমণ করেছিল। সেই হামলার বিচার চাইতে আমরা কয়েকজন উপাচার্যের কাছে গেলে গেট থেকে বলা হয়, উপাচার্য স্যার নামাজ শেষ করে আমাদের সঙ্গে দেখা করবে। আমাদেরকে সেখানে অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম দুইদিক থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী লাঠি নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। অর্থাৎ ভিসি স্যার আমাদের দাঁড়াতে বলে নিজে ফোন করে সন্ত্রাসীদের এনেছেন। ভিসির বাসার সামনেই আমাদের আক্রমণ করা হয়।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসনকে আহ্বান করব, যারা এই নির্যাতনগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে গিয়েছে আপনারা তার সঠিক তদন্ত ও বিচার করুন। যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার সাহস না পায়।’

উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারা দেশের সব পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়াই করেছে। ১৭ জুলাই আমরা ভেবেছিলাম আমরা হেরে গেছি, হয়ত আমাদের সামনে আর পথ নেই, আমরা নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলাম, তখন আমরা শেষ আশা হিসেবে ১৮ তারিখের শাট ডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। সে সময় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে এসে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।’

১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার ঘটনা নিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘১৫ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেদিন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের বোনদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। সেদিনের ঘটনা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আর্তনাদ দেখেছি ঢাকা মেডিকেলে। সেদিন বাংলাদেশের জনগণ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে। জনগণের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়বদ্ধতা, এটি আমরা সবসময় মনে রাখব।’

তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের এখন প্রয়োজন এই স্বাধীনতা ও গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে রক্ষা করা। আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা আস্ফালন দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা বলতে চাই, জুলাইকে ভুলে যাবেন না। জুলাইয়ের চেতনা শেষ হয়ে যায়নি। যদি বিন্দু পরিমাণ আস্ফালনের চেষ্টা করা হয়, আমরা দ্বিগুণ শক্তিতে প্রতিহত করব আপনাদেরকে। জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ঢাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, ঢাবি ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, রিফাত রশিদ ও ঢাবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। বাসস।